সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন শেখ হাসিনা

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন শেখ হাসিনা

বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা আমেরিকার ব্লুমবার্গ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা এবং বিগত ১৪ বছর বাংলাদেশকে বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের তালিকার মধ্যে ধরে রাখতে পারার ফলেই শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে জয়ী হবে বলে ব্লুমবার্গের বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনটি গতানুগতিক নয়, এর ভিন্নমাত্রা রয়েছে। আমেরিকার অন্যতম ধনকুবের মাইকেল ব্লুমবার্গ এটি ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ডেমোক্র্যাটিক দলের খুবই প্রভাবশালী একজন নেতা। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক পর্বে তিনি ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। কিন্তু বাছাই পর্বের শেষ দিকে এসে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমর্থনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন এবং তার ফলেই অপর শক্তিশালী প্রতিযোগী বার্নি স্যান্ডার্সকে পরাজিত করে বাইডেন ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন পান। সুতরাং বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের ওপর মাইকেল ব্লুমবার্গের যথেষ্ট প্রভাব থাকবে-সেটাই ধরে নেওয়া যায়। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনটি যখন বের হয় তখন প্রায় একই সময়ে আমেরিকার প্রতিনিধি পরিষদের নিম্নকক্ষ কংগ্রেসে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির বিষয়ে ব্যাপক প্রশংসা সংবলিত একটি প্রস্তাব পাস হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদন, দারিদ্র্য হ্রাস, উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ প্রশমনসহ আর্থ-সামাজিক খাতে যত দ্রুত এগিয়েছে তা এখন বিশ্বের জন্য এক রোল মডেল। ১৯৭১ সালে দেশটি যখন স্বাধীন হয় তখন দেশজ অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ৯ বিলিয়ন ডলার। তারপর ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছরে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ৭১.৮ বিলিয়ন ডলারে। আর শেখ হাসিনার টানা ১৪ বছরের শাসনের মাথায় এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৪৫০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ১৪ বছরে অর্থনীতির আকার ৩৮৮.২ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিগত ৩৫ বছরের মোট অর্থনীতির পরিমাণের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ বেশি। ৩৫ বছরে যা সম্ভব হয়নি, ১৪ বছরে তার থেকে অনেক বেশি সম্ভব হয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সফলভাবে উগ্রবাদ দমন এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বিগত সময়ে ধর্মান্ধতা ও উগ্রবাদের পশ্চাৎপদ যে পথে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছিল, শেখ হাসিনা তার লাগাম টেনে ধরতে পারায় প্রগতি ও আধুনিকতার পথে বাংলাদেশ ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছে। এখন আর কেউ বাংলাদেশকে পরবর্তী আফগানিস্তান বলতে পারে না। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিব অনুসৃত পথে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে পারার কারণেই বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের আকর্ষণীয় স্থান এখন বাংলাদেশ। কংগ্রেসের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ফলেই দেশটির জনগণ বন্দুকের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পরিবর্তে আইনের শাসনের প্রতি সমর্থন বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন এবং কংগ্রেসের প্রস্তাবের সঙ্গে আরও দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে, আর তা হলো ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দন বার্তায় আগের থেকে কিছুটা ব্যতিক্রমভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রায় একইরকম প্রশংসা এবং বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বব্যাংক সদর দফতর ওয়াশিংটন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা আলাদা হলেও এর মধ্যে একটা পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে এবং আগামী দিনে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে তার একটা পূর্বাভাস ফুটে উঠেছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিনন্দন বার্তাটি শেষ করেছেন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে, যে স্লোগানটি ছিল একাত্তরে যুদ্ধের মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের রণধ্বনি এবং যুদ্ধজয়ের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। যে জয় বাংলা স্লোগান বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মিত্রদের জন্য পাকিস্তানের মতোই গাত্রদাহ সৃষ্টি হয়, সেই স্লোগান মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখে উচ্চারিত হওয়া মানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য সেটি বড় রকম তাৎপর্য বহন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন অভিনন্দন বার্তায় বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নেতৃস্থানীয় জায়গায় পৌঁছেছে, এটারও ভিন্ন মাত্রা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের আমন্ত্রণ সম্পর্কে বলতে হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে একটি স্বাধীন প্রভাবশালী সংস্থা হলেও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে হোয়াইট হাউস ও মার্কিন প্রশাসনের নিবিড় সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। বিশ্বব্যাংক বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কাজ করে, যে ক্ষেত্রে গত ১৪ বছর বাংলাদেশে প্রতি বছর গড় দারিদ্র্যের হার কমেছে শতকরা প্রায় ১.৭ ভাগ হারে, যা এ সময়ের জন্য বিশ্ব রেকর্ড। এই যে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থা থেকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা তা হঠাৎ করে ঘটেনি। ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশের অগ্রগতির একটা সারাংশ এখন বৈশ্বিক অঙ্গন থেকে প্রকাশিত হচ্ছে মাত্র। ২০০৯ সালে বিশাল জনম্যান্ডেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নতুন বাংলাদেশ গড়ার যাত্রা শুরু করেন, তখন দেশের অভ্যন্তরে ভয়াবহ বিদ্যুৎ ঘাটতি, খাদ্য ঘাটতি, উত্তরবঙ্গের মঙ্গা, কৃষক সার পাচ্ছে না, জঙ্গি-সন্ত্রাসের চরম উত্থান ও বিস্তারসহ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে মানুষ দিশাহারা, তার মধ্যে সরকারের যাত্রার শুরুতে ঘটিয়ে দেওয়া হলো পিলখানার হত্যাকান্ড। কিন্তু বাবার মতো দুর্দান্ত রাজনৈতিক সাহস, সততা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার গুণে তিনি বাংলাদেশকে এক মর্যাদার জায়গায় এনেছেন। যার ফলে বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশ আজ উজ্জ্বল এক সম্ভাবনার নাম। বৈশ্বিক অঙ্গনে তরুণ প্রজন্ম এখন গর্ব করে বলতে পারে, আমরা বাংলাদেশের মানুষ। কিন্তু বাংলাদেশের অগ্রায়ণের পথ এখনো মোটেই কণ্টকবিহীন নয়। চলমান সমৃদ্ধিকে অব্যাহত রাখার পথে মোটাদাগে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথমটি রাজনৈতিক, দ্বিতীয়টি প্রশাসনিক এবং তৃতীয়টি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ। একটি একটি করে আলোচনা করি। রাজনীতির ক্ষেত্রে স্বাধীনতার ৫২ বছরের মাথায় এসেও উন্নয়ন ও অগ্রগতির মূলমন্ত্রই শুধু নয়, বাংলাদেশের অস্তিত্ব যার ওপর নির্ভরশীল সেই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও দর্শন রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে সুপ্রতিষ্ঠিত হোক তা রাজনীতির বড় এক পক্ষ বিএনপি কিছুতেই হতে দিতে চায় না। বিএনপির জন্মসূত্র, জামায়াত-মুসলিম লীগসহ একাত্তরের দেশীয় পরাজিত সব পক্ষের সঙ্গে বিএনপির হরিহর আত্মার সম্পর্ক, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির ২৩ বছরের গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের সব কিছুকে অবজ্ঞা ও আড়াল করা, জাতির পিতা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও মুজিবনগর সরকারকে অস্বীকার করা, বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রত্যাখ্যান, পাকিস্তানের মতোই চরম ভারতবিরোধিতা ইত্যাদি সবকিছু প্রমাণ করে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের দর্শন ও আদর্শের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোর বিরোধী। রাজনীতিতে এটাই আওয়ামী লীগ ভার্সেস বিএনপির রাজনীতির মৌলিক দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষের জায়গা। বিএনপির উপরোক্ত অবস্থানের কারণে মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগ আজ সমার্থক হয়ে গেছে, আওয়ামী লীগ না থাকলে জাতির পিতা, স্বাধীনতা, মুক্তিযোদ্ধা কেউ থাকে না। ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত জামায়াতি দলের মন্ত্রীরা যখন বলে একাত্তরে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, তখন আমার উপরোক্ত কথার যথার্থতা বাস্তবে প্রমাণিত হয়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সক্ষমতা ও দুর্বলতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসির (এনইডি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট ২০১৫ সালে বড় একটা গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেটি সে বছর ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের দৈনিকসমূহে ছাপা হয়। মোট ৯টি সূচকে দুই দলের তুলনামূলক একটা চিত্র তুলে ধরা হয়। ৯টি সূচকের সবগুলোতে সক্ষমতার বিবেচনায় বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগ অনেক এগিয়ে রয়েছে। দু-একটি সূচকের পরিসংখ্যান এখানে উল্লেখ করি। বাংলাদেশের শতকরা ৫৪ ভাগ মানুষ মনে করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব অধিকতর যোগ্য ও শক্তিশালী এই সূচকে বিএনপির নেতৃত্বের কথা বলেছে, শতকরা মাত্র ২২ ভাগ মানুষ।

যুবসমাজের সমর্থন, নারীবান্ধব, বিশ্বাসযোগ্যতা, ভালো নীতিমালা ও গরিববান্ধব সূচকগুলোতে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগ গড়ে ২০ থেকে ২২ পয়েন্টে এগিয়ে আছে। এর পরও রাজনীতির মাঠে একটি বড় পক্ষ হিসেবে বিএনপি কেন টিকে আছে তার দু-একটি কারণ উল্লেখ করি। একাত্তরে শতকরা প্রায় ২৫-৩০ ভাগ মানুষ স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য, এদের উত্তরসূরিরা সবাই পূর্বসূরিদের মতো এখনো মুক্তিযুদ্ধ ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবকিছুর চরম বিরোধী। সুতরাং আজ ১৭ কোটি মানুষের দেশে সংখ্যার বিবেচনায় তারা এখন ভয়ংকর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী এক গোষ্ঠী। এরাই বিএনপির বড় খুঁটি ও অবলম্বন। দ্বিতীয়ত, সব তথাকথিত নিরপেক্ষ সুশীল নামধারী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থের কারণে আওয়ামী লীগের চেয়েও প্রচন্ড শেখ হাসিনাবিরোধী। এর সুবিধাও পাচ্ছে বিএনপি। তৃতীয়ত, বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির বড় খেলোয়াড়রা নিজ নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একটা ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতিতে থাকায় এবং তাতে বাবার মতো শেখ হাসিনার জাতীয় স্বার্থে আপসহীন হওয়ায় এর কিছুটা সুবিধা স্বাভাবিকভাবেই বিএনপি পাচ্ছে। চতুর্থত, এবং আমি মনে করি এটাই বড় কারণ যে, আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা সবার নানামুখী দুর্বলতা এবং বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় দর্শন ত্যাগের আদর্শের জায়গায় বড় বিচ্যুতি ঘটায় বিএনপি মানুষের কাছে গিয়ে দাঁড়াতে পারছে। তবে বিশেষ করে ২০০১-০৬ মেয়াদে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার কারণে মন্দের ভালো হয়েছে এই জিয়া-উত্তর নব্য বিএনপির নেতৃত্বের চরম দুর্নীতিপরায়ণতা ও সীমাহীন ব্যর্থতার চিত্রটি দেশে-বিদেশে সবার কাছে উন্মোচিত হয়েছে।

২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের একটি প্রধান দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রধান শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্রে তারেককে নিষিদ্ধ সম্পর্কিত একটি বড় প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, মার্কিন প্রশাসন তারেক রহমান সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করে, যাকে এখন বিএনপি টপ লিডার মনে করে। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে একটি গোপন বার্তা যায়, যেটি পরবর্তীতে উইকিলিকসের মাধ্যমে জনসম্মুখে চলে আসে। ওই বার্তায় ২০০৬ সালে টানা চারবারের মতো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তালিকায় বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ রয়েছে, সে কথা উল্লেখসহ তারেক রহমানকে কুখ্যাত অভিহিত করে দুর্নীতিপ্রবণ সরকার এবং বাংলাদেশের সহিংস রাজনীতির এক দৃষ্টান্ত বলে আখ্যায়িত করা হয়। বার্তায় আরও বলা হয়, তারেক রহমানের কার্যকলাপের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা এবং বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্য বিনষ্ট হওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সুতরাং ব্লুমবার্গ সম্প্রতি যে প্রতিবেদন বের করেছে এবং টপ মার্কিন প্রশাসনের যে বার্তা সেটি হঠাৎ করে হয়নি, গত ১৪ বছর আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনার পর্যালোচনার সঙ্গে বিগত দিনে বিএনপির ক্ষমতাকালীন একটি নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। দেশের ভিতর ও বাইরের জরিপ, গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দেশের স্বার্থে আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি নয়। তবে এসব দেখে আওয়ামী লীগের জন্য আত্মতুষ্টিতে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। তাদের ১৯৯১ সালের নির্বাচনের কথা মনে রাখতে হবে। ১৪-১৫ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকায় যৌক্তিক-অযৌক্তিক কারণে অনেক ব্যক্তি, পক্ষ ও গোষ্ঠীর অসন্তুষ্টি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যাবে। জেলা- উপজেলা পর্যায়ে বহু জামায়াত-বিএনপি দলে ঢুকে পড়ায় মনোনয়ন নিয়ে দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব মেটানো হবে আওয়ামী লীগের জন্য বড় আরেক চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া পরীক্ষিত, জনসম্পর্কিত ও এলাকায় সর্বক্ষণ অবস্থানকারী স্থানীয় নেতারা মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগের বিজয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তবে শেষ কথা হলো, ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনই চূড়ান্ত কথা নয়। বাইরের তো রয়েছেই। দলের ভিতর থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা ও দক্ষতাই হবে নির্বাচনী ফল নির্ধারণের মূল অনুঘটক।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

[email protected]

সর্বশেষ খবর