অনিশ্চয়তার দোলাচল সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন জোরেশোরে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে নির্বাচনি প্র¯‘তির কথা বলছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বিবিসির সঙ্গে গত ১৩ জুলাই এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা চ্যালেঞ্জিং হলেও নির্বাচন সম্ভব।’ ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও নির্বাচনি প্র¯‘তি নিচ্ছে। কোনো কোনো দল বিভিন্ন আসনে প্রার্থিতাও ঘোষণা করছে।
এদিকে এনসিপিসহ ১৪৪টি নতুন দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও শর্ত পূরণ না হওয়ায় কেউই নিবন্ধন পায়নি। প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তসহ তাদের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পুনরায় আবেদন করতে বলা হয়েছে। মোটকথা দেশে একটা নির্বাচনি আবহ লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন চাচ্ছে। কেননা, নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র উত্তরণ সম্ভব নয়।
সরকারের নির্দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার যানবাহনের সংকট থাকা সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের জন্য প্র¯‘তি নিতে হচ্ছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, যানবাহনের অভাবে দৈনন্দিন নাগরিক সেবা দেওয়ার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এক থানার গাড়ি নিয়ে অন্য থানার কাজ চালাতে হচ্ছে। এমত পরিস্থিাতিতে নির্বাচনি দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য পুলিশের যানবাহন সংকট সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ অতীব জরুরি।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমও মনে করেন, তীব্র যানবাহনসংকট নিয়ে বাহিনীর সদস্যদের নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে বেগ পেতে হতে পারে। তিনি সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগে থেকেই বাহিনীতে যানবাহনসংকট ছিল। গত ৫ আগস্টের আগে-পরে অনেক যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ সংকট আরও তীব্র হয়। আমরা এখন এক থানার গাড়ি দিয়ে অন্য থানায় সাপোর্ট দিয়ে থাকি। কিন্তু নির্বাচনের সময় সব থানারই গাড়ি প্রয়োজন হবে। যানবাহনসংকট তাই পুলিশের নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরির কারণ হতে পারে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বাহিনীতে ৪ হাজার ৪৪৭টি যানবাহনের ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে ৫০৭টি ডাবল কেবিন পিকআপ, ৪৪৩টি এসইউভি এবং ৩ হাজার ৪৯৭টি মোটরসাইকেল। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুলিশের প্যাট্রল ডিউটিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় মোটরসাইকেল। ডাবল কেবিন পিকআপের ঘাটতির কারণে টহল কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জরুরি অভিযান পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে। এসইউভি বা জিপ শ্রেণির গাড়িগুলো সাধারণত এএসপি থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবহার করে থাকেন, যারা মূলত জেলা বা উপজেলার আইনশৃঙ্খলা এবং অভিযানের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকেন। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় এ তত্ত্বাবধানের অলাদা গুরুত্ব রয়েছে।
মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরাও বলছেন, বিদ্যমান যানবাহন দিয়ে বর্তমানে থানাগুলোর রুটিন ডিউটি পালন করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ডাবল কেবিন পিকআপ সংকটের কারণে প্যাট্রল ডিউটি পরিচালনায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ‘জরুরি প্রয়োজন হলেও অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।’ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘যানবাহনের ঘাটতি পূরণের জন্য আমরা কাজ করছি। গুরুত্ব অনুযায়ী বিভিন্ন ইউনিটে গাড়ি দিচ্ছি। থানা পুলিশকে যে কোনো ঘটনার খবরে প্রথম এগিয়ে যেতে হয়। তাই থানাগুলোর অগ্রাধিকার বেশি। যানবাহনের ঘাটতি নিরসনে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক রয়েছে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীসহ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে সব মিলিয়ে পুলিশের ১ হাজার ১৪৬টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ক্ষতি হয় ২৮৫ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্ষমতার পালাবদলের পর ধীরে ধীরে থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও গাড়ির অভাবে পুলিশি টহল কমে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ রোধে সব সময়ই সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় একাধিক পুলিশ টিমকে টহলে থাকতে হয়। যে কোনো অপরাধ বা দুর্ঘটনার খবরে দ্রুত ঘটনাস্থালে পৌঁছতে হয়। কিন্তু বেশির ভাগ থানায় যানবাহনসংকট থাকায় এ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
যানবাহনের ঘাটতি সত্ত্বেও আগামী নির্বাচনের জন্য পুলিশ প্র¯‘তি নিচ্ছে। এ কথা বলাই বাহুল্য যে একযোগে সারা দেশের নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের সময় যানবাহনের এ সংকট সবচেয়ে বড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এখন যেমন এক থানার গাড়ি দিয়ে আরেক থানায় সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের সময় তো একযোগে সব থানাতেই যানবাহনের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হবে। তখন এক থানা থেকে অন্য থানায় গাড়ির সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব হবে না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের নির্বাচন কমিশনের বাজেট যদি প্রয়োজনের নিরিখে ১ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা বা ১৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, সেক্ষেত্রে সদিচ্ছা থাকলে একই যুক্তি ও প্রয়োজনে পুলিশের গাড়ি ক্রয়ে অর্থসংস্থাানে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
লেখক : সাংবাদিক