আলী যাকের
অতিমাত্রায় টিভি চ্যানেল হয়ে যাওয়ায় সময়ের অভাবে যতœ নিয়ে নাটক নির্মাণ বা অভিনয়ের দক্ষতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর অতিরিক্ত নাটক নির্মাণ, নাটকের বাজেট হ্রাসসহ একাধিক কারণে নির্মাণ আর অভিনয়, দুইয়ের মানই কমেছে। নাটক আর অভিনয়ে গভীরতা কমে গেছে। নাটক হয়ে গেছে শুধুই কমেডি ও প্রেমকেন্দ্রিক। সমাজ বা পরিবারের গল্প এখনকার নাটকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
আসাদুজ্জামান নূর
এখন তো ভালো নাট্যকারের অভাব। নাটকে নেই কোনো পারিবারিক আবহ। গৎবাঁধা আর একঘেয়েমি রোমান্টিক নাটকে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন নাট্যকার ও নির্মাতারা। দুই-তিনজনকে চরিত্র করে সেরে ফেলছেন একটি নাটক। এটি কিন্তু রীতিমতো দর্শকদের জন্য বিরক্তিকর! এখন তো সবাই যান্ত্রিক হয়ে গেছেন। নাটকে নেই কোনো অ্যাকশান-রিয়েকশন!
দিলারা জামান
বাজেট স্বল্পতা দেখিয়ে নির্মাতারা দিন দিন চরিত্র কাটছাঁট করছেন। তিন-চারজনকে নিয়ে নাটক বানাচ্ছেন। সেই যুগের সেই পারিবারিক আবহ আর কোনো নাটকে খুঁজে পাওয়া যায় না। নাটকে সিনিয়র শিল্পী সংখ্যা নেই বললেই চলে। কমেডি নাটক হয়ে গেছে নিম্নমানের। রোমান্টিক নাটকে হয়ে যাচ্ছে নায়ক-নায়িকা আর মোবাইল ফোননির্ভর।
তারিক আনাম খান
বিটিভির সময় নাটকগুলোর গুণগত মান বজায় রাখা হতো। পরিবারকে কেন্দ্র করে কত সুন্দর সুন্দর নাটক হতো! এখন তো অনেক চ্যানেল! তেমন যতœ করে নাটক কে বানাবে? দুই-তিনজনকে নিয়ে গণহারে নির্মিত হচ্ছে রোমান্টিক আর কমেডিনির্ভর নাটক।
ডলি জহুর
এখন নির্মাতা, প্রযোজক বা চ্যানেল মালিক একটা গৎবাঁধা নিয়মে কাজ করছেন। নাটক না হচ্ছে কমেডি আর না হচ্ছে রোমান্টিক। নির্মাণে নেই বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। এজেন্সি আর চ্যানেল মালিকদের মর্জিমাফিক নির্মিত হচ্ছে নাটক। এরকম হলে যে কোনো ধাঁচের নাটকই একঘেয়েমি হয়ে যায়।
গিয়াস উদ্দিন সেলিম
বাজেট ঠিকমতো পাওয়া না গেলে ভালো কিছু আশা করি কীভাবে? অতিরিক্ত বাজেট হলে অবশ্যই ভালো নাটক হবে। তখন কমেডি নাটক আর ভাঁড়ামি মনে হবে না। আর রোমান্টিক নাটকও একঘেয়েমি লাগবে না।
অমিতাভ রেজা
ভালো কাজ মানেই হলো ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়া। রোমান্টিক, কমেডি নাটক তো আর খারাপ নয়। তবে এটা সত্যি যে, নাটকে নেই সেই আগের পারিবারিক আবহ। নির্মাণ খারাপ হলে দর্শক তা পছন্দ করে না। আর বাজেট কিন্তু তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। গল্প, নির্মাণ খারাপ হলে নাটক খারাপ হতে বাধ্য। বাকিগুলো কোনো ফ্যাক্টর নয়।
আজাদ আবুল কালাম
নাটকে তো নেই পারিবারিক আবহ। বিরক্তিকর রোমান্টিক ও কমেডি নাটকে ভরে গেছে এই জগৎ। আর খারাপ দিক হচ্ছে এটি একটি দুর্বৃত্তায়নের স্থান। কতগুলো চালাক-চতুর-রংবাজ, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, রাহাজানি করা লোক, অশিক্ষিতÑ এদের হাতে মূলত মিডিয়া জিম্মি হয়ে পড়েছে। এর ফাঁকেই কিছু লোক করে-পড়ে খেতে পারছে আর কি!
অপি করিম
আমরা যখন নিয়মিত কাজ করেছি বা আমাদেরও আগে যে কাজ হয়েছে, সেগুলোর তুলনায় এখনকার নাটকের মানের অনেক পার্থক্য। নাটকে পারিবারিক আবহ তো নেই, উপরন্তু বিরক্তিকর রোমান্টিক ও কমেডি নাটকে ভরে গেছে। এটা আমার অবজার্ভেশন।
রোজী সিদ্দিকী
এখন চরিত্রের মধ্যে কোনো ভ্যারিয়েশন নেই, নেই ফিজিক্যাল মুভমেন্ট। এখন তো ঘরানাভিত্তিক কাজ হয়। এখন ‘আই লাভ ইউ’ জাতীয় নাটকই বেশি হচ্ছে। প্রোডাকশন খরচ কমাতে শিশুশিল্পী, বাবা-মা, দাদা-দাদির চরিত্র বাদ দেওয়া হয়।
শহিদুজ্জামান সেলিম
ভালো নাটক নির্মিত হচ্ছে কিন্তু দর্শক দেখতে পারছে না অতি মাত্রার বিজ্ঞাপনের কারণে। যেভাবে বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে নাটক দেখানো হয় এতে অনেক সময় লেগে যায় নাটক শেষ হতে। তবে এটা সত্যি যে, নাটকে নেই আগের সেই পারিবারিক আবহ। বিরক্তিকর রোমান্টিক ও কমেডি নাটক হচ্ছে বেশি। তবে ফরমায়েশি নাটক নিয়ে বেশ হতাশ আমি।
মামুনুর রশীদ
এখনকার নাটকে বাবা থাকলে মা নেই, আবার মা থাকলে বাবা নেই! তাই এসব নাটক দর্শকদের মধ্যে কোনো আবেগ সৃষ্টি করতে পারছে না। নাটক হয়ে গেছে প্রেম আর কমেডির নামের ভাঁড়ামোকেন্দ্রিক। পরিবারিক আবহের গল্প তেমনভাবে এখনকার নাটকে খুঁজে পাওয়া যায় না।