শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাজেটে কৃষকের প্রত্যাশা

শাইখ সিরাজ

বাজেটে কৃষকের প্রত্যাশা

‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’-এর ১৭তম বছরের আয়োজন ছিল দেশের চারটি অঞ্চলে। প্রথম আয়োজন যমুনার ওপারে সিরাজগঞ্জে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের বর্তমান সংকট, জাতীয় বাজেটে তাদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে কথা হয় সেখানে। দ্বিতীয় আয়োজন যমুনার এপারের জেলা টাঙ্গাইলে। বিশেষ করে এক সময়ের কৃষিতে পিছিয়ে থাকা টিলা অঞ্চলগুলো ছিল সেচবহির্ভূত। সেচ উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে এখন এ অঞ্চলগুলো বাহারি ফল চাষে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। পাল্টেছে সেখানকার কৃষকের চাহিদা। তৃতীয় আয়োজন ছিল পদ্মার ওপারের জেলা মাদারীপুরে। পদ্মা সেতু কী পরিবর্তন এনেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকের জীবনে, নতুন কী স্বপ্ন বুনছেন তারা! চতুর্থ আয়োজন ছিল মাছ চাষের রাজধানী খ্যাত ময়মনসিংহে। দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মৎস্যশিল্প, সে শিল্প খাতের কান্ডারিদের এবারকার জাতীয় বাজেটে প্রত্যাশা কী? তারই পরিপ্রেক্ষিতে এবারের বাজেটে কৃষকের প্রত্যাশার মূল জায়গাটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি।

কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে সরকারের কার্যকর ভূমিকা প্রশংসনীয়। ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষকদের কৃষিযন্ত্র দেওয়া হচ্ছে। ফলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিকীকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। তবে ভর্তুকি দেওয়ার পরও কৃষিযন্ত্রের দাম মেটানোর অবস্থা এখনো ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের নেই। এ ছাড়াও আমাদের দেশের চাষের জমি খন্ড খন্ড, ফলে বড় কৃষিযন্ত্র ব্যবহার কঠিন হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে কৃষকদের দাবি- আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকের ব্যবহার উপযোগী কৃষিযন্ত্র আমদানি বা দেশে তৈরির ব্যবস্থা নেওয়ার। এবারের বাজেটে কৃষিযন্ত্রের ভর্তুকির সুফল যেন প্রান্তিক কৃষক পর্যন্ত পৌঁছে কৃষক তার সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রত্যাশা করছে।

উন্নত বিশ্বে শতভাগ যান্ত্রিক কৃষিতে বড় বিনিয়োগে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শিল্পের মাত্রায়। আমাদের জনসম্পদ রয়েছে, আছে উর্বর জমি ও কৃষি উপযোগী আবহাওয়া। ধীরে ধীরে কৃষিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন শিল্পোদ্যোক্তারাও। যার বেশ কিছু নজির আমি ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানে তুলে ধরেছি। আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য, ফলমূল ও সবজি উৎপাদন হয়। মৌসুমে উদ্বৃত্ত ফসল নষ্ট হয়। ফলে অ্যাগ্রো প্রসেসিংয়ে যাওয়া জরুরি। উপযুক্ত পরিবেশ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের নিশ্চয়তা তৈরি করা গেলে ব্যবসায়ীরা কৃষিতে বিনিয়োগ করবেন এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ কৃষিতে অর্থ বিনিয়োগ করলে টাকা ফেরত পাওয়া যায়-এটা প্রমাণিত। উপযুক্ত কৃষি উৎপাদন ও বাণিজ্যিক পরিবেশ তৈরি হলে এ খাতে বিদেশিরাও বিনিয়োগ করবেন। ভবিষ্যৎ বাণিজ্যই হচ্ছে কৃষি। অন্যদিকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-এর ১৭টির মধ্যে ১০টি লক্ষ্যমাত্রা এবং এর অন্তর্গত ৩৩টি টার্গেটের সঙ্গে কৃষি খাতের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। ফলে আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কৃষিজ উৎপাদনশীলতা এবং ক্ষুদ্র-পরিসর খাদ্য উৎপাদকদের আয় দ্বিগুণ করা। তাই শুধু কৃষিতে বাজেটে কৃষির জন্য শুধু থোক বরাদ্দ দিলেই হবে না। পরের ১০ থেকে ১৫ বছর কৃষির গতি প্রকৃতি কেমন হবে- তা এখনই ভাবনার ভিতরে এনে ঢেলে সাজাতে হবে।

বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য বাইরের দেশে রপ্তানি হয় মূলত এথনিক মার্কেটে (স্থানীয় বাজারে)। আন্তর্জাতিক চেইন সুপারশপগুলোতে বাংলাদেশ থেকে ফল বা সবজি রপ্তানি হয় না। এর মূল কারণ আমরা দীর্ঘদিন উৎপাদনে উত্তম কৃষিচর্চা (গ্যাপ) মানদন্ডগুলো মেনে চলিনি। বলা ভালো এ বিষয়ে আমাদের উদাসীনতা ছিল। গত দুই দশক ধরে ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ এর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে আসছে। আশার কথা বিষয়টি নিয়ে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সচেতন হয়েছে। কার্যকরী পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে প্রথমত, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে আমাদের উৎপাদন করতে হবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য। দ্বিতীয়ত, সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশের সরকারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে কৃষিবাণিজ্যের ধারাকে সচল করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা আজকের বিশ্বে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। কৃষির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ফলে আগামী পৃথিবীতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনই জলবায়ুসহিষ্ণু ফসল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে হবে। উপকূলের অনেক অঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে চলেছে। এতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এসব নিয়ে গবেষণা করে লবণসহিষ্ণু ফসলের জাত উৎপাদন করতে হবে। অনেক অঞ্চলে ধান উৎপাদনে বেশি পানি লাগে। এসব এলাকায় কীভাবে কম পানি দিয়ে ধান উৎপাদন করা যায় সেই উদ্যোগও নেওয়া প্রয়োজন।

কৃষি ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীবিকা অভিযোজন কার্যক্রম নিয়ে ভাবতে হবে এখন থেকেই। গ্রামীণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি উন্নয়নের জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন।

শস্যবীমা ব্যবস্থা দেশের সব এলাকায় স্থায়ী করার জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন। কয়েক বছর ধরে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণে কৃষি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারও কৃষি, উন্নয়ন কাজসহ সব পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে শস্যবীমা তথা কৃষিবীমার মাধ্যমে কৃষকদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। বীমার কিস্তি বা প্রিমিয়াম যেন কৃষকের সক্ষমতার ভিতর থাকে। এ বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ভর্তুকির মাধ্যমে এ কার্যক্রমের একটি উদ্যোগ নিতে পারে।

কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন। কার্যকর ও দক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা ছাড়া কৃষিকে লাভজনক বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করা যাবে না। কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার সুযোগ তৈরি করতে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে জাতীয় কৃষি নীতিমালা, ২০১৮- তে। ওই নীতিমালা বা পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে কৃষিপণ্যের সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে। দিনের পর দিন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে কৃষি। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তি, ফসলের নতুন নতুন জাত ও চাষ ব্যবস্থা অনেক কিছুরই সমাধান দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের কৃষি গবেষণার গতি ও সুযোগ-সুবিধা রয়ে গেছে গতানুগতিক। পৃথিবীর কৃষি উন্নত দেশগুলো মানসম্মত ও সময়োপযোগী কৃষি গবেষণার জন্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে। আমরা এক্ষেত্রেও পিছিয়ে আছি। একদিকে রয়েছে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সম্প্রসারণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, অন্যদিকে রয়েছে অপ্রতুল অর্থ বরাদ্দসহ নানা সংকট। এই সংকট দূর করতে কৃষি গবেষণায় বিশেষ বরাদ্দ এবং প্রচলিত ব্যবস্থার মধ্যে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

নতুন কৃষি ও কৃষি প্রযুক্তির সঙ্গে কৃষককে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রয়োজন নিত্যনতুন প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি কৃষি তথ্যসেবা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন অ্যাপের মাঠপর্যায়ে তেমন কার্যকর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। কৃষকের কাছে তথ্যসেবা নিয়ে দ্রুত পৌঁছাতে হবে। দেশের ৪ হাজার ৪৫৭টি ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭৭৩টি কেন্দ্রে পূর্ণাঙ্গ মাল্টিমিডিয়া ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এসব কেন্দ্র ও তাদের কাজ সম্পর্কে কৃষকদের তেমন ধারণা নেই। কৃষক সেখান থেকে কার্যত সেবাও পাচ্ছেন না। দেশের সব ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রে কৃষি সম্পর্কিত সেবা কার্যক্রম কার্যকরভাবে চালু করতে হবে। ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রের তথ্য সহায়কের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তির যথাযথ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে নিয়মিত ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদে তথ্যবিষয়ক উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনায় বিশেষ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষকের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। কৃষকের হাতে স্মার্টফোনের সংখ্যাটাও কম নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে স্মার্টফোনটা ব্যবহার করে কৃষক কৃষিসংক্রান্ত তথ্য কতটুকু নিতে পারছেন? আমাদের জরিপ বলছে- চার অঞ্চলে উপস্থিত কৃষকের ১ শতাংশেরও কম হাতের স্মার্টফোনটি কৃষি তথ্য-উপাত্ত পেতে ব্যবহার করছেন। অথচ এ বিষয়ে সচেতন করলে কৃষি ও আবহাওয়া তথ্য পেয়ে লাভবান হতে পারবেন কৃষক।

পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলাকে মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বাস দিয়েছিলেন দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে উদ্যোগের। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করেছিল ‘কৃষি পণ্যভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হবে এবং প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দেওয়া হবে।’ এর প্রতিফলন কিছুটা দেখা গেলেও কৃষকের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। কৃষক তাদের উৎপাদিত টমেটো, পেয়ারা প্রভৃতি ফল-ফসলের প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে হতাশ হয়েছেন। কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেটের বিভিন্ন সেশনে তাদের দাবি ছিল উৎপাদিত পণ্যের ভ্যালু অ্যাড করার জন্য কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা। সরকারকে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

সারা পৃথিবীই প্রযুক্তির কৃষির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কৃষির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে নিশ্চিত লাভ জেনে শিল্পোদ্যোক্তারা কৃষিতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। সাধারণ কৃষক এ ব্যয়ভার বহন করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে কৃষকের জমি হারানোর ভয় যেমন আছে, আছে তার নিজের জমিতেই শ্রমিক হওয়ার আশঙ্কা। সেই ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই একটা নীতিমালা তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে কৃষক শিল্পোদ্যোক্তার সঙ্গে একটা অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্কে যেন থাকতে পারে। চলতি বছর সরকারের ভর্তুকি বৃদ্ধির পরও কৃষক পর্যায়ে সারের দাম বেড়েছে। তার প্রতিফলন খুব একটা চোখে না পড়লেও, সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার না পাওয়ার অভিযোগ ছিল সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও মাদারীপুরের কৃষকদের। ব্যতিক্রম ছিল ময়মনসিংহে।

তবে সারের ডিলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে অসন্তোষ ছিল প্রায় সব জায়গাতেই। সিরাজগঞ্জে উপস্থিত কৃষকদের ৮৫ শতাংশ, টাঙ্গাইলে ৯০ শতাংশ, মাদারীপুরে ৮০ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ৭৫ শতাংশের দাবি ছিল ডিলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবনার। এক সময় সেচের জন্য হাহাকার থাকলেও বর্তমানে সেচ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সন্তুষ্ট কৃষক। তবে সেচের জন্য সরকারের ভর্তুকির সুফল সব কৃষক পাচ্ছেন না-এমন অভিযোগ ছিল বেশি।

কৃষি খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে কৃষকের সন্তুষ্টি বেড়েছে। সিরাজগঞ্জে উপস্থিত কৃষকদের ৭০ শতাংশ, টাঙ্গাইলে ৭৫ শতাংশ, মাদারীপুরে ৬৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ৭৫ শতাংশ কৃষি খাতে বিদ্যুৎ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে মৎস্য, পোলট্রি ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল যেন কৃষি খাতে হিসাব করা হয় এমন দাবি ছিল খামারিদের। কৃষিঋণ নিয়ে কৃষকদের প্রতিনিয়ত সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ নিয়ে সরকারের বহুমুখী প্রচেষ্টা এখনো সাফল্যের মুখ দেখছে না। চার অঞ্চলের উপস্থিত কৃষকদের অধিকাংশ বলেছেন ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ পান না। বাধ্য হয়ে এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়; যেখানে সুদের হার বেশি। উপস্থিত কৃষকের সিরাজগঞ্জে ২ শতাংশ, টাঙ্গাইলে ৫ শতাংশ, মাদারীপুরে ১৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ৫ শতাংশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পেরেছেন বলে মত দিয়েছেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের খামারিরা প্রাণিখাদ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে বেশ বিপর্যস্ত। এ বিষয়ে বাজার মনিটরিং বাড়ানোর ও নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান তারা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের পোলট্রি শিল্পে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার নেই বললেই চলে। ফলে দিন দিন লোকসানের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। চার অঞ্চলে উপস্থিত খামারিদের ১ শতাংশেরও কম পোলট্রি শিল্পের আধুনিক যন্ত্র সম্পর্কে জানেন। প্রতি বছরের ন্যায় দুগ্ধখামারিদের অভিযোগ ছিল দুধের দাম না পাওয়া নিয়ে।

হৃদয়ে মাটি ও মানুষ আয়োজিত ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ কার্যক্রম প্রতি বছরই তৃণমূল কৃষকের দাবি-দাওয়া তুলে ধরছে দেশের মানুষ ও নীতিনির্ধারকের কাছে। সেগুলোর প্রতিফলন আমরা জাতীয় বাজেটে অনেকবার দেখেছি। বিশেষ করে সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত তাঁর বাজেট ঘোষণায় একাধিকবার এই আয়োজনের কথা উল্লেখ করেছেন।

কৃষকের যৌক্তিক দাবির প্রতিফলন ঘটুক জাতীয় বাজেটে। এর মধ্য দিয়েই রচিত হোক আগামীর কৃষি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

 

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব  

[email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর