রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কর্মী সামলাতে না পারার ব্যর্থতা ও বাসন্তী মার্কা গুজব

নঈম নিজাম

কর্মী সামলাতে না পারার ব্যর্থতা ও বাসন্তী মার্কা গুজব

আওয়ামী লীগ নেতারা কি তাদের কর্মীদের সামাল দিতে পারছেন না? তাহলে কেন এত অভ্যন্তরীণ হানাহানি? সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের ছবিটি পত্রিকায় দেখে বিস্মিত হলাম। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা মঞ্চে নিজেদের রক্ষা করতে চেয়ার মাথায় অসহায়ের মতো বসে আছেন। কর্মীরা চেয়ার ছোড়াছুড়ি করছে। পরস্পরকে ঢিল মারছে। ছোট বাচ্চারা যেমন করে তারাও তেমন করছিলেন। কেউ কাউকে মানছেন না।  নেতারা অসহায় হয়ে বসে আছেন। চেষ্টা করছেন নিজেদের রক্ষা করতে। একজন নেতাকেও দেখলাম না উঠে দাঁড়াতে। হুঙ্কার দিয়ে বলতে, ‘এই থামো তোমরা, অনেক হয়েছে।’ এ কোন আওয়ামী লীগ? হানাহানি সংঘাত অতীতেও ছিল। তারপরও কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় গেলে একটা আলোড়ন হতো। স্থানীয়রা ইজ্জত-সম্মান দিতেন। নেতারাও ধমক দিলে কর্মীরা শুনতেন। কর্মী নিয়ন্ত্রণে যোগ্যতা থাকতে হয়। নেতৃত্বের দক্ষতা দেখাতে হয়। আওয়ামী লীগে তেমন নেতা অনেক আছেন। কিছুদিন আগে আমাকে একজন একটা এসএমএস পাঠালেন। লিখলেন, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় কিছু লোক রাস্তা দখল করে নিচ্ছে। বন্ধ করে দিচ্ছে মানুষের চলাচলের পথ। তারা সরকারি দলের নাম ভাঙাচ্ছে। পুলিশে অভিযোগ করে লাভ হচ্ছে না। এসএমএসটি ফরোয়ার্ড করে পাঠালাম নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমানকে। তিনি জবাবে জানালেন, দেখছি। মুহূর্তে স্থানীয় চেয়ারম্যান চলে গেলেন স্পটে। বন্ধ করলেন রাস্তা দখলের কাজ। স্থানীয়ভাবে বসে সবকিছুর মীমাংসা করে দিলেন চেয়ারম্যান। সমস্যা থাকল না। স্থানীয় অধিবাসীরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। এমন নেতৃত্বই আওয়ামী লীগে দরকার। আরেকটি ঘটনার কথা বলছি। হেফাজতের শাপলা চত্বর অবরোধের রাতে কথা হয়েছিল শামীম ওসমানের সঙ্গে। তিনি জানতে চাইলেন, আমার চোখে সমাধান কী? জবাবে বললাম, সবকিছুর সমাধান রাজনৈতিক জবাবে দিতে হবে। অন্য কোনোভাবে নয়। তিনি বললেন, আমরা পাল্টা অবস্থান নেব। সেই সকালে শামীম ওসমান যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর সড়কে বিশাল মিছিল বের করলেন। জানান দিলেন নিজের সাংগঠনিক অবস্থানের। যাত্রাবাড়ীর পর চট্টগ্রাম রোডে অনেক মাদরাসা আছে। হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা তখন মতিঝিল ছেড়ে ওই এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল। শামীম ওসমান তা জানতেন। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে পাল্টা অবস্থানে পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিলেন।

শামীম ওসমানরা পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধুর অনুসারী। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সময়ের প্রয়োজনে। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে চ্যালেঞ্জ করে আওয়ামী লীগ উঠে দাঁড়িয়েছিল। শুরুটা ছিল অনেক কঠিন। সেই কাঠিন্য বঙ্গবন্ধু জয় করেছিলেন তাঁর কিছু অনুসারীকে নিয়ে। সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে বঙ্গবন্ধুকে বেগ পেতে হয়েছিল। দলের ভিতরে-বাইরে মোকাবিলা করতে হয়েছিল সুশীলদের। প্রকাশ্য বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। অনেকে দাবি করেছিলেন, একজন প্রবীণ নেতাকে দলের সাধারণ সম্পাদক করতে। মওলানা ভাসানী, আতাউর রহমান খান তারুণ্যের পক্ষে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সাধারণ সম্পাদক প্রার্থিতা ঘোষণা করলে কাউন্সিলরদের মধ্যে উৎসবের বন্যা বয়ে যায়। তারা অবস্থান নেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে। বিরোধিতা করেছিলেন সিভিল সোসাইটি ঘেঁষা নেতারা। দায়িত্ব নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে বদলে দেন। তিনি বেরিয়ে আসেন একক নেতা হিসেবে। সেই সময়ের রাজনীতি সম্পর্কে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠানকে জনগণ ও শিক্ষিত সমাজ সমর্থন দিল। মুসলিম লীগের ভিতর তখন ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চরম আকার ধারণ করেছিল। ব্রিটিশ আমলের আমলাদের রাজনীতিতে স্থান দিয়ে তারা ষড়যন্ত্রের জালে আটকা পড়েছিল। তাই প্রতিষ্ঠানের ভিতর আত্মকলহ দেখা দিল প্রবলভাবে। ছোট ছোট উপদলে ভাগ হয়ে পড়েছিল দলটি। নীতির কোনো বালাই ছিল না, একমাত্র আদর্শ ছিল ক্ষমতায় আঁকড়িয়ে থাকা। জেলা ও মহকুমার পুরনো নেতাদের কোনো সংগ্রামী ঐতিহ্য ছিল না, তেমনি দুনিয়া যে এগিয়ে চলেছে সেদিকে খেয়াল ছিল না কারও। শুধু ক্ষমতায় থাকা যায় কী করে সে একই চিন্তা।’ আমলানির্ভর রাজনীতি ক্ষমতাসীনদের কী ক্ষতি করে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর লাইনে লাইনে সেই সতর্কতা। দেশ-বিদেশের রাজনীতিবিদদের সুযোগ পেলে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী উপহার দিই। একবার বিএনপির একজন নেতাকে বইটি দিয়েছিলাম। তিনি অবহেলার সঙ্গে নিলেন। পরে একদিন বললেন, বইটি পড়েছি। বঙ্গবন্ধুর অভিজ্ঞতা থেকে রাজনীতিবিদদের শেখার আছে।

বঙ্গবন্ধু মানুষের মনের কথা বুঝতেন। মানুষকে পড়তে পারতেন বলেই দেশটা স্বাধীন করতে পেরেছেন। সিলেটের বিএনপির এক সময়ের এমপি শফি চৌধুরীর সঙ্গে একবার কথা হচ্ছিল। তার ভাই ই এ চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সময় পুলিশের এসবির প্রধান। শফি চৌধুরী ’৭৪ সালের একটি স্মৃতি শেয়ার করলেন। বললেন, একদিন বঙ্গবন্ধু তাকে ডেকে নিয়েছিলেন। শফি চৌধুরী তখন ভালো ব্যবসায়ী। ট্রেডিংয়ে নাম করে ফেলেছেন। বঙ্গবন্ধু তাকে ডেকে বলেছিলেন, ‘ক্রেডিটে দ্রুত গম-চাল কিনে আনো আমেরিকা বা অন্য দেশ থেকে।’ শফি চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর চোখ ছিল তখন সিক্ত। মনে হচ্ছিল নিজের সন্তানরা অভুক্ত আছে। অভুক্ত সন্তানদের জন্য খাবার সংগ্রহের চেষ্টা করছেন এক বাবা। বাবার অনেক গুণই পেয়েছেন তার মেয়ে। কিছু অর্বাচীনের কারণে আওয়ামী লীগের সাফল্য সবসময় বাধাগ্রস্ত হয়। এখনো হচ্ছে। এখন ঘাটে ঘাটে সুবিধাভোগীরা বসে আছে। বছরখানেক আগের কথা। উত্তরা ১৪ নম্বর এলাকায় একজনের জমি অন্যায়ভাবে দখল করে আছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। চাপ দিচ্ছেন বিক্রি করতে। আবার বিক্রি করতে গেলে টাকা না দিয়ে রেজিস্ট্রি করতে বলছেন। বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলো। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতাকে ঘটনাটি জানালাম। তিনি ফোন করলেন স্থানীয় এমপিকে। কিছুদিন সেই দখলবাজ নেতা চুপ ছিলেন। পরিস্থিতি শান্ত হতে সে জমি আবার নিজের দখলে নিলেন। তাকে থামাতে পারলেন না কেউ। বেপরোয়াদের থামাতে কমান্ডিং ভয়েসের নেতা বা এমপির প্রয়োজন। তেমন নেতার সংখ্যা কমেছে গত ১৪ বছরে। ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসা নেতার সংখ্যা বেড়েছে। ব্যবসায়ী নেতারা দল বোঝেন না। বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শনে তাদের আগ্রহ নেই। তারা রাজনীতিকে ব্যবসায়িক গ্রুপ অব কোম্পানির আরেকটি লাভজনক খাত হিসেবে দেখেন। দলীয় কর্মীদের মনে করেন নিজের করপোরেট জগতের স্টাফ। ভেজালের প্রবেশ ঘাটে ঘাটে। নৌকা ডোবাতে অন্য দলের প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগাররা যথেষ্ট।

আওয়ামী লীগের বর্তমান অনেক কিছুর বদল হতে পারে আগামী কাউন্সিলে। সংগঠন বোঝেন, নেত্রীকে বোঝেন এমন নেতাদের নিয়ে আসতে হবে। সহযোগী সংগঠনেও তাই করতে হবে। নেতা নির্বাচনে ভুল করা যাবে না। সময়টা এখন কঠিন। সহযোগী সংগঠন থেকে বিদায় দিতে হবে কমিটি বেচাকেনার কারিগরদের। দল ও সরকারের দূরত্ব ঘোচাতে হবে। ব্যবসায়ীদের এমপি রাখা হোক, সমস্যা নেই। তাদের দলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিলেই সমস্যা। রাজনীতিবিদদের ব্যবসায়ী হওয়ার চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। কর্মীবান্ধব দক্ষ নেতৃত্বের প্রয়োজন আগামীতে। ভারতীয় কংগ্রেসে সোনিয়া গান্ধী একটা ভুল করেছিলেন। সেই ভুলটা ছিল ক্ষমতাকালে দলকে দূরে সরিয়ে রাখা। মনমোহন সিংহকে প্রধানমন্ত্রী না করে প্রণব মুখার্জিকে সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী করলে আজকে কংগ্রেসকে এত বিপর্যয় মোকাবিলা করতে হতো না। ভারতীয় কংগ্রেসের সাংগঠনিক অবস্থা এত ভয়াবহ অবস্থায় আসত না। কংগ্রেস এখন কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে কেউ জানে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শেষ ঠিকানা আওয়ামী লীগকে বাস্তবতায় থাকতে হবে। দলীয় কোন্দলের লাগাম কঠোরভাবে টানতে হবে। বন্ধ করতে হবে হানাহানি, সংঘাত। আগামী একটা বছর ভোটমুখী থাকতে হবে। নেতা-কর্মী, এমপি-মন্ত্রীদের এবার আসমানি কোনো কিছুর আশা না করাই ভালো। এলাকায় যাবেন না, কর্মীদের কাছে টানবেন না সেই রাজনীতির দিন শেষ। মাঠের রাজনীতিতে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। আগে আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলার সম্মেলন হতো উৎসবমুখর পরিবেশে। মধ্যরাতে সাবজেক্ট কমিটি বসে সবকিছু নির্ধারণ করতেন। ভেজাল দেখলে কেন্দ্রীয় নেতারা কমিটি ঘোষণা করতেন না। পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো না ঠেকলে কমিটি ঘোষণা না দিয়ে নেতারা আসতেন ঢাকায়। পরে সিদ্ধান্ত দিতেন। সবাই হাসিমুখে মেনে নিতেন। সেসব দিন কোথায় হারাল? এখন কেউ কাউকে মানেন না। নেতাদের সামনে মারামারি হয়। কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা তা থামাতে পারেন না। কেন্দ্রে পদ-পদবিতে আছেন, মাঠের কর্মীরা নেতা চেনেন না। নিজের জেলা দূরে থাক, ইউনিয়নে গিয়েও একটা সভা করার ক্ষমতা অনেকের নেই। আমু, তোফায়েল, নাসিম, মেয়র হানিফদের মতো তারকা ইমেজ দরকার নেই। সাংগঠনিক সক্ষমতা, কমান্ড করার মতো ব্যক্তিত্ব তো থাকতে হবে। ‘গায়ে মানে না আপনি মোড়ল’দের যুগ চিরদিন থাকবে না।

বড় দলগুলোতে, সব সময় উপদলে কোন্দল ছিল। এখনো আছে। টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগেও বিভেদ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। নেতাদের ঝগড়া, বিবাদ, চাওয়া-পাওয়ার হিসাব থাকে। সবকিছুর একটা সীমারেখা ও শালীনতা আছে। সেই শালীনতা অতিক্রম করলেই সমস্যা। ভোগবাদের জমানায় কিছু মানুষ বেশি ক্ষমতার অধিকারী। অনেকে হয়েছেন বঞ্চিত। মূল্যায়নে শুধু এমপি লীগ, ভাইলীগ, মন্ত্রী লীগ হলে চলবে না। ইতিহাসের পাতায় চিরদিন এক সমান যায় না। মানুষের নিজের ওপরই এখন আস্থা নেই। ঠকবাজ ভ-দের একটা মচ্ছব চলছে। কাজকর্ম বাদ দিয়ে কিছু মানুষ সমাজে দিনভর দেশবিরোধী গুজব রটিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রবাসী এক বন্ধু ফোন করলেন। বললেন, ব্যাংকগুলো নাকি দেউলিয়া হয়ে গেছে? ডিসেম্বরে দেশে আসব। অল্প কিছু সঞ্চয় আছে। তা তুলে নেব। ব্যাংক শেষ হয়ে গেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাকে বললাম, সবকিছু গুজব। বাংলাদেশ ব্যাংক সবাইকে আশ্বস্ত করেছে, দায় তারা নেবেন। তারল্যের সংকট নেই। ব্যাংকের আর্থিক প্রবাহ স্বাভাবিক। ডলার নিয়ে সংকট মোকাবিলায় কাজ করছে সরকার। আশ্বস্ত হতে পারলেন না প্রবাসী বন্ধু। গুজবের শিকার বঙ্গবন্ধু সরকারও হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আমলে সবচেয়ে বড় গুজব ছিল চিলমারীর বাসন্তী। ১৯৭৪ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে বাসন্তীর জাল পরা ছবি প্রকাশিত হয়েছিল। সারা বিশ্বে ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে। দুর্ভিক্ষের এ ছবি বঙ্গবন্ধু সরকারকে বিব্রত করে। যার রেশ আওয়ামী লীগকে ’৯১ সালের ভোটেও টানতে হয়েছিল। আলোচিত বাসন্তীকে ’৯১ সালে দেখতে গেলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সঙ্গে আমরা একদল সাংবাদিক।

চিলমারী সদর থেকে মাঝিপাড়া এলাকার বহ্মপুত্র নদীর চরে বাসন্তীর বাস। বাসন্তীর বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি তখন যেত না। বেশ কিছুদূর হাঁটতে হয়। হাঁটাহাঁটিতে ক্লান্তি নেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর। তিনি গাড়ি থেকে নেমেই হাঁটা শুরু করলেন। আমরা পেছনে পেছনে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা পথ দেখাচ্ছেন। বাসন্তীর ভাঙা ঘরে পৌঁছলাম। বাসন্তীর ভাঙা ঘর ’৭৪ সালের মতোই আছে। কোনো পরিবর্তন নেই। বড় করুণ জীবনযাপন। শেখ হাসিনা বললেন, দেখ বাসন্তীকে নিয়ে সবাই বক্তৃতাই দিয়ে গেল। রাজনীতি করল। তার ভাগ্যের পরিবর্তন কেউ করল না। ’৭৪ সালে জালের চেয়ে মোটা কাপড় সস্তা ছিল। শেখ হাসিনা নগদ ৩০ হাজার টাকা দিলেন বাসন্তীকে। বললেন, এই সাহায্য অব্যাহত থাকবে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আনসার সাহেব, তিনি সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন, দলীয় সভানেত্রীকে জানালেন, সেই সময়ে ’৭৪ সালে লঙ্গরখানা খুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। দুজন সাংবাদিক ঢাকা থেকে গেলেন বন্যার সংবাদ সংগ্রহ করতে। তারাই বাসন্তীর শরীরে জাল পরালেন টাকা দিয়ে। ছবি তোলার সময় পাট খেতে শাক তুলছিলেন বাসন্তী। বাসন্তীর সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে গেলাম। পাশে থাকা সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন বললেন, কথা বলতে পারে না। বাসন্তী প্রতিবন্ধী।  বুঝতে পারলাম, কীভাবে একজন প্রতিবন্ধীকে ব্যবহার করা হলো বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণায়।

ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। বলা হয়েছিল দুর্ভিক্ষ নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ। সেই প্রচারণার জবাব তখনকার আওয়ামী লীগ দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা বাসন্তীর বাড়ি গিয়ে আসল সত্য বের করেন। ক্ষমতায় এসে পরে তিনি বাসন্তীর পাশে দাঁড়ান। তাকে ঘর বানিয়ে দেন।  আর্থিক সহায়তা করেন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বাসন্তীর মতো গুজব এখনো হচ্ছে। বাসন্তী তৈরির চেষ্টা হচ্ছে ঘাটে ঘাটে। সাধু সাবধান!

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর