রবিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

পিরালী ব্রাহ্মণ রবীন্দ্রনাথ

কলকাতার জোড়া সাঁকোর সুবিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথের জন্ম। সে সময়কার ব্রিটিশ-ভারতের অন্যতম শীর্ষ অভিজাত পরিবার ছিল ঠাকুর পরিবার। এ পরিবারের শেকড় ছিল বাংলাদেশে। রবিঠাকুরের পূর্ব পুরুষের বসবাস ছিল খুলনার রূপসার পিঠাভোগ গ্রামে। সেখানে কুশারী ছিল তাদের বংশীয় পদবি। রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষরা গোঁড়া ব্রাহ্মণদের বৈরী আচরণের শিকার হয়ে পিঠাভোগ গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন। স্থানীয়ভাবে তারা পরিচিত ছিলেন পিরালী ব্রাহ্মণ হিসেবে। বাগেরহাটের সুবিখ্যাত পীর খানজাহান আলীর ভক্ত ছিল পিরালীরা। রবীন্দ্র জীবনীর (প্রথম খণ্ড) লেখক প্রভাত মুখোপাধ্যয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘পীরালী হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন। খুলনার ফুলতলা উপজেলার পায়গ্রাম-কসবায় সুবিখ্যাত পীরালী সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়। ওই এলাকার এক ব্রাহ্মণ পীর খানজাহান আলী (রহ.)-এর কাছে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার নাম রাখা হয় পীর আলী মুহম্মদ তাহের। তিনি বিপুলসংখ্যক নর-নারীকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। যাদেরকে বলা হয় পীর আলী বা পীরালী মুসলমান। হিন্দুদের যে বংশের লোকেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতেন তাদের আত্মীয়স্বজনদের সমাজচ্যুৎ করা হতো। তাদের পীরালী ব্রাহ্মণ, পীরালী কায়স্থ ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করা হতো। রূপসার পিঠাভোগ গ্রামের ব্রাহ্মণ কুশারীদের সঙ্গে ফুলতলার পায়গ্রাম কসবা ও সংলগ্ন দক্ষিণডিহির ব্রাহ্মণদের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। অভিজাত মুসলমানদের মতো পোশাকও পরতেন তারা। পিঠাভোগ গ্রামের কুশারী পরিবার কলকাতায় গিয়ে জোড়াসাঁকোয় আস্তানা গাড়ে। ওই এলাকার জেলেরা তাদের শ্রদ্ধাভরে ডাকত ঠাকুর বলে। সেই সুবাদে কুশারীরা হয়ে যান ঠাকুর পদবিধারী। খুলনার রূপসার পিঠাভোগ গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় যাওয়ার পর কুশারীরা সম্ভবত কখনো আর নিজেদের পূর্ব পুরুষদের ভিটেমাটিতে যাননি। রবীন্দ্রনাথ কিংবা ঠাকুর পরিবারের অন্য কারোর জীবনীতে তার উল্লেখ নেই। তবে রবীন্দ্রনাথ তাঁর বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ, দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথসহ ঠাকুর পরিবারের অনেক সদস্য বিয়ে করেছেন খুলনার দক্ষিণডিহিতে। মনে হয় জোড়াসাঁকোর ঠাকুররা দক্ষিণডিহির সঙ্গে নাড়ির টান অনুভব করতেন। কলকাতায় ঠাকুররা ব্যবসার সূত্রে আবির্ভূত হয় ধনী পরিবার হিসেবে। পরে তারা জমিদারির সঙ্গে যুক্ত হয়। দুই বাংলার বড় জমিদারদের অন্যতম ছিল ঠাকুর পরিবার। বাংলাদেশের শিলাইদহ, পতিসর, শাহজাদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের জমিদারি ছিল। রবীন্দ্রনাথ পরিবারের হয়ে জমিদারি দেখাশোনার সুবাদে জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছেন বাংলাদেশে। সুযোগ পেলেই বজরায় চড়ে পদ্মায় যেতেন নৌভ্রমণে। বাংলাদেশের প্রকৃতি কবিগুরুর হৃদয়কে নিয়ে যেত কাব্যলোকের গহিনে।

অপূর্ব আজাদ

সর্বশেষ খবর