বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

অস্থিতিশীল শ্রীলঙ্কা

অসংযমী আচরণ বিপদ বাড়াবে

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, রাজনীতি হলো অর্থনীতির প্রতিবিম্ব। অর্থনীতিতে বিপর্যয় শুরু হলে রাজনীতিতে তার অপপ্রভাব পড়তে বাধ্য। দক্ষিণ এশিয়ায় একসময়ের সবচেয়ে এগিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক দেউলিয়া অবস্থা দেশটির রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। অনিন্দ্যসুন্দর এ দ্বীপদেশটির বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান মাধ্যম ছিল পর্যটন। করোনাভাইরাসের কারণে পর পর দুই বছর পর্যটন খাতে আয় প্রায় শূন্যের পর্যায়ে দাঁড়ায়। ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে দেশটি। একই সময়ে সরকারের ভুল নীতি সংকটকে ঘনীভূত করে তোলে। সার আমদানির খরচ বাঁচাতে অর্গানিক পদ্ধতির ফসল ফলানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। পরিণতিতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশটিতে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় হাহাকার অবস্থার সৃষ্টি হয়। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দেয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম চার-পাঁচ গুণ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে দেশটি। ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শূন্য হয়ে পড়ায় দেশজুড়ে সৃষ্টি হয় নেই নেই অবস্থা। দেশটিতে চলছে খাদ্যের তীব্র অভাব। জ্বালানি তেলের অভাবে চলছে না গাড়ি। ওষুধের অভাবে মানুষ হাহাকার করছে। অর্থনীতির এ নাজুক অবস্থায় প্রচ- গণবিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে সামরিক বিমানে পালিয়ে গেছেন মালদ্বীপে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শ্রীলঙ্কা সরকার দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। এর আগে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রেসিডেন্ট ভবন দখল করে। তারা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনেও আগুন লাগায়। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। এমনিতেই দেশটিতে রয়েছে জাতিগত বিরোধ। কয়েক যুগের তামিল বিদ্রোহে ১ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতির কোনো রাতারাতি সমাধান নেই। অসংযমী আচরণ বিপদই শুধু বাড়াবে। বিশেষ করে ঘোরতর এ দুর্দিনে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া তামিল টাইগারদের দিক থেকে হুমকি সৃষ্টি হলে তা অস্তিত্বের সংকট হয়ে দেখা দেবে। যা কাম্য নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর