সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

রোজাদারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

রোজাদারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাসায়েল

মহান রব্বুল আলামিন কোরআন মাজিদে ইরশাদ করেন : হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য ফরজ করা হয়েছিল, যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সুরা বাকারা)। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষার ঢালস্বরূপ। (আল হাদিস)। তাই রোজার ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞাতব্য বিষয় জানা জরুরি। রোজা অবস্থায় বিনা ওজরে কোনো কিছুর স্বাদ গ্রহণ করা ও চিবানো মাকরুহ। তবে কোনো রোজাদার মহিলার স্বামী যদি বদমেজাজি হয় এবং রান্না করা খাবারে অতিরিক্ত দোষ তালাশ করে, তাহলে ওই মহিলার জন্য খাবারের স্বাদ জিহ্বা দ্বারা পরীক্ষা করে নেওয়া মাকরুহ নয়। অনুরূপভাবে অনন্যোপায় হয়ে শিশুর খাদ্য চিবিয়ে দিলে রোজা মাকরুহ হবে না। প্রস্রাব বা পায়খানা করার পর ইস্তিঞ্জারের সময় অধিক মাত্রায় পানির ব্যবহার রোজাদারের জন্য মাকরুহ। অজুু-গোসল করার সময় কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়ার সময় এমনভাবে পানি ব্যবহার করা যে, পানি ভিতরে প্রবেশ করার সমূহ আশঙ্কা হয়, এভাবে করাও মাকরুহ। রোজা অবস্থায় পানিতে বায়ু নিঃসরণ করা মাকরুহ। রোজা অবস্থায় ইচ্ছাপূর্বক মুখে থুতু জমা করে তা গিলে ফেলা মাকরুহ। রোজাদারের জন্য স্বাদযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা মাকরুহ। তবে মিসওয়াক করা জায়েজ এবং উত্তম। এতে রোজার কোনো ক্ষতি নেই। চোখে সুরমা লাগানো এবং গোঁফে তেল মাখা রোজাদারের জন্য মাকরুহ নয়। এমনভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার যদি আশঙ্কা না হয়, যার ফলে রোজা ভঙ্গ করতে হয়, তবে এরূপ ব্যক্তির জন্য শরীরে শিঙা লাগানো জায়েজ। তবে রোজা ভঙ্গ করার মতো দুর্বলতার আশঙ্কা হলে শিঙা লাগানো মাকরুহ। যদি কোনো রোজাদার ব্যক্তি নিজের ওপর এরূপ আত্মবিশ্বাসী হয় যে স্ত্রীকে চুম্বন করলে বীর্য নির্গত হবে না বা সহবাসের প্রতি আসক্ত হবে না, তবে এরূপ রোজাদারের জন্য স্ত্রীকে চুম্বন করা মাকরুহ নয়। অন্যথায় মাকরুহ। অনুরূপ হুকুম হলো স্পর্শ করার।

দিনের বেলায় স্বপ্নদোষ হলে রোজার কোনো ক্ষতি নেই। সন্দেহের সময় পর্যন্ত বিলম্ব করে সাহরি খাওয়া মাকরুহ। সাওমে বিসাল মাকরুহ। সাওমে বিসাল হলো সাহরি ও ইফতার গ্রহণ ছাড়া একাধিক দিনের রোজা রাখা। তবে সাওমে দাউদি অর্থাৎ একদিন বিরতি দিয়ে একদিন রোজা রাখা উত্তম। রোজা রেখে কথাবার্তা পরিত্যাগ করা মাকরুহ। স্বামীর প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তার অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর জন্য নফল রোজা রাখা মাকরুহ। রোজায় ভীষণ কষ্ট হলে মুসাফিরের জন্য রোজা রাখা মাকরুহ। তবে কোনো প্রকার কষ্ট না হলে তার জন্য রোজা রাখাই উত্তম। হজব্রত পালনকারী ব্যক্তি রোজা রাখলে দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা হলে, আরাফা ও তার আগের দিন রোজা রাখা মাকরুহ। হজরত ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.) এর মতে, প্রচন্ড গরমে রোজা অবস্থায় মুখে পানি নিয়ে বারবার কুলি করা, মাথায় পানি ঢালা এবং ভিজা কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখা মাকরুহ। কয়লা, মাজন ও টুথপেস্ট দ্বারা দাঁত মাজা মাকরুহ। মাজনের সামান্য কিছু অংশ গলার ভিতর চলে গেলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। অসুস্থ ব্যক্তি যদি রোজা রাখার কারণে কোনো শারীরিক গুরুতর ক্ষতি বা মৃত্যুর আশঙ্কা বোধ করে তবে এ অবস্থায় রোজা রাখবে না বরং সুস্থ হওয়ার পর তা কাজা করবে।

তবে শুধু মনের ধারণায় রোজা রাখা ত্যাগ করা দুরস্থ নয়। বরং যখন কোনো দীনদার ডাক্তার বলবে যে, রোজা রাখলে শারীরিক ক্ষতি হবে অথবা নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতা কিংবা কোনো লক্ষণ দ্বারা প্রবল ধারণা জন্মে যে রোজা রাখলে ক্ষতি হবে, তার জন্য রোজা রাখা ত্যাগ করা যাবে। গর্ভবতী মহিলা এবং স্তন্যদানকারী মহিলা যদি নিজের প্রাণের কিংবা সন্তানের ব্যাপারে শঙ্কিত হয় তাহলে রোজা না রাখা জায়েজ, তবে পরে তা কাজা করে নেবে। মহিলাদের হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় রোজা রাখা জায়েজ নয়। রাতে হায়েজ ও নেফাস হতে পবিত্রতা লাভ করলে, গোসল না করলেও পরবর্তী দিনের রোজা রাখবে। সুবহে সাদিকের পর ঋতু বন্ধ হলে ওই দিনের রোজা রাখবে না, তবে পানাহার থেকে বিরত থাকবে। কেউ দিনের বেলায় মুসলমান হলে কিংবা সাবালিক হলে তার ওপর ওই দিনের রোজা ফরজ নয়, তবে দিনের বেলা পানাহার করা থেকে তারা বিরত থাকবে। অতি বৃদ্ধ হওয়ার কারণে যে ব্যক্তি রোজা রাখতে অক্ষম, তার জন্য রোজা না রাখা জায়েজ। তবে প্রতিটি রোজার বিনিময়ে তিনি মিসকিনকে সদকায়ে ফিতর পরিমাণ খাদ্য প্রদান করবেন। অথবা দুই বেলা পেট ভরে খানা খাওয়াবেন।

তবে খাদ্য দেওয়ার পরিবর্তে এর মূল্য দেওয়াও জায়েজ। সাপে দংশন করলে ওষুধ খাওয়ার জন্য রোজা ভেঙে ফেলা জায়েজ। অনুরূপভাবে অ্যাক্সিডেন্ট করা, অসুস্থ হয়ে যাওয়া, আগুনে পুড়ে যাওয়া ইত্যাদি ভয়ংকর ও প্রাণনাশক কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে যাওয়া, যার ফলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ও ওষুধ সেবন করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে- এ অবস্থায় রোজা ভেঙে ফেলা জায়েজ। তবে পরবর্তীতে শুধু কাজা করে নেবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক

ইমাম ও খতিব : কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা

সর্বশেষ খবর