বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিপন্ন কর্ণফুলী

দখল দূষণ রুখতে হবে

দখল ও দূষণে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়লেও তা দেখার কেউ নেই। চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলীর পরিচয় একসূত্রে গাঁথা। দেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর গড়ে উঠেছে এ নদীর পাড়েই। কর্ণফুলী সুরক্ষার ওপর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ভালোমন্দও অনেকাংশে নির্ভরশীল। দেশের অর্থনীতির ফুসফুস হিসেবে বিবেচিত কর্ণফুলী দখল-দূষণে বিপর্যয়কর অবস্থার মুখে পড়লেও তা দেখার কেউ নেই। বাংলাদেশ প্রতিদিনে কর্ণফুলীর হালহকিকতের যে চিত্র প্রকাশিত হয়েছে তাতে পরিবেশপ্রেমী কোনো মানুষ উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। কর্ণফুলী হয়ে উঠেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগর চট্টগ্রামের বর্জ্য ফেলার ভাগাড়। চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় দৈনিক ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্য ২৪৯ টন। এসব বর্জ্যরে মধ্যে সংগ্রহ হয় ১০৯ টন এবং অসংগৃহীত থেকে যায় ১৪০ টন। এই অসংগৃহীত প্লাস্টিক-পলিথিন বর্জ্যরে অধিকাংশই খাল হয়ে পড়ে কর্ণফুলী নদীতে। এ কারণেই চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা, বায়ু ও মাটিদূষণ ঘটছে। নদীতে প্লাস্টিক-পলিথিনের স্তর পড়ে যাচ্ছে। অনুকণা ছড়িয়ে পড়ছে মানুষ, মাছসহ বিভিন্ন প্রাণীর দেহে। কর্ণফুলী নদী রক্ষায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশনা দেন আদালত। কিন্তু তিন বছর আগে টানা পাঁচ দিনের অভিযানের পর থমকে আছে উচ্ছেদ। নদী রক্ষা কমিশন কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নির্দেশনা দিলেও কোনো উদ্যোগেই কাজ হচ্ছে না। এখন নদীর দুই পাড়ের ৩ শতাধিক শিল্প-কারখানা, বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালি বর্জ্য এবং প্লাস্টিক পণ্যের ভাগাড় কর্ণফুলী। পক্ষান্তরে কর্ণফুলী নদীতে ৮৫টি মার্চেন্ট জাহাজ, ৪০৫টি কোস্টার জাহাজ, ২৬৪টি মাছ ধরার ট্রলার, ৯টি টাগ নৌকাসহ সাম্পান, ছোট ছোট নৌকা, বিদেশি জাহাজ ও ট্রলার চলাচল করে। এসব নৌযানের ময়লা, পোড়া তেল সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে কর্ণফুলীর পানি বিবর্ণ হয়ে উঠছে। বিপন্ন হচ্ছে এ নদীর জীববৈচিত্র্য। দখল-দূষণে কর্ণফুলীর হতশ্রী অবস্থা কোনো বিচ্ছিন্ন চিত্র নয়। এটি দেশের নদ-নদীর একটি সাধারণ চিত্র। নদী বাঁচাতে এ বিষয়ে প্রশাসনকে সক্রিয় হতে হবে। জনমত গড়ে তুলতে হবে নদী রক্ষায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর