বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

পবিত্র মেরাজের অসামান্য তাৎপর্য

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

পবিত্র মেরাজের অসামান্য তাৎপর্য

মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত জীবনের অন্যতম একটি অলোচিত ঘটনা হলো মেরাজ। নবীকুলের মধ্যে একমাত্র মুহাম্মদ (সা.)-এর বৈশিষ্ট্য এ মেরাজ। মক্কা নগরী থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণ ‘ইসরা’ এবং মসজিদে আকসা থেকে সপ্তম আকাশে বায়তুল মামুর, এরপর সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত ও পরবর্তী ঊর্ধ্বগমন ইসলামি ইতিহাসে মেরাজ হিসেবে পরিচিত। প্রসিদ্ধ বর্ণনামতে, হিজরি মাস রজবের ২৭ তারিখে নবুয়তের ১২তম বর্ষে এ মেরাজ সংঘটিত হয়। পবিত্র কোরআনে ও সহি হাদিসে মেরাজের ঘটনা সবিস্তার বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম (মক্কা) থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ১) তাফসিরে ইবনে কাসির এবং অন্যান্য বিশিষ্ট তাফসির গ্রন্থে মেরাজের ঘটনা সংক্ষেপে এভাবে উল্লিখিত হয়েছে, একদা রাতের বেলায় রসুলুল্লাহ (সা.) উম্মে হানি (রা.) বিনতে আবি তালিবের ঘরে ছিলেন। এ অবস্থায় বিস্ময়করভাবে ঘরের ছাদ ফেটে যায় এবং ছাদপথে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) প্রবেশ করেন। সঙ্গে আরও কিছু ফেরেশতা ছিলেন। তারা রসুলুল্লাহ (সা.)-কে ঘুম থেকে জাগিয়ে হারাম শরিফে হাতিমে কাবায় নিয়ে আসেন। রসুল (সা.) হাতিমে কাবায় আবার ঘুমিয়ে যান।

তাঁকে পুনরায় জাগিয়ে জমজম কূপের পাশে নিয়ে তাঁর বক্ষ বিদীর্ণ করে জমজমের পানি দ্বারা ফেরেশতারা তাঁর বক্ষ ধৌত করেন। এরপর তাঁকে ‘বোরাক’ নামক একটি অতি দ্রুতগামী বাহনে আরোহণ করিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখে যাত্রা করেন। যাত্রাপথে ইয়াসরিব (মদিনা) নগরীতে পৌঁছালে জিবরাইল (আ.) রসুলুল্লাহ (সা.)-কে এর পরিচয় প্রদান করেন। তিনি সেখানে অবতরণ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন।  পথে মুসা (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত ‘তুর’ পাহাড় এবং ইসা (আ.)-এর জন্মস্থান ‘বায়তুল লাহম’ ফিলিস্তিনে অবতরণ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। এরপর তিনি জিবরাইল (আ.)-সহ ঊর্ধ্বাকাশে যাত্রা করেন। মুহূর্তেই প্রথম আকাশের প্রবেশদ্বারে পৌঁছালে সেখানে নবী আদম (আ.) তাঁকে অভ্যর্থনা জনান। এভাবে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত প্রত্যেক আকাশে আগমনকালে নবীদের বিভিন্ন জামাত তাঁকে অভ্যর্থনা জানায়। এরপর মহানবী (সা.) ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ পৌঁছেন। এরপর তিনি আরও ঊর্ধ্বগমন অব্যাহত রাখেন। এমনকি ‘লাওহে মাহফুজে’ ভাগ্যলিপি লেখার কলম পরিচালনার শব্দ শুনতে পান। এরপর রসুল (সা.) আল্লাহর নিবিড় সান্নিধ্য, দিদার ও আলাপ- আলোচনার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ওই মেরাজ ভ্রমণে মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উপহার নিয়ে আসেন। (সিরাতে মোস্তফা, ইদ্রিস কান্ধলভি) রজব একটি বরকতময় মাস। রসুল (সা.) রজব ও শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন ও নফল ইবাদত পালন করতেন।

তিনি রজবের শুরুতে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবানে আমাদের জন্য বরকত দান করেন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (মুসনাদে আহমাদ, ১/২৫৯) রজব ও শাবানে রোজা, নামাজ ও অন্যান্য আমলের প্রতি গভীর মনোনিবেশ করা সমীচীন।

তবে মেরাজ উপলক্ষে এ মাসে রাতে বা দিনে নির্ধারিত কোনো আমল নেই। তাই প্রচলিত কুসংস্কার পরিহার করাও অতি জরুরি।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা

সর্বশেষ খবর