মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশের সম্মান নিয়ে সবার ভাবনা এক হওয়া উচিত

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

দেশের সম্মান নিয়ে সবার ভাবনা এক হওয়া উচিত

দেশপ্রেম যে মাতৃপ্রেমের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয় ছাত্র রাজনীতিতে না এলে তার কানাকড়িও বুঝতাম না, উপলব্ধিতে আসত না, দেহমনে স্পর্শ করত না। কিন্তু ১৯৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কীসের টানে শরিক হয়েছিলাম বুঝতে পারিনি। মূলত বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ছাত্র কর্মী হয়েছিলাম। তার আগে দেশ কাকে বলে, দেশের মানুষের ভালোমন্দ, আনন্দ-বেদনা দেহমনে স্পর্শ করত না। ভাবতাম, যার যার মতো কাজ করবে, খাবে। জজ সাহেব, ব্যারিস্টার সাহেব, কুলি-মজুর-রিকশাওয়ালা যার যার মতো কাজ করবে খাবে, যার যার মতো চলবে। সেখানে অন্যের বলার কী? কিন্তু যখন রাস্তাঘাটে চিৎকার-ফাৎকার শুরু করলাম তখন বুঝলাম শুধু নিজের জন্য বাঁচাই বাঁচা নয়, মানুষের মতো বাঁচতে গেলে অন্যের হাসি-কান্না-দুঃখ-বেদনাও হৃদয়ে ধারণ করতে হয়। এর কোনো কিছুই বুঝতাম না যদি না ছাত্রলীগের মাধ্যমে কথা বলতে শুরু করতাম। সমাজের জন্য মানুষের জন্য কিছু ভাবতে শেখা, সাধারণ মানুষের হাসি-কান্না হৃদয়ে ধারণ করা এ সবই হয়েছিল ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশের পর। আর ছাত্র হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের পেছনে ছুটতে ছুটতে সামনের দিকে এগিয়ে ছিলাম। কতটা সামনে যেতে পারতাম জানি না, মুক্তিযুদ্ধ না হলে হয়তো আরও কিছুদূর এগোতাম। কিন্তু আজকের মতো হতাম না। মানুষের জন্য বুকের ভিতর কান্না অনুভূত হতো না। ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে যে-কোনো জায়গায় গেলে সাধারণ মানুষ বড় বেশি খুশি হতো। সাধারণ ছাত্রদের তাদের সেবক ভাবত, আপনজন ভাবত। আমরাও আপনজনের মতো সাধারণ মানুষের কিংবা সাধারণ ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতাম। মানুষও ভালোবেসে আমাদের বুকে টেনে নিত।

কিন্তু এখন ছাত্রদের মারামারি, হানাহানি দেখে বুক পুড়ে যায়, ছিঁড়ে যায়, টুকরো টুকরো ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। কদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে যে মারামারি দেখলাম তাতে হৃদয় ভেঙে খানখান হয়ে গেছে। কার কতটা লাভ হয়েছে বলতে পারব না। ছাত্রদলের, না ছাত্রলীগের, আওয়ামী লীগ সরকারের, না বিরোধী দল বিএনপির? না, কারও কোনো লাভ হয়নি। কিন্তু দেশের ভাবমূর্তি বিশ্বদরবারে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে। জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশেনে অংশ নিতে গিয়েছিলেন। জাতিসংঘের সদর দরজায় একদল বাংলাদেশি বা বাংলাদেশের নাগরিক প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছেন, পাশেই আরেক দল নিন্দা করেছেন। এসব দেখে বড় মর্মাহত হয়েছি। দেশের ভিতরে কত মারামারি-কাটাকাটি, দেশের বাইরেও অন্য মানুষের সামনে মারামারি-কাটাকাটি না করলেই কি নয়? নেত্রী শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। যেভাবেই হোক তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিএনপি-জামায়াত কেউ বাদ পড়ে না, আমরাও না। তাহলে দেশের বাইরে দলাদলি-হলাহলি না করে কি পারি না? ভারতের বাইরে অন্য কোনো দেশে ভারতীয় কংগ্রেস, শাসক দল বিজেপি কিংবা পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস নেই। সেখানে সবাই ভারতীয়। পাকিস্তান আমাদের ওপর কত নির্যাতন করেছে, কত খুন-খারাবি করেছে। পাকিস্তানিদেরও বিদেশে যার যার দল নেই। তারা সবাই পাকিস্তানি। পাকিস্তানের ভিতরে এত গোলযোগ তার পরও ইংল্যান্ড-আমেরিকা-কানাডা কোথাও তাদের দলীয় কোনো কমিটি নেই। শুধু আমরাই এত প্রগতিবাদী সংগ্রামী যে নিউইয়র্কেও দলাদলি, গালাগালি করি। আমরা কোথাও এক হতে পারি না, দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারি না। দেশকে ধ্বংস করাই যেন আমাদের প্রধান কাজ। দেশের ক্ষতি করতে পারলে, সুনাম নষ্ট করতে পারলে আমরা যেন এক লোকমা ভাত বেশি খাই। কবে আমাদের হুঁশ হবে, কবে মনে হবে রক্তবিধৌত বাংলাদেশ কারও একার নয়, আমাদের সবার অর্জন। তাই মাঝেমধ্যে খুবই কষ্ট হয়।

এই যে ইডেন কলেজ মেয়েদের কত বড় নামকরা কলেজ। শুনছি ৩০-৩৫ হাজার শিক্ষার্থী। কীসব ঝগড়া-ফ্যাসাদ! আমি ইন্টারনেট চালাতে জানি না, ইউটিউবও ভালো করে দেখতে পারি না। হঠাৎই সেদিন টিপতে টিপতে ৬-৭ মিনিটের একটা নাটক দেখলাম। পাত্রী দেখতে বাবা, ছেলে-মেয়ে গেছে। পাত্রী পছন্দ হওয়ায় বাবা-মেয়ে কেনাকাটা করতে গেছে। এ সময় বর-কনে কথা বলছিল। একসময় বর জিজ্ঞেস করল, আপনি কোথায় পড়েন? মেয়েটি বলে, ইডেনে। শোনার সঙ্গে সঙ্গে দে ছুট! এই যদি অবস্থা হয় তাহলে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কী করব? পদে পদে অদক্ষ-অযোগ্য লোকের সমাহার। কোথাও তেমন মেধাসম্পন্ন, যোগ্য মানুষ নেই। দেশে ভালো মানুষ নেই তা নয়। যোগ্য স্থানে যোগ্য মানুষের অভাব। যারা নির্বাচন করে তারা পোঁ ধরা অযোগ্যদেরই বেছে নেয়। তাই ধীরে ধীরে অযোগ্যরাই সামনের কাতারে চলে এসেছে। তারা না নিজেরা রাস্তা দেখে, না অন্যকে দেখাতে পারে। তাই ধীরে ধীরে একটা জট পাকিয়ে গেছে। মানুষের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। যা নয় তা-ই নিয়ে অনেকেই ব্যস্ত।

বহু বছর আগের কথা। নির্বাসন থেকে রিফিউজি পরিচয়ে ১৯৮৯-এ লন্ডনে গিয়েছিলাম। জাতিসংঘে রিফিউজি পরিচয়ের যে এত মর্যাদা আগে জানতাম না। পরিচয়পত্রে লেখা ছিল ‘টাইগার সিদ্দিকী অব বাংলাদেশ’। হিথরো বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা কাউকে ফিরেও দেখেন না। হঠাৎই ‘টাইগার টাইগার’ আলোচনায় অনেকেই কৌতূহলী হয়ে ছিলেন। না হলেও হিথরোর ২৫-৩০ জন অফিসার ছুটে এসে পরিচিত হয়েছিলেন, হাত মিলিয়েছিলেন। সেই থেকে বুঝেছিলাম দেশ থেকে বিতাড়িত ভালো মানুষেরও সম্মান আছে। তখন দেশে স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিরোধী প্রবল ঝড় বইছিল। ১৯৯০-এর ৬ ডিসেম্বর সম্মিলিত গণ-আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন। সেদিনও এক বেইলি ব্রিজ উদ্বোধনে রাষ্ট্রপতি এরশাদ টেকেরহাট গিয়েছিলেন। তাঁর সেদিনের জনসভায় দেড়-দুই লাখ লোক হয়েছিল। তার পরও সন্ধ্যায় ঢাকা ফিরেই পদত্যাগ করেন। তখন সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল নূরউদ্দীন। তাঁকে এরশাদ বলেছিলেন সেনাবাহিনী রাস্তায় নামাতে। জেনারেল নূরউদ্দীন এরশাদকে বলেছিলেন, সেনাবাহিনীকে আমি জনগণের মুখোমুখি করতে পারব না। যতক্ষণ জনগণ আপনার সঙ্গে আছে আমরা আপনার পেছনে আছি। জনগণের বুকে অস্ত্র ধরার জন্য সেনাবাহিনী নয়। এ জবাবের পরপরই এরশাদ পদত্যাগ করেন। এ নিয়ে যখন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ অনুযোগ করেন, পদত্যাগ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি আমাদের সঙ্গে একবারও কথা বললেন না- এটা কী করলেন? তার উত্তরে একটা মারাত্মক কথা বলেছিলেন এরশাদ। বলেছিলেন, ‘এই একটা কাজই কারও সঙ্গে পরামর্শ করে করতে হয় না। নিজের বিবেকের বিচারে করতে হয়।’ সত্যিই, কথাটি সর্বকালের জন্য সত্য।

সেদিন আমি ছিলাম লন্ডনে। মুক্তিযুদ্ধে বাইরের চেহারা দেখতে পারিনি, ছিলাম দেশের ভিতরে। শুধু ভিতরে নয়, ১৬ ডিসেম্বর তিনজন ভারতীয় সেনাপতি আর বাঙালি হিসেবে আমি বাঘের গুহায় গিয়েছিলাম। সেদিন দেশের ভিতরে উল্লাসে উদ্বেল মানুষের মুখ দেখেছি। কিন্তু বাইরের কোনো অনুভূতি বলতে পারব না। তবে ’৯০-এর ৬ ডিসেম্বর বিলেতে বাঙালিদের দেখে মনে হয়েছিল বাংলাদেশ যেন আবার স্বাধীন হলো। মানুষ যে কতটা আনন্দে উদ্বেল হতে পারে লন্ডনে প্রবাসী বাঙালিদের আনন্দ দেখে অনুভব করেছিলাম। যে অনুভূতি আজও আমার বুকে চেপে আছে। পরদিন গিয়েছিলাম বাংলাদেশ হাইকমিশনে। আমাদের ইচ্ছা ছিল হাইকমিশনে বঙ্গবন্ধুর ছবি তোলা। লন্ডনে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও অত লোক হয়নি যত লোক সেদিন সমাগম হয়েছিল অ্যাম্বাসির চারপাশে। গোলমাল হতে পারে বিশৃঙ্খলা হতে পারে এসব ভেবে অনেক পুলিশ অ্যাম্বাসি ঘিরে রেখেছিল। তখন লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনার ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ। তীব্র শীতের মধ্যেও আমরা ৫-৬ ঘণ্টা অবস্থান করছিলাম। একপর্যায়ে লোকজন ভাঙচুর, জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য ভীষণ তৎপর হয়ে ওঠে। তখন তাদের বলেছিলাম, আপনারা যে যা-ই করুন গেট ভেঙে হাইকমিশনে ঢোকার, হাইকমিশন তছনছ করার কোনো আগ্রহ আমার নেই এবং ভাঙাভাঙির সঙ্গে নিজেকে জড়াবার কোনো ইচ্ছা নেই। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরপরই লন্ডন হাইকমিশনে বঙ্গবন্ধুর ছবি পায়ে পেষা হয়েছিল আমি শুধু তারই প্রতিকার চাই। সসম্মানে বঙ্গবন্ধুর একটা ছবি হাইকমিশনে ওঠাতে চাই। আপনারা একমত হয়ে সবাই এসেছেন এজন্য আমি সত্যিই গর্বিত। সে সময় আমাদের নেতৃত্ব -কর্তৃত্ব ছিল। সে সময় দেশপ্রেম, ভালোবাসা ছিল। ১৫ আগস্ট ’৭৫ বঙ্গবন্ধু শফিউল্লাহকে ফোন করেছিলেন, ‘তোমার বিশৃঙ্খল সেনাবাহিনীর কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক আমার বাড়ি আক্রমণ করেছে। তুমি এটা বন্ধ কর।’ শফিউল্লাহ কিছুদিন আগে টিভি চ্যানেলে বলেছেন তিনি নাকি বঙ্গবন্ধুকে পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এটা আমার কথা নয়, পাঁচ-ছয় বছর আগে তিনি নিজে টিভিতে বলেছেন। কোটি মানুষ সে কথা শুনেছে।

শফিউল্লাহকে সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে বিদেশ মন্ত্রণালয়ে আত্তীকরণ করা হয়েছিল। সেখান থেকে তিনি অনেক বছর রাষ্ট্রদূত হিসেবে এ দেশ-ও দেশ করেছেন। মানলাম ব্যর্থ একজন সেনাপ্রধানকে তখনকার সরকার কোলে নিয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কেন তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করা হলো? কেন তাকে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হলো? ব্যর্থ লোকগুলোর এত প্রয়োজন কেন? ’৯০-এর সফল গণ-অভ্যুত্থানের পর লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলতে দেননি তিনি। অথচ হাইকমিশনের অনেক কর্মী বঙ্গবন্ধুর ছবি তোলার জন্য উদ্গ্রীব হয়েছিলেন। কেউ কেউ গেটে এসে আমাদের বারবার অনুরোধ করেছিলেন, ছবি দেন আমরা তুলে দিই। আমরা তা দিইনি। বঙ্গবন্ধুর ছবি যিনি তুলতে দেননি সেই মানুষটাই কিন্তু চাকরি শেষে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য জায়গার ছাত্রলীগ যেভাবে লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের ওপর আক্রমণ চালায় সে রকম যদি ইংল্যান্ডে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ঘর-দুয়ার ভাঙা হতো, জ্বালাও-পোড়াও হতো তাহলে আমাদের কতটা সম্মান বাড়ত? নাকি দেশের মান ক্ষুণ্ণ হতো? যাদের সামর্থ্য আছে তারা দেখে নেবেন সেদিনের সেই ঘটনায় ইংল্যান্ড পুলিশ মন্ত্রণালয়ে কী রিপোর্ট করেছিল। আমার সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন কী ছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব সম্পর্কে কত উচ্চ ধারণা ছিল। সত্যিই সেদিন হাইকমিশনে ভাঙচুর হলে, জ্বালাও-পোড়াও হলে আমাদের কোনো লাভ হতো না। বরং ক্ষতি হতো। ভাঙচুর না করে পিতার ছবি দেয়ালে না টাঙিয়ে আমরা বিজয়ী হয়ে ফিরেছিলাম। ওরপর বহু নেতার কাছে শুনেছি, আওয়ামী লীগের সুনাম আওয়ামী লীগের মর্যাদা ব্রিটেনের সরকারি মহলে, প্রশাসনে, মানবাধিকার কমিশনে অনেক অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছিল।

আগে থেকেই ডিসেম্বরে দেশে ফেরার পরিকল্পনা। যে বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও মত দিয়েছিলেন। লন্ডন থেকেও তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছিল। একেবারে শেষে তিনি বলেছিলেন, ‘বজ্র, তোমার নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছি না। তোমার জীবনের ঝুঁকি আছে। কেউ কেউ এখনো তোমার ফিরে আসা চায় না। সম্পূর্ণ বিবেচনা তোমার হাতে।’ আমি মনস্থির করেছিলাম, মুসলমানের হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে। মুসলমান একবার মরে, বারবার নয়। তাই আমি দেশে ফিরবই। অনেক হিতৈষীর পরামর্শ লন্ডনের হিথরো থেকে সরাসরি ঢাকায় ফিরলে ভালো। তাতে নাকি আমার প্রত্যাবর্তনের মর্যাদা বাড়বে। কিন্তু খাজা গরিবে নেওয়াজের মাজার জিয়ারত এবং ভারত থেকেই দেশে ফেরার ইচ্ছা ছিল আমার। তা-ই করেছিলাম। ভারত থেকে ঢাকা ফিরতে অনেক নাটক হয়েছিল। তখন মহান ভারতের প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। ফেরার আগের দিন জ্যোতি বসুর সঙ্গে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি আমাকে খুব ভালোবাসতেন, সম্মান করতেন, গুরুত্ব দিতেন। তাঁর স্ত্রী কমলা বসু টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী গার্লস স্কুলে পড়েছেন। কারণ কমলা বসুর বাবা টাঙ্গাইলের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। আমার মনে হচ্ছিল আমার দেশে ফেরা নিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র ও জটিলতা চলছে। জ্যোতি বসু বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের সীমানায় কেউ আপনার জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। আমি যখন বিমানে উঠি তখন যেমন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব পাশে ছিলেন, ভারতীয় ফরেন মিনিস্ট্রির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা ছিলেন। আল্লাহর দয়ায় সেদিন প্রত্যাবর্তন নিরাপদেই হয়েছিল।

লেখক : রাজনীতিক

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর