শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় কেমন চলছে নৃত্যচর্চা

করোনায় কেমন চলছে নৃত্যচর্চা

শিবলী-নীপা

এক অদৃশ্য শত্রুর মোকাবিলায় থমকে গেছে সংগীত, নাটক, নৃত্যচর্চাসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গন। বিশেষ করে এই অস্থির সময়ে পেশাদার ও নবীন নৃত্যশিল্পীরা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতি নৃত্যশিল্পীদের একটি অনিশ্চয়তার মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে। এই সময়ে কেমন আছেন নৃত্যশিল্পীরা? বিস্তারিত লিখেছেন- পান্থ আফজাল

 

শিবলী মোহাম্মদ (নৃত্যাঞ্চল)

চারদিকের খারাপ অবস্থা দেখে মনটা কেঁদে ওঠে। অনেকেই অনাহারে আছে। করোনার দুর্যোগে বহু মানুষ ঘরে বসে গেছে, ঘরে বসে আছেন নৃত্যশিল্পীরাও। আমাদের নৃত্যাঞ্চলের ছেলেমেয়েরাও খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বাঁচার তাগিদে অনেকেই পেশা বদলে ফেলেছে। নৃত্যশিল্পীদের অনেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করছে, অনলাইনে বুটিকস ব্যবসা খুলেছে, খাবার বিক্রি করছে। আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। একসময় তারা আমাদের আনন্দ দিয়েছেন। এখন তাদের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। পৃথিবী স্বাভাবিক হয়ে গেলে আবারও টাকা রোজগার করা যাবে। অর্থ আঁকড়ে থাকার মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। মানুষের এত টাকা, তবুও অনেকে তাদের জন্য কিছুই করছে না। যাঁদের টাকা আছে তাঁদের বিবেক কি এই সময় জাগ্রত হবে না? আমি চাই মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে। মানুষের মন উদার হবে, বিবেক জাগ্রত হবে। অভাব ও ক্ষুধার যন্ত্রণা যাঁরা বুঝে, তাঁরা মানুষের প্রকৃত যন্ত্রণা বুঝে। এত অর্থ-সম্পদ কিন্তু একা ভোগের জন্য নয়; সবারই অধিকার আছে।

 

ওয়ার্দা রিহাব (ধৃতি নর্তনালয়)

নৃত্যশিল্পীরা ভালো নেই। যে যেভাবে পারছে বেঁচে থাকতে বিকল্প চিন্তা করছে। সিনিয়র শিল্পীরা তো একপ্রকার আছেন, তবে বেশি সমস্যায় রয়েছে নতুন নৃত্যশিল্পীরা। তারা টিকে থাকতে অনলাইনে খাবার ডেলিভারি, বুটিকস বিজনেস, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করে জীবন চালাচ্ছেন। তবে যারা নাচকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন, তারা পড়েছে বিপাকে। তবে যেভাবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার এগিয়ে আসা দরকার তা হচ্ছে কি? নৃত্যশিল্পীদের এককালীন কিছু অর্থ প্রদান করেই তাঁরা দায়মুক্ত। আবার কারা পেয়েছে, কারা পায়নি তাও প্রশ্ন থেকে যায়। আমি মনে করি নৃত্যশিল্পীদের প্রয়োজন কাজের ক্ষেত্র বাড়ানো। শুরু হতে পারে তা স্বল্প পরিসরে। এখন নাচের শিল্পীরা অনলাইনে বিনা পয়সায় অংশগ্রহণ করছে। আমিও করছি মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকার জন্য। তবে যারা অনলাইনে ক্লাস নিতে পারছে না, তারা অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে বিকল্প চিন্তা করছে। তাদের এই উদ্যোগকে আমি রেসপেক্ট করি। তবে এ পরিস্থিতিতে সরকার, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, শিল্পকলাসহ মিডিয়ার সাপোর্ট খুবই জরুরি।

 

আনিসুল ইসলাম হিরু

আনিসুল ইসলাম হিরু (সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার)

নৃত্যশিল্পীরা সত্যিই খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে এখনই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। স্বল্প অনুদান দিয়ে কাজ হবে না। কাজের বিনিময়ে খাদ্য চালু রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিল্পকলাকেই বিশেষভাবে এগিয়ে আসতে হবে। শিল্পীকে এ দুঃসময়ে প্রমোট করতে হবে। সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে শিল্পকলাই পারে মাধ্যম হিসেবে সরাসরি যোগাযোগ করতে। শিল্পকলা এই মুহুর্তে নন্দনমঞ্চে অনুষ্ঠান করে, বাইরের প্রোগ্রামে নৃত্যশিল্পীকে প্রমোট করে নৃত্যের মানুষদের বাঁচিয়ে রাখতে পারে। আমরা সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার থেকে যতটুকু সম্ভব শিল্পীদের জন্য করছি। কিন্তু এটা আর কতদিন? দেশের বড় বড় কোম্পানি, শিল্পীদের বাঁচাতে করপোরেট লোকজনকে এগিয়ে আসা উচিত। এ ব্যাপারে হেল্প করতে পারে মঞ্চ ও টিভি। অনলাইনে প্রোগ্রাম হচ্ছে বিনা পয়সায়। শিল্পকলার উচিত কিছু সম্মানীর বিনিময়ে শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান করা। অনুদান কতদিন দেবে, আর শিল্পীরা কতদিন চাইবে!

 

মুনমুন আহমেদ (রেওয়াজ)

মানসিকভাবে চাঙা থাকার জন্য বিনা পয়সায় অনলাইন প্ল্যাটফরমে নৃত্যবিষয়ক কিছু অনুষ্ঠান করছি। রেওয়াজ পারফরমার্স স্কুলের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা সরাসরি তালিম নিচ্ছে। অনলাইনেই হচ্ছে নৃত্যশিক্ষা, নৃত্যচর্চা। তবে কোনো স্পন্সর নেই। আর নৃত্যশিল্পীদের বিকল্প চিন্তা তো করতেই হচ্ছে। এখন বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয়। এই বিকল্প চিন্তাকে সম্মান করি। এককালীন কিছু টাকা দিয়ে কিছুই হয় না। কে কাকে সাহায্য করবে? সবাই ক্রাইসিসে। যে যেভাবে পারছে টিকে থাকার চেষ্টা করছে।

নৃত্যরত শিল্পীরা

শামীম আরা নীপা (নৃত্যাঞ্চল)

এমন একটা খারাপ সময় আসবে তা কেউ কোনো দিন চিন্তায় করেনি। এ দেশে তো নৃত্যের সার্বিক অবস্থা ভালোই ছিল। নৃত্যে অংশগ্রহণ করে অনেকেই টিকেছিল। স্টেজ শো, টিভি শো করে ছেলেমেয়েদের চলত। তবে এখন পরিস্থিতি উল্টো, সব স্থবির। ছেলেদের তো সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়, তারা এখন বেকার বসে আছে। অনেকেই করছে বিকল্প চিন্তা। নাচ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে অন্য কাজে ইনভলব হচ্ছে। কিন্তু এভাবে কি টিকে থাকা যায়? আমরা তো জীবনে অন্য কিছু করিনি। শুধুই নাচ করেছি। সময় অনুকূলে ছিল বলে আজ আমরা একটা ভালো অবস্থায় পৌঁছতে পেরেছি। কিন্তু যারা কেবল শুরু করেছে নাচকে ভালোবেসে, তাদের এ অবস্থা দেখলে নিজেকে ভীষণ অপরাধী লাগে। আর এককালীন সাহায্য যে সবাই পাচ্ছে, তা কিন্তু নয়। এভাবে টিকে থাকা যায় না। অনেকেই অসহায় হয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ অনলাইনে বিকল্প চিন্তা করছে। কিন্তু এটা ক্ষণস্থায়ী চিন্তা। প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা টিকে থাকবে, তবে নতুনদের জন্য টিকে থাকা খুবই কষ্টের।

সর্বশেষ খবর