শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

এমন চরিত্র নিয়ে কোন মুখে নবীজির সামনে দাঁড়াব আমরা!

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

এমন চরিত্র নিয়ে কোন মুখে নবীজির সামনে দাঁড়াব আমরা!

গ্রামীণ একটি প্রবাদ আছে- ‘বেড়ি ফসল খেলে, পাহারা দেবে কে?’ অর্থাৎ গরু ছাগল যেন ফসল খেতে না পারে তাই চারদিকে বেড়ি বা বাঁধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে বেড়িই যদি ফসল খেয়ে ফেলে তাহলে কী উপায়? আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যায়। বলা হয়, ‘ভূতে পেলে শর্ষে দিয়ে ভূত ছাড়াতে হয়। কিন্তু শর্ষের মধ্যেই ভূত ঢুকে গেছে, তাহলে কী উপায়?’ এমন পরিস্থিতিতে কোনো উপায় থাকে না। আমাদের সাধারণ মুসলমানদের হয়েছে সে দশা। উম্মতকে শয়তানের ওয়াস ওয়াসা থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব আলেমদের। কিন্তু আলেমরা এখন ঝগড়া ফ্যাসাদে ব্যস্ত। এ ওকে কাফের বলছে, ও তাকে কাফের বলছে। বড় আফসোস! নবীজি (সা.) এসেছেন ঝগড়া থামাতে। আর আমরা সে নবীকে নিয়ে, তার বাণী নিয়ে, তার ধর্ম নিয়ে ঝগড়ার কাদাপানিতে রাতদিন হাবুডুবু খাচ্ছি। রসুল (সা.) তখনো নবুয়তি পাননি। বয়সে তরুণ। মক্কার চারদিকে যুবক মুহাম্মদের সুনাম সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। কী সুনাম? টাকা পয়সার সুনাম? দাস দাসীর সুনাম? হিরা জহরতের সঞ্চয়ের সুনাম? এসব কিছুই নয়। মক্কার আনাচে কানাচে জানাজানি হয়ে গিয়েছে, মুহাম্মদের মতো পরম সত্যবাদী মানুষ আর নেই। এ যুবক কখনো মিথ্যা বলে না। আমানতের খেয়ানত করে না। মানুষের পিছনে নিন্দা করে না। কারও ক্ষতি করে না। স্বার্থের দুনিয়ায় একমাত্র নিঃস্বার্থ মানুষ মুহাম্মদ। রসুল (সা.) নিজের চরিত্র দিয়ে এ বিষয়গুলো প্রমাণ করেছেন। ফলে মক্কার প্রতিটি লোকের কাছে রসুল (সা.) ছিলেন পরম বিশ্বস্ত। আল আমিন। একদিন মক্কার নেতারা বসেছে পরামর্শ করার জন্য। কাবা শরিফের হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথর স্থাপন করবে কে এ বিষয়ে পরামর্শ। যে গোত্রের লোক এ পাথর স্থাপন করবে সে গোত্র হবে অনন্য মর্যাদার অধিকারী। ফলে প্রতিটি সম্ভ্রান্ত গোত্রই চাচ্ছিল তারা পাথর স্থাপন করবে। কিন্তু ছোট্ট একটি পাথর তো আর একাধিক গোত্রের লোক মিলে স্থাপন করা সম্ভব নয়। কী করা যায়। সিদ্ধান্ত হলো যুদ্ধ হবে। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যে গোত্র জয় লাভ করবে সেই হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের বিরল গৌরব অর্জন করবে। যুদ্ধের দাদামা বাজার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে একজন বলল, আমাদের আল আমিন পরম বিশ্বস্ত মুহাম্মদকে ডাক। দেখ, সে কোনো সমাধান করে দিতে পারে কি না। সে যে সমাধান দেবে আমরা সবাই তা মেনে নেব। অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, মক্কার একজন বয়োবৃদ্ধ নেতা বলল, আজ থাম। আগামী কাল সকালে যে কাবা ঘরে প্রথম আসবে তার থেকে আমরা সমধান চাইব। পরের দিন সকালে কাবা ঘরে প্রথম প্রবেশকারী ব্যক্তি রসুল (সা.)। সবাই মুহাম্মদকে দেখে মারহাবা মারহাবা বলে স্বাগতম জানাল। একবাক্যে বলে ওঠল, মুহাম্মদ যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তা মাথা পেতে মেনে নেব। একজন পুরো বিষয়টি খুলে বললেন যুবক নবীজির কাছে। নবীজি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, আপনারা ঝগড়া বিবাদ বন্ধ করুন। এর সহজ সমাধান আমার কাছে আছে। সিরাতে ইবনে হিশামের বর্ণনায় এসেছে, রসুল (সা.) নিজের চাদর বিছিয়ে এর ওপর হাজরে আসওয়াদ পাথরটি রাখলেন। এরপর বললেন, প্রতিটি গোত্র থেকে একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি আসুন। সবাই এলে রসুল (সা.) বললেন, আপনারা সবাই চাদরের একেক কোণা ধরুন। সবাই মিলে পাথরটি যথাস্থানে রেখে আসুন। রসুল (সা.) এর এমন কৌশলী সমাধানে সেদিন ইতিহাসের পাতা থেকে একটি যুদ্ধ উধাও হয়ে গেল।

হায় আফসোস! যে নবী জীবন ভর যুদ্ধ, লড়াই, তর্ক এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন, সে নবীর উম্মত হয়ে আমরা যেন তার সুন্নাত ভুলে গেছি। আমাদের জীবনের সর্বত্রই লড়াই, সর্বত্রই যুদ্ধ। তর্ক না করলে, ঝগড়া না বাঁধালে আমাদের পেটের ভাত যেন হজম হতে চায় না। এমন চরিত্র নিয়ে কেয়ামতের দিন নবীজির সামনে কোন মুখে দাঁড়াব! হে আল্লাহ আপনি আমাদের সুবুদ্ধি দিন। আমিন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি পীর সাহেব, আউলিয়ানগর।

 

সর্বশেষ খবর