করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারের ঊর্ধ্বগতি কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার বা প্রশাসনের উদ্যোগের বেশ ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে পরীক্ষা ও টিকা দুই ক্ষেত্রেই। পরীক্ষায় গ্রামের মানুষের যেমন আগ্রহ কম, তেমন অবকাঠামোগত সুবিধাও অপ্রতুল। টিকাদান কর্মসূচিও এখন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ মূলত শিক্ষিত, শহুরে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে। সত্যিকার অর্থে গণটিকাদান কার্যক্রম এখনো শুরু হতে পারেনি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। শয্যা সংকটে রোগী ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে হাসপাতাল। সরকারি হাসপাতালে ফাঁকা নেই আইসিইউ। সংকটাপন্ন রোগীর চাপ সামলাতে দিশাহারা স্বাস্থ্যকর্মীরা। সীমান্তবর্তী পশ্চিমের জেলাগুলোয় রোগীর চাপ কমলেও পূর্ব ও মধ্যভাগের জেলাগুলোয় করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। বৃহস্পতিবার দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ২৭১ জন, মারা গেছেন ২৩৯ জন। ঢাকা মেডিকেল কলেজও রোগী ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে অক্সিজেন সংযোগসহ বেড রয়েছে ৭৫০টি। যে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছেন তাদের অক্সিজেন সরবরাহ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ঈদের ছুটি শেষ হতেই প্রতিদিনই রেকর্ড ছাড়াচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এরই মধ্যে বেডের অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করেও চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে কানন প্রভা পাল নামে ষাটোর্ধ্ব কভিড রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। একই সময়ে তাঁর ছেলে করোনা আক্রান্ত শিমুল পালও ছিলেন হাসপাতালের আইসোলেশন কেন্দ্রে। একদিকে আইসিইউতে মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন, অন্যদিকে ছেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তার আইসিইউ সাপোর্ট জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু হাসপাতালে আইসিইউ খালি না থাকায় বিপাকে পড়েন চিকিৎসকরা। এ সময় স্বজনদের লিখিত আবেদনে মায়ের পরিবর্তে ছেলেকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তারপর মাকে আইসিইউ থেকে আইসোলেশনে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি প্রাণ হারান। করোনা মোকাবিলায় সর্বাত্মক ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।