সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ষড়যন্ত্রকারীরা ঘাপটি মেরে আছে

অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

ষড়যন্ত্রকারীরা ঘাপটি মেরে আছে

বিএনপি এখন ঘরের বাইরে এসেছে এবং তারা আন্দোলন তৈরি করার জন্য একের পর এক জনসভা করে চলেছে। তারা বিভিন্ন বিভাগে সভা করছে, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বিএনপি যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করে তাদের চা খাওয়ানো হবে। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশের সরকারের কাজকর্মের সমালোচনা করা বিরোধী দলের কাজ।  শুধু মিডিয়াসর্বস্ব হলে চলবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবেই সভা-সমাবেশ করছে এবং তারা কর্মীদের উজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছে। বিএনপির অল্প কয়েকজন এমপি সংসদে সমালোচনা করছেন। তাদের চোখে যদি ভালো কিছু না পড়ে তাহলে তো তারা সরকারের সমালোচনা করবেনই।

বিএনপি এখন আন্দোলন করছে সংবিধান পরিবর্তনের জন্য। তবে এটা কোনো আন্দোলন হতে পারে না। তারা বলছেন, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবেন না। অথচ এ বিষয়টি সংবিধানে নেই। তবে এখানে একটি বিষয়ে জনগণের চোখ এড়াচ্ছে না। যখন বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করছে তখন আবার জঙ্গিরা হঠাৎ সক্রিয় হয়েছে। এর আগে বাংলাভাইয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। ঝিনাইদহে সে সময় দিনে কেউ বাড়িতে থাকত না। কারণ দিনে সেখানে মানুষ হত্যা করা হতো। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা প্রায় সম্পূর্ণভাবে জঙ্গি নির্মূল করেছিলেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর এগুলো বন্ধ করেছেন। কিন্তু এখন আবার বিএনপি যখন সভা-সমাবেশ করছে তখন জঙ্গিদের সক্রিয় হওয়ার ব্যাপারটি নানা প্রশ্ন তৈরি করছে। আবার এদিকে জামায়াত নাম পরিবর্তন করে নতুন দল গঠন করেছে। নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে।

অনেক সময় অনেকে ষড়যন্ত্রের কথা বলেন। কিন্তু এখন যে সত্যিকার অর্থেই ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেওয়া হয়েছে সেটার প্রমাণ হচ্ছে। তার উদাহরণ হচ্ছে, যারা ফাঁসির আসামি তাদের কীভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসব সন্ত্রাসী যখন আদালতে আনা-নেওয়া হয় তখন আদালতপাড়ায় কেন দু-তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয় না। এটা বোধগম্য নয়। এখন পর্যন্ত তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যারা আমাদের দেশে এসব সন্ত্রাসীকে দমন করবেন তারা কি ভয় পেয়েছেন? এটা তো প্রথম কোনো ঘটনা ছিল না। এর আগেও ঢাকার বাইরে একবার জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। সুতরাং যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের যে দায়িত্ব পালন সেখানে ব্যত্যয় দেখা দিচ্ছে। হয় তারা ভয় পেয়েছেন অথবা নিজ দায়িত্ব কীভাবে পালন করবেন তাদের নেতৃত্বে মনে হয় সংশয় আছে। সুতরাং বিষয়টি সরকারকে খুব গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। একদিকে বিএনপি যখন ঘরের বাইরে এসে সভা-সমিতি করা শুরু করল, লোকজন আসা শুরু করল সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে সন্ত্রাসীরাও যারা বাংলাভাই সৃষ্টি করেছিল তারা বাইরে আসার পরই একের পর এক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে লাগল। এটাই তাদের পলিসি। আমার মনে হয় বিদেশি কূটনীতিকদের এ বিষয়গুলো লক্ষ করা উচিত। কারণ যেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এত ভালো থাকার পর সেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হঠাৎ করেই খারাপের দিকে যাচ্ছে কেন? এটা খুব চিন্তার বিষয়। আমি নিশ্চিতভাবেই জানি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অচিরেই এই জঙ্গিবাদ আবার দমন করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু যারা লাফালাফি করছেন তাদের বুঝতে হবে, এভাবে কোনো দিন কোনো সরকার পরিবর্তন করা যায় না। যেহেতু নির্বাচন সামনে আসছে সুতরাং এখানে আমাদের তথাকথিত সুশীলসমাজ যারা নিজেদের ভাবেন, তারা বিশেষজ্ঞ অর্থাৎ তারা বিশেষভাবে অজ্ঞ। তাদের মূল বিষয় সম্বন্ধে গভীর খাদ আছে। তারা দেশপ্রেমের কথা বলেন; কিন্তু সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নন। কারণ যখনই কোনো ঘটনা ঘটে তখন বলবেন যে, সরকার দেশ চালাতে পারছে না। কিন্তু এর গোড়ায় তারা চোখ দিচ্ছেন না। দেখতে হবে এরা কারা। যাদের ছিনতাই করে নেওয়া হলো তাদের উৎপত্তি কোথায়?

সম্প্রতি বিবিসিতে দিলীপ বড়ুয়া একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। আমার মনে হয়, তিনি হতাশা থেকে এ ধরনের সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। কারণ তিনি একবার মন্ত্রী ছিলেন। প্রকৃত অর্থে তার তো কোনো দল নেই। তার দলে মোট ১ হাজার লোক আছে কি না সন্দেহ। সুতরাং তিনি নির্বাচন করলে ১ হাজার ভোট পাবেন কি না তা-ও একটি প্রশ্ন। তার সঙ্গে চীনের একটি ভালো সম্পর্ক ছিল। এর জন্য খালেদা জিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি একবার চীনে গিয়েছিলেন সম্পর্কোন্নয়ন করার জন্য। দিলীপ বড়ুয়া হয়তো জীবনে কোনো দিন আশাই করেননি এমপি হবেন। সেখানে তিনি মন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর পাঁচ বছর পর যখন তাকে নেওয়া হয়নি তখন তার তো মন খারাপ হবেই। তখন তার ডিপ্রেশন হতে পারে। তার এখন মেডিকেল চিকিৎসা লাগতে পারে। এটা দোষের কিছু নয়। একমাত্র চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়া আর কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না। মনে রাখতে হবে, চীন অনেককে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু তাদের আন্তর্জাতিক পর্যায় আন্তদেশীয় সম্পর্ক নির্ভর করবে তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর। তারা ব্যক্তিবিশেষের ওপর নির্ভর করে কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করে না। এটা কোনো দেশই করে না। ব্যক্তিবিশেষ ইচ্ছা করলে দেশের অনেক কিছু ক্ষতি করতে পারে। কিছু ক্ষতি দিলীপবাবু যে করতে পারেন না, এটা সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য নয়। উনি হয়তো ভাবতে পারেন, তিনি আবার বিএনপির কাছে যাবেন। তিনি সেটা করতে পারেন, কোনো আপত্তি নেই। এতে কারও কিছু আসে যায় না। তবে আমার এখনো বিশ্বাস, দিলীপবাবু নিজে খুব ডিপ্রেশনে ভুগছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে হাসানুল হক ইনুকে লক্ষ করে নয় কিন্তু তার দল সম্বন্ধে এবং দলের বিরুদ্ধে অনেক লেখা লিখেছি। হাসানুল হক ইনু একজন লেখাপড়া জানা রাজনীতিবিদ। কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সঙ্গে কারও তুলনা চলে না। হঠাৎ করে দিলীপবাবু বলে বসলেন, নির্বাচন হবে কি না সন্দেহ। নির্বাচন সঠিক সময়ই হবে এবং দেশে প্রচলিত সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনই হবে এবং দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাও থাকবে। দার্শনিক শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আবার একদম সরাসরি আলাপ-আলোচনা শুরু করছেন। অর্থাৎ এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভিতরে শেখ হাসিনার যে অবস্থান, এ অবস্থানের কাছাকাছি কেউ নেই। কারও ক্ষমতা নেই। সুতরাং সঠিকভাবে নির্বাচন হবে এবং এ নির্বাচনে দার্শনিক শেখ হাসিনা আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। তাঁর দলই সরকার গঠন করবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ষড়যন্ত্র। কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা অনেকে ঘাপটি মেরে আছে। অবশ্যই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের খুঁজে বের করা এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

আমলাদের মধ্যেও অনেকে লুকিয়ে আছে। সেখানে ঠিকমতো হাত দেওয়া হচ্ছে না। কেন করা হচ্ছে না জানি না। শুধু পুলিশের কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হলো আর আমলাদের থেকে মাত্র একজনকে দেওয়া হলো। আরও তো অনেক আছে। আমলাদের মধ্য থেকেও যে ষড়যন্ত্রকারীরা ঘাপটি মেরে বসে আছে এর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এ পদক্ষেপে দেরি করা চলবে না। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে আসলে ওই পদক্ষেপ মূল্যহীন হয়ে যায়। এখন এই সময়ে প্রতিটি জায়গায় সরকারের ভালো করে দেখা প্রয়োজন, কোথায় কোথায় এই ষড়যন্ত্রকারীরা লুকিয়ে আছে। এবং কোথায় কোথায় তারা এসব ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তৃত করেছেন। দিনে সন্ত্রাসী ছিনতাই, বিএনপির সভা-সমাবেশ আবার একই সময়ে দিলীপবাবুর কথা নির্বাচন না-ও হতে পারে। এর সবকিছুর মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না তা-ও ভেবে দেখা প্রয়োজন। কাউকে আলাদা করে দেখার কোনো প্রয়োজন নেই। এখন ১৪ দলকে সংগঠিত করতে হবে। সেখানে দিলীপবাবু যদি থাকতে না চান তাহলে তিনি থাকবেন না। তিনি যদি বিএনপির সঙ্গে যোগ দিতে চান দেবেন। তাতে কারও কোনো ক্ষতি হবে না।

বিশ্বকে বোঝাতে হবে, দার্শনিক শেখ হাসিনা দেশকে শুধু অর্থনৈতিকভাবেই অগ্রসর করছেন না। শেখ হাসিনা বললেন, ২০২৩ সালে বিশ্বের সব জায়গায় খাদ্য সংকট দেখা দেবে। সেই খাদ্য সংকট দেশেও হতে পারে। কিছু ব্যবসায়ী কী করল তারা খাদ্য গুদামজাত শুরু করল, যাতে তারা ২০২৩ সালে বেশি দামে বিক্রি করতে পারে। এগুলো কঠোর হাতে দমন করতে হবে। হঠাৎ করেই কথা উঠল ব্যাংকে টাকা নেই। পৃথিবীর কোথাও এমন ঘটনা ঘটেনি যে, হঠাৎ করেই ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে। এ ধরনের গুজবের বেলায় আওয়ামী লীগের প্রচার কমিটির কোনো ভূমিকাই চোখে পড়ে না। কোনো কমিটি আছে কি না তা-ও সন্দেহ। দার্শনিক শেখ হাসিনার যে কাজ তিনি সেটা করে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা যারা তাঁকে ভালোবাসি, আমরা যারা তাঁর দর্শনকে বিশ্বাস করি, আমাদের তো কিছু দায়িত্ব আছে। সে দায়িত্ব খুবই সহজ। সেই দায়িত্ব হলো, যে কাজগুলো হচ্ছে সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরা, তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেটি আমরা কেন করছি না। যখন রাজনীতিবিদদের বক্তৃতা শুনি তখন আমি অনেকের বক্তব্যে কোনো মিল খুঁজে পাই না। তারা গতানুগতিক কতগুলো কথা বলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর কী কী হয়েছে এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে কী কী করেছে সেগুলো বললেই তো হয়। তারা সেটি করছেন না। প্রতিটি বিষয় জনগণকে বোঝাতে হবে। দেশে এতগুলো মিডিয়া আছে তার পরও কোনো মিডিয়ায় দার্শনিকের কাজগুলো তুলে ধরা হচ্ছে না। অনেক মন্ত্রী টেলিভিশনের অনুমতি নিয়ে পরে সেগুলোর শেয়ার তারা বিক্রি করে দিয়েছেন। হাতেগোনা কয়েকটি টেলিভিশন এবং পত্রিকা শুধু সরকারের ভালো কাজগুলো প্রচার করে থাকে আর অধিকাংশ দার্শনিক শেখ হাসিনার কাজগুলোকে প্রচার করে না।

আমার এটা ভেবে কষ্ট হয়, দার্শনিক শেখ হাসিনা এতগুলো মিডিয়ার অনুমতি দিলেন আর অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বিএনপির মালিকানায় চলে গেল! অথচ তারা বড় বড় কথা বলে দার্শনিক শেখ হাসিনার কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিতে চান। তারা অনেক টেলিভিশনে গিয়ে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলেন ঠিকই কিন্তু দার্শনিক শেখ হাসিনার জন্য যে কাজ করার কথা সেগুলোর কিছুই তারা করেন না। আমরা এখন এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি আমরা যদি এখন সত্যের পূজারি না হই, সত্য কথা না বলি তাহলে আর কবে বলব? দার্শনিক শেখ হাসিনা নিশ্চিত দেশের প্রতিটি অবস্থা বোঝেন এবং সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সুতরাং যে যা-ই করুক না কেন, এতে কোনো লাভ হবে না। কিন্তু আমাদের তো উচিত, আমরা যারা দার্শনিক শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করি, তাঁর দর্শন ধারণ করি, আমরা যেন সেটাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিই।

 

লেখক : সাবেক উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান, বিএমআরসি

ইমেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর