রবিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

এক শাকিবেই ভরসা ॥ অন্য নায়করা করছে কী?

আলাউদ্দীন মাজিদ

এক শাকিবেই ভরসা ॥ অন্য নায়করা করছে কী?

কমপক্ষে ২০০৬ সাল থেকে দেশীয় চলচ্চিত্রের নায়ক হিসেবে চলছে শাকিব খানের একক রাজত্ব। এ নায়ক ১৯৯৯ সালে চলচ্চিত্রে এসে তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অনন্ত ভালোবাসা’ দিয়ে দর্শক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছে যান। ওই সময়ে নায়ক হিসেবে অনেক সিনিয়র তারকার পাশাপাশি রিয়াজ, মান্না, ফেরদৌস, আমিন খান, অমিত হাসান, শাকিল খানদের মতো জনপ্রিয় তারকার ছবি দুর্দান্ত প্রতাপে চলছিল। শাকিব খান অভিনয়ে এসেই যেন তার নতুন ডায়মেনশনের অভিনয় দিয়ে একটু একটু করে তাদের ভিত নাড়িয়ে দিতে শুরু করেন। এর চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় ২০০৬ সালে। ওই বছর মুক্তি পায় ‘কোটি টাকার কাবিন’ শিরোনামের একটি ছবি। ছবিটি বক্স অফিসে অভাবনীয় সাড়া জাগায়। এ ছবির আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার মধ্য দিয়েই শাকিবের পারিশ্রমিকের অংক তিন থেকে ছয় লাখে উন্নীত হয়। যা একসময় তার শীর্ষ দর্শকপ্রিয়তার কারণে ৪০ লাখ পর্যন্ত পৌঁছায়। ২০০৬ সালে এ অভিনেতার ১৩টি ছবি মুক্তি পায়। সবগুলোই হিট। ২০০৭ সালে তার অভিনীত ১২টি ছবি মুক্তি পেয়ে সবই অসামান্য ব্যবসা করে। এভাবে তার অপ্রতিরোধ্য যাত্রা এখনো অব্যাহত। তার এই অভাবনীয় সাফল্যের কারণে তিনি সিনেমা হল মালিক ও দর্শকদের কাছে নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হন। ২০১৬ সালে শাকিব খান অভিনয় করেন ভারত-বাংলাদেশ যৌথ আয়োজনের ‘শিকারি’ ছবিতে। এ ছবিতেও দুই বাংলায় তার সাফল্যের জোয়ার বইতে থাকে। এরপর একে একে অনেক যৌথ আয়োজনের ছবিতে অভিনয় করে দুই বাংলার সেরা নায়কে পরিণত হন। দেশের পাশাপাশি কলকাতাতেও অর্জন করেন শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মাননা। কিন্তু শাকিব খান দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকাই ছবির হাল ধরে রাখলেও অন্য অনেক নায়ক চলচ্চিত্রে এসেও তেমনভাবে প্রতিষ্ঠা পায়নি। এরই মধ্যে আরিফিন শুভ, বাপ্পী, সায়মন, রোশান, সিয়ামের মতো শিল্পীরও চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটেছে। কিন্তু সবাই কেন দর্শক ও সিনেমা হল মালিকদের ভরসার নায়ক হতে পারছে না? এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সিনেমা হল মালিক এবং চলচ্চিত্র  নির্মাতারা। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার কোহিনূর আক্তার সুচন্দা বলেন, দর্শক এবং সিনেমা হল মালিকদের মধ্যে আস্থা তৈরি এবং নিজেকে সুপারস্টারে পরিণত করার গুণ নিজের মধ্যে থাকলেই সে অবশ্যই প্রতিষ্ঠা পাবে। এক্ষেত্রে নির্মাতাদেরও দায়িত্ব থাকে। একজন নির্মাতাই পারেন গ্রমিং করিয়ে ভালো কাজ আদায় করে নিতে। তবে যে কাজ করতে আসে তার মধ্যে শতভাগ আগ্রহ ও ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। শাকিব খানের মধ্যে সেই গুণ ও চেষ্টা ছিল বলেই সে সুপারস্টারে পরিণত হয়েছে এবং এখনো সবার ভরসার নায়ক হয়ে আছে। অন্য যারা নতুন আসছে তাদের বলব তোমরা এই পেশাকে ধ্যান জ্ঞান হিসেবে নাও। তাহলেই সফল হবে। শাকিব খান আজীবন নায়ক হয়ে থাকতে পারবে না। তার পরবর্তীতে অন্য কাউকে তো হাল ধরতেই হবে। খ্যাতিমান চলচ্চিত্র প্রদর্শক ও প্রযোজক এবং মধুমিতা সিনেমা হলের অন্যতম কর্ণধার ইফতেখার উদ্দীন নওশাদ বলেন, শাকিব হচ্ছেন একজন অ্যাপ্রুভাল স্টার। শাকিব খানের ছবি পেলে আমাদের সিনেমা হলে দর্শক আসে এবং ছবিটি দীর্ঘদিন ধরে দর্শক গ্রহণযোগ্যতায় চালানো যায়। অন্য অনেক নায়ক আসছে। কিন্তু তারা বক্স অফিস তো নয়ই, দর্শকদের মাঝেও সাড়া জাগাতে পারছে না। এটি যারা ব্যর্থ তাদের এবং নির্মাতাদের দায়। সম্প্রতি আরিফিন শুভর ছবিও দর্শক গ্রহণ করছে। ইতিমধ্যে এই নায়ক অভিনীত ‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবিটি আমার মধুমিতা সিনেমা হলে একটানা দুই সপ্তাহ চলেছে। অন্যান্য হলেরও একই চিত্র। আসলে স্টার হতে গেলে নিজের অভিনয় দক্ষতা, ভালো গল্প ও সুনির্মাণের সমন্বয় দরকার। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার কাজী হায়াৎ বলেন, দর্শক হল আমাদের নিয়ামক। দর্শক যাদের কাজ পছন্দ করে তারই সুপারস্টার হয়। দর্শক গ্রহণযোগ্যতার কারণেই তাদের ছবি বেশি নির্মিত হয় এবং সিনেমা হল মালিক ও দর্শকের ভরসাস্থলে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে শাকিব খান তার দক্ষতা দেখাতে পেরেছে বলেই সে সবার নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। তবে এর মধ্যেও নির্মাতারা হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। নতুন তারকা তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি সেদিক থেকে নির্মাতা হিসেবে অন্যতম একজন। আমি যখন ছবি নির্মাণে আসি তখন একাধিক সুপারস্টার ছিলেন। আমি কিন্তু তাদের নিয়ে কাজ না করেও ব্যবসাসফল ছবি নির্মাণ করেছি। যেগুলো দর্শক গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এসব ছবির মধ্য  অনেক স্টারও তৈরি হয়েছে। এর প্রমাণ অভিনেতা মান্না, রাজীব, মিজু আহমেদ, ডিপজল, কালা আজিজসহ আরও অনেকে। আসলে তারকা তৈরির ক্ষেত্রে একজন নির্মাতার দায়িত্ব অনেক বেশি বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি যারা নিজেদের অভিনয় দক্ষতা দেখাতে পারেনি, তারা তারকা হয়ে উঠতে পারেনি। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, আমরা যখন চলচ্চিত্র ব্যবসায় আসি তখন রাজ্জাক ছিলেন জনপ্রিয়তার মধ্যগগনে। কোনো ছবিতে তিনি থাকলেই সেই ছবি নিঃসন্দেহে সুপারহিট হতো। তখন আরও জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন। কিন্তু একক নায়ক হিসেবে ভরসা করা হতো একমাত্র নায়ক রাজ রাজ্জাকের ওপরই।  বর্তমানে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে শাকিব খান জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন। গল্প ও নির্মাণ ভালো হলে ছবি দর্শক আস্থা অর্জন করে যেমন সত্য ঠিক তেমনি এটিও সত্য যে শাকিবের অভিনয় আকর্ষণে দর্শক সিনেমা হলে ছুটে আসে। মানে শাকিবের নামের ওপরই এখন ছবি চলে। এ কারণেই সিনেমা হল মালিকরা শাকিবের ওপর ভরসা করে। এখানে একটি প্লাস পয়েন্ট হলো, ৪-৫    বছর ধরে চলচ্চিত্র ব্যবসার দুর্দিনেও সিনেমা হল   মালিকরা দর্শকদের চাহিদার কারণেই শাকিব খানের ওপর ভরসা করেন। সমসাময়িক অন্য নায়কদের ওপর আকর্ষণবোধ না করার কারণ হলো একজন নায়কের একাধারে কয়েকটি ছবি হিট না হলেও অভিনয় দক্ষতা না থাকলে সুপারস্টার হতে পারে না।  একজন অভিনয় শিল্পীর নানা গল্প ও চরিত্র সুনিপুণভাবে নিজের মধ্যে ধারণ করে নেওয়ার গুণ থাকতে হয়। তাহলেই সে দর্শকের আস্থা কুড়াতে সক্ষম হবে।

সর্বশেষ খবর