শুক্রবার, ১২ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন আপন কাজে

আবদুল্লাহ আল মামুন আশরাফী

দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন আপন কাজে

আমরা মানুষ। মানুষ হিসেবে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। সে সুবাদে বিভিন্ন কাজে আমরা আত্মনিয়োগ করে জীবিকা নির্বাহের পথে এগিয়ে যাই। হারাম থেকে বেঁচে হালাল পন্থায় যে কোনো কাজে জড়িয়ে জীবিকা নির্বাহের পথ ইসলামে অবারিত। তবে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে নিজের কাজ করে যেতে ইসলাম নির্দেশনা দেয়। বিশেষত নিজের ওপর যখন কোনো কাজ বা দায়িত্ব বর্তায় তখন উপযুক্ত শ্রম বিনিয়োগ বা কাজ সম্পাদন না করে অবহেলা বা ফাঁকিবাজি করা ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই নিন্দনীয় এবং অপরাধযোগ্য হিসেবে বিবেচিত। প্রতিটি দায়িত্বই একটি আমানত। আর আমানতের যথার্থ হক আদায় করা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা। পক্ষান্তরে দায়িত্ব পালন না করে অবহেলা প্রদর্শন সে আমানত খেয়ানতের নামান্তর।

কর্মক্ষেত্রে আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব- যা নিঃসন্দেহে আমানত- যথাযথ পালন করা ইমানের অনন্য বৈশিষ্ট্য। একজন মুমিনের দ্বারা কখনো আমানতের খেয়ানত হবে এটা অকল্পনীয়। কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা সফল মুমিনের পরিচয় উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, “(মুমিনদের অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে” (সুরা মুমিনুন-৮)। যারা নিজেদের মুমিন বলে দাবি করে অথচ আমানত রক্ষায় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয় না, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দাবিকে যথার্থ নয় বলে ঘোষণা দিয়ে বলেন- “যে আমানত রক্ষা করে না তার ইমানের দাবি যথার্থ নয় এবং যে অঙ্গীকার পূরণ করে না তার দীন যথার্থ নয়।” (মুসনাদে আহমদ : ১৩১৯৯)।

ইসলামে আমানতের পরিধি অনেক বিস্তৃত। একজন চাকরিজীবীর জন্য তার কাজের নির্ধারিত সময়টুকুও আমানত হিসেবে গণ্য। কাজ রেখে নির্ধারিত সময়ে গল্প-গুজবে মেতে ওঠা বা কাজে ফাঁকি দেওয়া খেয়ানতের শামিল। অফিসের জিনিসপত্রও কর্মীর কাছে আমানত। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ব্যতিরেকে ব্যক্তিগত কাজে তা ব্যবহার করা বা নষ্ট করা পুরোপুরি নিষেধ। এমন কাজে জড়িয়ে আমানতের খেয়ানত করার ব্যাপারে হাদিসে কঠিন ধমকি বাণী এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি। তা হলো মিথ্যা কথা বলা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা এবং আমানতের খেয়ানত করা।’ (বুখারি : ৩৩)

যথার্থভাবে দায়িত্ব পালন করে আমানত রক্ষায় আত্মনিয়োগ করা ইসলামের অবশ্যপালনীয় নির্দেশনা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা আমানতগুলো প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও। আর যখন মানুষের বিচার-মীমাংসা করবে, তখন ন্যায়ভিত্তিক মীমাংসা কর। আল্লাহ তোমাদের সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী।’ (সুরা নিসা : ৫৮)।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সহিহ বুখারি : ৮৪৪; জামে তিরমিজি : ১২৪)।

লেখক : খতিব : আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর