বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চাই সভ্য মানুষ বানানোর ভ্যাকসিন

জীবেন রায়

আমি মনে করি, বর্তমান সময়ে বিশ্ব বাঙালি জনগোষ্ঠীর মুখপত্র বাংলাদেশ প্রতিদিন। সম্পাদক নঈম নিজাম পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গে সঙ্গে কলামও লিখে থাকেন। আমি নিজে একজন কলাম লেখক। একসময় ঢাকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখতাম। যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় ইংরেজি পত্রিকায় লিখে থাকি। এমনকি কলামের ওপর আমার একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদের কলামের মাঝে, আমি প্রয়াত আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ও পীর হাবিবুর রহমান এবং বর্তমান সময়ে নঈম নিজাম এবং তসলিমা নাসরিনের কলাম পড়ি এবং বেশ ভালো লাগে। একসময় তসলিমা নাসরিনের যুক্তিনির্ভর লেখা দারুণ ভালো লাগত। এখনো লাগে।

নঈম নিজাম একজন সফল সম্পাদক। নিয়মিত কলাম লিখেও সফল। ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু টেনে এনে সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় কলাম লিখেন। ভালো লাগে তাই। ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনে, ‘গুজবের দুনিয়াতে বিবেকহীনতার শেষ কোথায়?’ লেখাটিও একই রকমভাবে লেখা।

প্রাকৃতিক নিয়মে মানুষ বয়সের ভারে অথবা অসুখ-বিসুখে না ফেরার দেশে চলে যায় চিরতরে। তবে যারা বেঁচে থাকে তাদেরই শূন্যতা পূরণ করতে হয়। পৃথিবীটা ক্রমান্বয়ে অস্থির হয়ে উঠছে। ছিল দুই সুপার-পাওয়ার-যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন। যুক্তরাষ্ট্র যুক্তই আছে কিন্তু সোভিয়েত ভেঙে খান খান। বড় টুকরা আবার বড় হতে চাচ্ছে। তাই আরেক টুকরা ইউক্রেনকে আক্রমণ করে সারা বিশ্বের গরিব মানুষের খাওয়া না খাওয়ায় অনিশ্চয়তা এবং অশান্তি বাড়িয়ে দিল। বিশ্বের স্থিতিশীলতায় কুড়াল বসিয়ে দিল। হাজার হাজার মানুষ মরছে। কোটি মানুষ শরণার্থী হয়ে গেল। পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে।

ছোট্ট বিষফোঁড়ার মতো দেশ উত্তর কোরিয়া জাপানের আশপাশে ব্যালাস্টিক মিসাইল ছুড়ে পরীক্ষা চালাল। ফলে জাপান প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার বাজেট বাড়িয়ে দিল।

ইরান তার নিজের দেশেই আরও বন্দি হয়ে যাচ্ছে। ইথিক্স পুলিশ বাহিনী তৈরি করে রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে দিল আর পিটিয়ে মারা শুরু করল। হিজাব সমস্যাও ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ হতে লাগল। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে একটার পর একটা ক্যু হতে লাগল। দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারে কটি দেশ। আরমেনিয়া-আজারবাইজানের বর্ডারে গোলাগুলিতে কয়েক শ সৈন্য মারা গেল। আফগানিস্তান, পাকিস্তানে এখনো মসজিদে বোমা ফাটছে। আফগানিস্তানে আবার প্রকাশ্যে ফাঁসি শুরু হলো।

সভ্যতা আর সভ্য মানুষ কাকে বলে? ধর্ম পালন করতে গিয়ে মারামারি, খুনোখুনি কখনই কাম্য নয়। ধর্ম মানুষকে বাঁচায়। মানুষের মৃত্যুটা উপরওয়ালার কাছেই ছেড়ে দেওয়া উচিত।

একটা খেলা সারা বিশ্বকে কেমন একে অপরের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। ইরান-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচও শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে। হ্যান্ডশেক, কোলাকুলিও হয়েছে। দেশ, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ একে অন্যকে মারে না, মারতে পারে না। রাজনীতিই যত নষ্টের মূল।

প্রকৃতিও ক্রমান্বয়ে অসহিঞ্চু হয়ে উঠছে। এই তো কয়েক মাস আগে ফ্লোরিডাতে হারিকেনে কোটি কোটি ডলারের ক্ষতি হলো। কয়েক ডজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাকিস্তানে বন্যা হয়েছে এবং হাজারো মানুষের মৃত্যু হয়। এ বন্যা হয়তো এই প্রথম হলো। গত দুটি বছর কভিডে অস্বাভাবিক অকাল মৃত্যুও মনুষ্য জাতিকে সত্যিকারের মানুষ বানাতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে গান ভায়োলেন্স বেড়েই যাচ্ছে।

দেশে দেশে আর্থিক লুটপাট ক্রমশ বাড়ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে লাগামহীন লুটপাট। ভারতের পশ্চিম বাংলায় ধরা পড়েছে ‘গরু চুরি’ করে কোটি কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান। এমনকি শিক্ষা ক্ষেত্রে ঘুষ খেয়ে খেয়ে টাকা রাখার ঘর উপচে পড়ছে। বাংলাদেশের কথা নাই বললাম। এ জন্য তো নঈম নিজাম এবং তসলিমা নাসরিনই যথেষ্ট। তবে সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন দেশে বেশ কজন সেলিব্রেটি হার্ট অ্যাটাক বা ক্যান্সারে মারা গেছেন। এই তো দুই দিন আগে কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রখ্যাত স্পোর্টস রিপোর্টারের আর্জেন্টিনার খেলা চলাকালে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়। কিন্তু ঘুষখোর, টাকা লুটপাটকারীদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে শুনিনি। বিজ্ঞানীদের কভিড ভ্যাকসিন অল্প সময়ে তৈরি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই অন্যান্য রোগ-শোকে বিশেষ করে ক্যান্সারের ভ্যাকসিন বের হবে। আমি ভাবছি অন্য কথা। সভ্য মানুষ তথা সৎ মানুষ বানানোর ভ্যাকসিন জরুরি।

লেখক : অধ্যাপক, মিসিসিপি ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যান, যুক্তরাষ্ট্র।

সর্বশেষ খবর