সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

মানবজাতির গাইডলাইন আল কোরআন

মুহাম্মদ আশরাফ আলী

মাহে রমজানে নাজিল হয়েছে মানবজাতির গাইডলাইন আল কোরআন। আল্লাহর অসীম দয়া, ক্ষমা ও পাপমুক্তির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয় বলেই এ মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। রমজান হচ্ছে সিয়াম সাধনা, তারাবি, কোরআন তিলাওয়াত তথা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ মৌসুম। রোজা মানুষের অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এর নাম ‘রমজান’। রমজানের দহনে সিয়ামসাধক গুনাহমুক্ত হয়ে ফেরেশতাসুলভ জান্নাতি মানুষে পরিণত হয়।

রোজা শব্দটি ফারসি : যা আমাদের দেশে বহুল পরিচিত। এর আরবি হলো সিয়াম। যার অর্থ বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকার নামই রোজা। কারণ রোজাদারকে পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি যাবতীয় গুনাহ থেকেও বিরত থাকতে হয়। সব ধরনের অন্যায় ও পাপাচার থেকে দূরে থাকতে হয়। এ প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রাখার পরও মিথ্যা বলা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে না তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ বুখারি। রমজানে বান্দা শুধু আল্লাহর নির্দেশ পালনে খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকে। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের যাবতীয় জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত ও সংযমী বান্দা হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পরহেজগারির শীর্ষচূড়ায় আরোহণ করাই মাহে রমজানের মূল আবেদন। এ ব্যাপারে আল্লাহর বাণী, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যে-রূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার।’ সুরা বাকারা আয়াত ১৮৩। এ মাসে মানবজাতির গাইডলাইন আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘রমজান হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে সে এ মাসের রোজা রাখবে।’ সুরা বাকারা আয়াত ১৮৫। আল কোরআনে আল্লাহ রোজার উপকারিতা সম্পর্কে বলেছেন, ‘তোমরা যদি রোজা রাখ, তবে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণকর।’ সুরা বাকারা আয়াত ১৮৪।  রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন, ‘রোজা রাখ, সুস্থ থাকবে’। তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমাদের প্রতি একটি মহান মুবারক মাস ছায়া ফেলেছে। এ মাসে সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনী আছে। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নেক আমল দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য আশা করে সে যেন অন্য সময়ে কোনো ফরজ আদায়ের মতো কাজ করল। আর এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো ফরজ আদায় করে সে যেন অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায়ের নেকি লাভের সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস আর সংযমের পুরস্কার হচ্ছে জান্নাত।’ মিশকাত।

লেখক :  ইসলামবিষয়ক গবেষক

সর্বশেষ খবর