বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

বিদ্যুৎ অপচয় রোধে ইসলামের নির্দেশনা

মাওলানা আবু তালহা তারীফ

বিদ্যুৎ অপচয় রোধে ইসলামের নির্দেশনা

বিদ্যুৎ আমাদের জন্য বিশেষ এক নিয়ামত। বিদ্যুৎ কতটুকু নিয়ামত তা আমরা লোডশেডিংয়ের সময় খুব সহজে বুঝতে পারি। বিদ্যুৎ ছাড়া জীবন যাপন করা খুবই কষ্টকর। কলকারখানা থেকে শুরু করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করা যাবে না। বিদ্যুৎসহ পৃথিবীর সবকিছু আমাদের উপকারের জন্যই মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। সুরা বাকারার ২৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।’

বিদ্যুৎ একটি নিয়ামত আর ইসলামে সব ধরনের নিয়ামতকে সঠিকভাবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমার গ্যাস-বিদ্যুতের বিল দেওয়ার তৌফিক রয়েছে, আমি ফ্রি ব্যবহার করি না, বিল দিচ্ছি বলে বিলাসিতা করে বিদ্যুৎ-গ্যাসের অপচয় করব এ ধরনের শিক্ষা ইসলাম দেয়নি। রসুলুল্লাহ (সা.) নদীর পানিতে অজু করতে গিয়েও পানির অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা পানির অপচয় কোরো না, যদিও বা প্রবহমান নদীর তীরে অবস্থান কর।’ (ইবনে মাজাহ)

বিদ্যুৎ আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন ও উপকারী। এর ব্যবহারে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। অতিরিক্ত বাতি, ফ্যান, এসি বন্ধ করে এর অপচয় রোধ করতে হবে। মনে রাখা জরুরি, অপচয়ের ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিলে আমরাই সমস্যায় পড়ব। একটি বাতিতে প্রয়োজন মিটে যায়, সেখানে অতিরিক্ত বাতি ব্যবহার করছি, রুমে কেউ নেই তবু ফ্যান কিংবা এসি চলে, বাইরে সৌন্দর্যের জন্য হরেকরকমের বাতি জ্বালিয়ে অপচয় করছি, অতিরিক্ত ব্যবহারে যেমন বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দেবে তেমনি অর্থনৈতিক অপচয় হবে। এজন্য সব ক্ষেত্র অপচয় বন্ধ করে অর্থনৈতিক অপচয় রোধ জরুরি। অর্থনৈতিকসহ সব ধরনের অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। অপচয় অপব্যয় আল্লাহও নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা আহার কর ও পান কর, কিন্তু অপচয় করবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৩১) আমি তো চাকরি করি, বিল দিলে মালিক কিংবা সরকার দেবে তাই নিজ ইচ্ছানুযায়ী অতিরিক্ত ব্যবহার করছি, এ অতিরিক্ত ব্যবহারের হিসাবও কেয়ামতের ময়দানে আল্লাহর কাছে দিতে হবে। বিদ্যুৎ যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করব, এ ধরনের মানসিকতা দূর করতে হবে। আমাদের সচেতন ও পরিবর্তন হতে হবে। প্রত্যেকে যদি নিজ অবস্থান থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হই তাহলে লোডশেডিং থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আল্লাহর দেওয়া সব নিয়ামত অপব্যবহার নয়, সচেতন নাগরিক হয়ে সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে শান্তি পাব দুনিয়া ও আখেরাতে। আমরা অপব্যয় করে শয়তানের ভাই হয়ে বাঁচতে চাই না, রসুলুল্লাহর ইমানদার উম্মত হয়ে বাঁচতে চাই। ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৭)

 

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর