শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

মিজানের পাল্লায় সবকিছু হিসাব করা হবে...

মো. আমিনুল ইসলাম

মিজানের পাল্লায় সবকিছু হিসাব করা হবে...

আমাদের এই জীবনে আমরা যা কিছুই করি না কেন পরকালে তার হিসাব হবে। তিল পরিমাণ ভালো ও মন্দ কাজের হিসাব করে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে বুঝিয়ে দেবেন। পৃথিবীতে যে ভালো কাজ করবে সে তার জন্য ভালো প্রতিদান পাবে আর যে মন্দ কাজ করবে তার জন্য প্রতিদান শাস্তি ভোগ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের জন্য দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করব। অতঃপর সেদিন কারও ওপরই কোনো রকম জুলুম করা হবে না। যদি একটি শস্য দানা পরিমাণ কোনো আমলও থাকে হিসাবের সময় তাকে আমি যথার্থই এনে হাজির করব, হিসাব নেওয়ার জন্য আমিই যথেষ্ট।’ (সুরা আল আম্বিয়া, আয়াত ৪৭)। আল্লাহ আরও বলেন, অতঃপর যার ওজনের পাল্লা সেদিন ভারী হবে, সে অনন্তকাল ধরে সুখের জীবন লাভ করবে। আর যার ওজনের পাল্লা হালকা হবে, হাবিয়া দোজখই হবে তার ঠিকানা। (সুরা আল কারিয়াহ, আয়াত ৬-৯)। মানুষের জীবনের সব কার‌্যাবলি দুই ভাগে বিভক্ত করা হবে। একটি সৎকাজ আর অন্যটি অসৎ বা নেতিবাচক কাজ। যা কোরআন হাদিস দ্বারা নিষেধ করা হয়েছে। যারা সৎ ও কোরআন হাদিসের আলোকে জীবন পরিচালনা করেছেন সেদিন তারাই হবেন সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। তারাই সফলকাম। তাদের আমলই তুলাদণ্ড বা দাঁড়িপাল্লায় ওজনদার হবে এবং তারাই জান্নাতি বান্দা। আর অন্যদিকে সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যারা নফসের তাড়নায় এবং শয়তানের প্ররোচনায় অসত্য পথে জীবন পরিচালিত করেছে তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি। তুলাদণ্ডে তাদের আমল মূল্যহীন বা বদ আমল হিসেবে বিবেচিত হবে। তারা হবেন সেদিন জাহান্নামি। হজরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রসুল (সা.) বলেন, বিচারের দিন আমার উম্মতের এক ব্যক্তিকে আল্লাহ কাছে ডেকে তার কৃতকর্মের নিরানব্বইটি আমলনামা পেশ করবেন যার একেকটির পরিধি হবে একজন সুস্থ ব্যক্তির চোখের দৃষ্টিসীমার সমান। তাকে বলা হবে এই বইয়ে (আমলনামায়) যা কিছু লেখা রয়েছে তা কি তুমি অস্বীকার কর? উত্তরে ওই ব্যক্তি বলবে, হে আমার রব, আমি তা অস্বীকার করি না। তারপর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমার কোনো নেক কাজ বা আমল আছে কি? তখন ওই ব্যক্তি ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় বলবে, না রাব্বুল আলামিন। আমার তাও নেই। অতঃপর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে আশ্বস্ত করে একটি চিরকুট বের করে বলবেন, এতে লেখা আছে আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ। তখন ওই ব্যক্তি অবাক বিস্ময়ের সঙ্গে বলবে, হে আমার রব এই সামান্য চিরকুট কী ওই নিরানব্বইটি বইয়ের সমান হবে? তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলবেন, তোমার ওপর কোনো রকম অবিচার আজ করা হবে না। এরপর ওই নিরানব্বইটি পুস্তক মিজানের এক পাল্লায় আর চিরকুটটি অন্য পাল্লায় রাখা হবে। তখন নিরানব্বইটি পুস্তকের তুলনায় কলেমা লেখা চিরকুটটির ওজন বেশি হবে এবং পুস্তকগুলোর ওজন অত্যন্ত কম হবে। (তিরমিজি শরিফ)। সুবহানাল্লাহ। এই হাদিসটিতে এটাই প্রতীয়মান হলো যে, আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি অগাধ বিশ্বাস একজন পাপীকে বদ আমল করার পরও তাকে কেয়ামতের কঠিন দিনে রক্ষা করতে পারে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো কোন কাজ অধিকাংশ লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তিনি উত্তরে বললেন, কেয়ামতের দিন যে জিনিসটি মুমিনের পাল্লায় সবচেয়ে ভারী হবে তা হলো তাকওয়া ও উত্তম চরিত্র। (তিরমিজি শরিফ, ২০০৪)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, আল্লাহ কারও ওপর এক বিন্দু পরিমাণও জুলুম করেন না বরং তিনি এত দয়ালু যে নেকির কাজ যদি একটি হয় তবে তিনি তার পরিমাণ দ্বিগুণ করে দেন এবং তিনি নিজ থেকেও বড় পুরস্কার দান করেন। (সুরা নিসা, আয়াত ৪০)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে বেশি বেশি করে নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। যাতে মিজানের পাল্লায় আমাদের নেক আমলগুলোর ওজন মন্দ কাজের তুলনায় ভারী হয়।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার

সর্বশেষ খবর