রবিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

যেসব গুণে মার্কেটিংয়ের সফলতা নির্ভর করে

সৈয়দ আলমগীর

মার্কেটিং সবাই বুঝি বলে মনে করি। কিন্তু হাতে গোনা কজন ভালো মার্কেটিয়ার হতে পারেন বা সফল হন। যেসব গুণ মার্কেটিয়ারকে সফলতা এনে দেয় আসুন সেগুলোর কিছু জেনে নিই।

বাজারে কী কী পণ্য বা সেবা বিক্রি হয় সেটা বুঝতে পারতে হবে। এটা মার্কেটিয়ারের প্রথম ও মৌলিক কাজ। নিজের বুঝ ক্রেতার ওপর চাপাতে গেলে হবে না। বরং ক্রেতার চাহিদা বুঝতে হবে। ক্রেতার চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে বাজারে যে শূন্যতা রয়েছে সেটাই মূলত ব্যবসা। অর্থাৎ সমস্যার সমাধানই হচ্ছে ব্যবসা।

আবার মনে হতে পারে বাজারে তো এই পণ্য বা সেবা আরও আছে। তাহলে তো শূন্যতা নেই। লাক্স সাবান মেয়েদের গ্ল্যামার প্রাধান্য দেয়, ডেটল ও লাইফবয় রোগ-জীবাণু থেকে মুক্ত থাকার কথা বলে। আমি নিয়ে এসেছিলাম অ্যারোমেটিক বিউটি সোপ, যার সেøাগান ছিল ‘১০০ ভাগ হালাল সাবান’। এই সেøাগান ছিল আমার সাবান কেনার পিছনের কারণ। এটাও এক ধরনের শূন্যতা, যা আইডিয়া দিয়ে পূরণ করতে হবে।

লবণ তো আগেও ছিল। আমি দেশে প্রথমবারের মতো পরিচয় করিয়েছি ঝরঝরা ধবধবে সাদা লবণ। সেøাগান ছিল, ‘এসিআই সল্ট মেধা বিকাশে সাহায্য করে’। এই দামি লবণ চলবে না মনে হতো। কিন্তু বাজারে এখন আগের সেই লবণ খুঁজেই পাবেন না।

এই যে বাজারে ক্রেতার চাহিদার বিপরীতে শূন্যতা বুঝতে পারা এবং দৃষ্টি আকর্ষণের ভাষা ও সেøাগান এগুলো হচ্ছে মার্কেটিয়ারের পুঁজি ও শক্তি। এসব বৈশিষ্ট্য অবশ্যই থাকতে হবে।

একটি ব্যবসা বা কোম্পানিতে অনেক ডিপার্টমেন্ট থাকে। সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো লাভ আনতে সবারই ভূমিকা আছে। কিন্তু লক্ষ্য করে দেখবেন মার্কেটিং হচ্ছে, বিক্রি বৃত্তের একেবারে প্রথম কাজ। এটাতে ভালো করার ওপর অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট তাদের ক্যারিশমা দেখাতে পারে।

মার্কেটিয়ার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছেন এবং কী কী ডিগ্রি নিয়েছেন এমন হার্ডস্কিল একেবারেই গৌণ। হার্ডস্কিলগুলো বড়জোর নিয়োগ পেতে কাজে লাগে। কিন্তু সফটস্কিল সর্বদা কাজে লাগে। যেমন কোনো বিষয়কে মার্কেটিয়ার কীভাবে দেখে, ভাবে ও চিন্তা করে। জ্ঞান অর্জন ও শেখার আগ্রহ, বুদ্ধি ও আত্মবিশ্বাস এগুলো ব্যক্তিকে অনেক দূর এগিয়ে নেয়। ব্যক্তির এই গুণ প্রতিষ্ঠানকেও অনেক দূর এগিয়ে দেয়।

চ্যালেঞ্জ নিতে পারতে হবে। বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করা এবং সেগুলোকে সংক্ষেপে গুছিয়ে বলতে পারা দারুণ যোগ্যতা। এগুলো মার্কেটিয়ারের মধ্যে থাকতে হবে। এমন পরিবেশে থাকতে হবে যেখানে শেখার সুযোগ আছে। ইতিবাচক মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে যাতে উৎসাহিত হওয়া যায়। আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা থাকতে হবে। কাজে বাধা আসবে এটা খুবই স্বাভাবিক। এ জন্য ভড়কে না গিয়ে, হতাশ না হয়ে চেষ্টার পর চেষ্টা করে যেতে হবে। অনেকে কাজ থেকে পালিয়ে বেড়ান। কাজ দিলে বিরক্তির সঙ্গে গ্রহণ করেন। নালিস আর অভিযোগ ছাড়া তাদের মুখে কোনো কথা থাকে না। বস্তুত দুনিয়া হচ্ছে ঝামেলার পাহাড়। এটা থেকে পালিয়ে থাকার সুযোগ নেই। বরং কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার মধ্যেই কল্যাণ।

পালিয়ে না থেকে বরং গ্রহণ করার মানসিকতা রাখতে হবে। যেখানেই কাজ থাকুক না কেন, সেখানে ছুটে যেতে হবে। সেটা এসি ঘর হোক বা ধুলাবালিমাখা পথপ্রান্তর হোক। নেতিবাচক মানসিকতা থেকে ইতিবাচক মানসিকতায় চলে এলে কাজ এতেই অর্ধেক হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। বাকিটা মাঠে নামতে হবে।

সিইও মানসিকতার মানুষ হতে হবে। সিইও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। কোম্পানির সবার ভালো-মন্দের দায়ভার তাকে নিতে হয়। দিন শেষে কোম্পানি যদি ভালো করতে না পারে তাহলে সিইও-এর বলার সুযোগ নেই যে, ‘আমি নির্দোষ’।

ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, খেলোয়াড় তারা বারবার চেষ্টা করে দক্ষ হয়। ভালো মার্কেটিয়ার হতে হলে অবশ্যই চর্চা করতে হবে। চর্চা ছাড়া আপনার আজকের পারদর্শিতাও থাকবে না। পাশাপাশি অন্যদের কাজ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। স্থবির হয়ে বসে থাকলে গতিশীল এই দুনিয়ায় পিছিয়ে যেতেই হবে।

মনোযোগ দিতে হবে কাজ শেষ করার প্রতি। অফিস টাইম মেনে চললাম অথচ কাজ আগাল না এমন হলে হবে না। দিনের শুরুটা করবেন খুব সকালে। কাজ শেষে রিল্যাক্স করবেন। অন্যদিকে সকাল থেকে ঢিলেমি করলে পরিণতি এমন হবে যে রাতে কাজ করেও কুলাতে পারবেন না। মনে রাখবেন সফল ব্যক্তির জন্যও কিন্তু সময়টা ২৪ ঘণ্টা, আপনার জন্যও তাই।

বিক্রির জন্য অনেকে পণ্যের দাম কমিয়ে দেন। এতে সাময়িক লাভ হলেও ভবিষ্যতে ভালো করা যায় না। তাই পণ্যের গুণগতমান কীভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে খেয়াল করতে হবে। পণ্যের মোড়ক থেকে ভিতরের সবকিছু মানের দিক দিয়ে হতে হবে অনন্য। যাতে ক্রেতা পুনরায় সেটা কেনেন।

একটি পণ্য সম্পর্কে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন আমি বলতে পারব। এটা চর্চা করে অর্জন করেছি। এটা পারি বলে হয়তো অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে সফল হতে পেরেছি। পাশাপাশি আপনি সবই করলেন কিন্তু ক্রেতাকে বুঝাতে পারলেন না তাহলে ব্যর্থ হবেন। এ জন্য মার্কেটিংয়ের ভাষা জানতে হবে। পণ্য বা সেবার প্রতি ক্রেতার অনুভূতি তৈরি করতে হবে। যাতে ক্রেতা সেটা ক্রয় করে।

এ ছাড়া ফ্যাক্টরিতে দামি মেশিন কিনলেই সফলতা আসে না। সেই সঙ্গে সেটা পরিচালনার জন্য পেশাদার ব্যক্তি নিয়োগ দিতে হয়। এই মূল্যায়নটা জরুরি। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ছন্দময় ব্যবস্থাপনা আর কঠোর শ্রম। বস্তুত, সফলতা একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ার ফল।

লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক  ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)  আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপ।

সর্বশেষ খবর