ইসলাম নামক প্রশান্তির ছায়ায় যেদিন থেকে যুবসমাজ আশ্রয় নেবে এবং অন্যকে তার আশ্রয়ে আসার দাওয়াত দেবে, সেদিনই গোটা পৃথিবী হবে বেহেশতের ভূমি। হাদিস থেকে জানা যায় বেহেশতের অধিবাসী হবে যুবক এবং যুবতী। শৈশব, কৈশোর আর বার্ধক্যের মাঝে বয়ে যাওয়া সোনালি সময়কে যৌবন বলে। যৌবন মানবজীবনের টার্নিং পয়েন্ট। একজন মানুষের উত্থানপতন নির্ভর করে যৌবনের শ্রমসাধনা, সংযম-অসংযমের ওপর। যৌবনে পরিশ্রম করলে, সংযম-সঞ্চয় করলে বার্ধক্যে দুশ্চিন্তামুক্ত সুন্দর জীবন কাটানো সম্ভব। অযত্ন-অবহেলা আর অসংযমে যৌবন পার করলে বুড়ো বয়সে কষ্টের বোঝা কাঁধে তুলতেই হবে। অসুন্দরভাবে পার করতে হবে জীবনের শেষ দিনগুলো।
নিপুণ কারিগর মহান আল্লাহর অপার দান জীবন। জীবনের সুন্দর সমাপ্তির জন্য যেমন যৌবনে শ্রমসাধনার প্রয়োজন, তেমনি অনন্ত জীবন আখেরাতেও সুন্দর নিবাসের জন্য এ যৌবনেই সাধনা করতে হবে। একজন যুবক তার যৌবনকে প্রবৃত্তির চাহিদানুযায়ী অসৎ পথে ব্যয় করতে পারে, আবার মালিকের ডাকে সাড়া দিয়ে অন্তর্গঠনের সাধনায়ও মগ্ন হতে পারে। যুবক হেঁটে সিনেমা-থিয়েটার, আড্ডায় যেতে পারে, আবার মসজিদেও যেতে পারে। যুবক ইচ্ছা করলেই তরুণীর উদ্যম যৌবন নিয়ে দুর্দম খেলতে পারে অথবা চাইলেই কোরআনে বর্ণিত নারীর রক্ষাকর্তাও হতে পারে। কিন্তু একজন বৃদ্ধ, সমাজের প্রতি যার চাহিদা ফুরিয়ে এসেছে, পৃথিবী যাকে ত্যাগ করেছে, সিনেমা-থিয়েটার যার চোখে ঝাপসা লাগে, তরুণীর প্রতি যে নিষ্কাম; তাকে বাধ্য হয়েই মসজিদে যেতে হয়। দুনিয়াবিমুখ জীবনযাপন করতে হয়। তাবলিগে সময় লাগাতে হয়।
বার্ধক্যের অসহায়ত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞ কবি আল্লামা শেখ সাদির অমর রচনা ‘গুলিস্তাঁ’ থেকে একটি ঘটনা বলছি। দামেস্ক সফরের সময় এক যুবক শেখ সাদির মজলিসে এসে বলল, আপনাদের মাঝে ফারসি ভাষা জানেন কে? অন্যরা সাদিকে দেখিয়ে দিলেন। যুবক বলল, এক শ পঞ্চাশোর্ধ এক বৃদ্ধের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। ফারসি ভাষায় সে কী যেন বলছে। হে জ্ঞানী! আপনি আমার সঙ্গে চলুন। কিছু হাদিয়াও পেতে পারেন। সাদি বললেন, আমি তার শিয়রে বসামাত্রই সে বলে উঠল, ‘একদা আমি কত যে বলেছি, আমার ইচ্ছাই পূরণ হবে। হায়! এখন আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হতে চলছে। বড়ই আফসোস! আমার দীর্ঘ জীবনের জন্য। এ জীবনে কত বর্ণালি সময় পার করেছি। বর্ণাঢ্য জীবন কাটিয়েছি। একসময় প্রাণভরে তৃপ্তিসহ আহার করেছি আর বলেছি, ব্যস! আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু আজ সে যৌবন নেই। বর্ণালি সময় ধূসর হয়ে গেছে।’ হে সময়ের সাধক যুবক বন্ধু! সময়ের মাঝে আল্লাহকে পাওয়ার সাধনা কর। নয়তো জীবনসূর্যের ডুবন্ত বেলায় আফসোস করে প্রাণবায়ু ত্যাগ করতে হবে। বিজ্ঞ কবি শেখ সাদি বলেন, ‘সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ কখনো যুবকের মতো আল্লাহর সাধক হতে পারে না। যেমনিভাবে জš§ান্ধ ব্যক্তি স্বপ্নেও চোখে দেখে না।’ বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাই যুবকদের চেয়ে বৃদ্ধরাই বেশি ইবাদত গোজার। আমাদের সমাজের দাঈরা যুবকদের নিয়ে ভাবেন না। তরুণদের ধর্মের নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনতে আলেম এবং তাবলিগের ভাইদের প্রচেষ্টা কম। তার চেয়ে বড় কথা হলো, তরুণদের ধর্মমুখী করে রাখার জন্য উপায় উপাদান নেই বললেই চলে। তরুণদের মধ্যে অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যদি ১৫০টি স্যাটেলাইট চ্যানেল থাকে তবে তরুণদের ধর্মমুখী করার জন্য ১০টি চ্যানেলও নেই কেন? কেন ফেসবুক, টুইটার আলেমদের চিন্তা থেকে তৈরি হয়নি? পবিত্র কোরআন নাজিলের সময় তরুণরা কবিতা, সাহিত্য ও গানে মত্ত ছিল। আল্লাহতায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য নাজিল করে সমকালীন কবিতা, সাহিত্যকে অকার্যকর করে দিলেন। তরুণরা কোরআনের প্রতি হুমড়ি খেয়ে পড়ল। কাফেররা কোরআন থেকে তরুণদের দূরে রাখার জন্য গান-বাদ্যের ব্যবস্থা করল। কোরআনের ভাষায়, ‘কাফেররা বলে, তোমরা এ কোরআন শুনবে না এবং এটা আবৃত্তি করার সময় হট্টগোল-শোরগোল সৃষ্টি করবে। তাহলে তোমরা বিজয়ী হবে। (সুরা হামিম সাজদাহ, ৪১:২৬)। কোরআন এমন এক জাদুময়ী গ্রন্থ, যখন আবৃত্তি করা হয় মনে হয় যেন শ্রেষ্ঠ কবিতা। যখন সুর করে পড়া হয়, মনে হয় যেন হƒদয়ছোঁয়া গান। পৃথিবীর সব সুর, লয়, তাল হার মানে কোরআনের সুরের কাছে। যে কারণে তরুণরা গানের চেয়ে কোরআনের প্রতি বেশি আগ্রহী ছিল।
আজকের তরুণ আগামীর নেতৃত্ব। তাই তরুণদের টার্গেট করে তাবলিগ করতে হবে। দেশের সব তরুণ কোরআনমুখী হলে অপরাধ শূন্যের কোঠায় চলে আসবে। আমাদের দেশে অনেক দাঈ নিজের সন্তানদের দাওয়াতের আওতায় আনতে পারেন না। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আপনি আপনার পরিবারকে দীনের আওতায় আনুন। আল্লাহ বলেছেন, ‘ওহে! তোমরা যারা ইমান এনেছ, নিজেদের এবং নিজেদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।’ (সুরা তাহরিম, ৬৬:৬)। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করেন আমরা যেন তরুণদের নিয়ে ভাবতে পারি।
লেখক : প্রিন্সিপাল, সেইফ এডুকেশন ইনস্টিটিউট