রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

বলিউড মাতানো বাংলাদেশি ৪ কণ্ঠশিল্পী

বলিউড মাতানো বাংলাদেশি ৪ কণ্ঠশিল্পী

চারজনই প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী। রুনা লায়লা, এন্ড্রু কিশোর, মিতালী মুখার্জি ও জেমস। তাঁদের অপ্রতিরোধ্য গানের দর্শকপ্রিয়তা বলিপাড়ায়ও আলোড়ন তুলে। সেখানকার সিনেমায় গান গেয়েও সমান জনপ্রিয়তা লাভ করেন তাঁরা। এই চার খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পীর বলিউড জয়ের গল্প গ্রন্থনা করেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

রুনা লায়লা [১৯৬৫ থেকে]

১৯৬৫ সালে উর্দু ছবি ‘জুগনু’তে গান গেয়ে সংগীতের ক্যারিয়ার শুরু করলেও ১৯৭৬ সালে বলিউডপাড়ায় নাম  লেখান ভার্সেটাইল কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। শুরুটা হিন্দি গানের বিখ্যাত সংগীত জুটি কল্যাণজি-আনন্দজির সুরে তখনকার আবেদনময়ী নায়িকা হেলেনের লিপে ‘এক সে ব্যারকের এক’ সিনেমার শিরোনামের আইটেম গান গেয়ে আলোড়ন তুলেন রুনা। যদিও তার আগে ১৯৭৪ সালে ভারতের চলচ্চিত্রপুরী মুম্বাইয়ে একটি লাইভ কনসার্টে মুগ্ধ হয়ে জয়দেব নামের সংগীত পরিচালক তাঁকে ভারতের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দূরদর্শনে প্রথম গান করার সুযোগ করে দেন। সে সময় রুনা লায়লার বিভিন্ন হিন্দি-উর্দু গানে মুগ্ধ হয়ে ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক খুশবন্ত সিং একবার এক পত্রিকায় লিখে বসেন- ‘তোমরা আমাদের রুনা লায়লা দাও, আমরা তোমাদের ফারাক্কার পানি দিয়ে দেব।’

‘ঘরোন্দা’ সিনেমায় ভূপিন্দর সিংয়ের সঙ্গে ‘দো দিওয়ানে শেহের মে’ গানের জন্য রুনা লায়লা ফিল্ম ফেয়ার ম্যাগাজিনের বেস্ট প্লেব্যাক সিঙ্গারের নমিনেশন লাভ করেন। এরপর তিনি আরও কিছু গানে কণ্ঠ দেন। বিখ্যাত শিল্পী মোহাম্মদ রফির সঙ্গে ‘জান-ই-বাহার’ সিনেমার ‘মার গায়ো রে’ ডুয়েট গানটি শ্রোতারা খুব ভালোভাবেই গ্রহণ করেন। এ ছাড়া উর্দু চলচ্চিত্রে গাওয়া হিট গান ‘ও মেরা বাবু ছেলছাবিলা মে তো নাচুঙ্গি’ গানটি বলিউড সিনেমায়ও ব্যবহার করা হয়। রুনা লায়লা একমাত্র বাংলাদেশি শিল্পী, যাঁর ভারতে গান গাওয়ার ওয়ার্ক পারমিট আছে। শ্রদ্ধেয় শিল্পী রুনা লায়লা শুধু যে বাংলা-হিন্দি-উর্দু গান করেই বসেছিলেন তা নয়, তিনি বিশ্বের প্রায় ১৭টি ভাষায় গান  গেয়ে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। এরমধ্যে পাঞ্জাবি, সিন্ধি, পস্তু, বালুচি, অ্যারাবিক, ফারসি, মালে, নেপালি, জাপানি, ইতালি, স্পেন, ফরাসি ও ইংলিশ অন্যতম। 

 

রুনা লায়লার হিন্দি ছবির উল্লেখযোগ্য গান

ইক সে বাড়কার ইক, সিনেমা : ‘ইক সে বাড়কার ইক’, তুমহে হো না হো,  সিনেমা : ‘ঘরোন্দা’, মুঝে পেয়ার তুমসে নেহি, সিনেমা : ‘ঘরোন্দা’, দো দিওয়ানে শেহের মে, সহশিল্পী ভূপিন্দর সিং, সিনেমা : ‘ঘরোন্দা’, মার গায়ো রে, সহশিল্পী মো. রফি, সিনেমা : ‘জান-ই-বাহার’, আলীবাবা, সিনেমা : ‘অগ্নিপথ’, ও মেরা বাবু ছেলছাবিলা, সিনেমা : ‘ঘর-দোয়ার’, ম্যায় কালি আনার কি, সিনেমা : ‘সাপনো কা মান্দির’, অ্যায় দিলওয়ালে আও, সিনেমা : ‘ইয়াদগার’, কাহো সাখি কাহো, সিনেমা : ‘ইক দিন বহু কা’ প্রভৃতি।

 

এন্ড্রু কিশোর [১৯৮৬ থেকে]

বাংলাদেশের পুরুষ কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে প্রথম হিন্দি গানে প্লেব্যাক করেন এন্ড্রু কিশোর। তিনি কণ্ঠ দেন কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক আর ডি বর্মণের সুরে। ১৯৮৬ সালে রাজেশ খান্না ও শাবানা অভিনীত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার প্রমোদ চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘শত্রু’ সিনেমায়। সুপারহিট গায়ক কিশোর কুমারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গান করে সুনাম কুড়ান এন্ড্রু কিশোর। ছবির বাংলা নাম ছিল বিরোধ। এন্ড্রু কিশোর নিয়ে এক মজার গল্প আছে- যখন মা মিনু বাড়ৈয়ের কোল আলোকিত করে তিনি জন্ম নেন তখন মা তার প্রিয় শিল্পী কিশোর কুমারের নামে সন্তানের নাম রাখেন ‘কিশোর’। ধীরে ধীরে সেই শিশুটি বড় হয়ে সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন এবং বলিউড সিনেমায় পা রেখে তাঁর বলিষ্ঠ এবং সুমধুর কণ্ঠের জোরে মায়ের প্রিয় শিল্পী কিশোর কুমারের গানে ভাগ বসান। আর ডি বর্মণের সুরে মোট তিনটি গান তিনি করেন। তার মধ্যে দুটি হিন্দিতে এবং বাংলা ছবি বিরোধের জন্য তিনটি বাংলায় গান করেন। বিখ্যাত গীতিকার মাজরু সুলতানপুরীর লেখা ‘সুরেজ চান্দা’, ‘মে তেরি বিসমিল হু’ এই হিন্দি গান দুটি গাওয়ার পাশাপাশি বাংলা ‘মুখে বল তুমি হ্যাঁ, ‘এর টুপি ওর মাথায়’ এবং ‘আজো বয়ে চলে পদ্মা মেঘনা’ গানগুলো করেন এন্ড্রু কিশোর। আর ‘এর টুপি ওর মাথায়’ বাংলা গানটির হিন্দি ভার্সন ‘ইসকি টুপি উসকি সার’ গানটি গেয়েছিলেন কিশোর কুমার। আর ডি বর্মণ আদর করে এন্ড্রু কিশোরকে ঢাকাইয়া বলে ডাকতেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের এই গুণী শিল্পীর কণ্ঠে মুগ্ধ হয়ে মুম্বাইয়ে প্লেব্যাক গানে ক্যারিয়ার গড়ার পরামর্শ এবং বিশেষ অনুরোধ করেন।

 

মিতালী মুখার্জি [১৯৮৭ থেকে]

ভারতের গজল শিল্পী ভূপিন্দর সিংকে বিয়ে করে দেশটির পুত্রবধূ হয়ে সেখানেই বসবাস করছেন বাংলাদেশি সংগীতশিল্পী মিতালী মুখার্জি। বাংলাদেশে তিনি মিতালী মুখার্জি নামে পরিচিত হলেও ভারতে মিতালী সিং নামেই পরিচিত। ১৯৮৭ সালে মিতালী প্রথম হিন্দি সিনেমায় নাম লেখান। বাঙালি সংগীত পরিচালক বাপ্পী লাহিড়ীর সুরে রিলিজ পাওয়া রাজএন সিপ্পির পরিচালনায় ‘সত্যমে জয়তে’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করা ‘তু জান সে পেয়ারা হ্যায়’ গানটিই মিতালী মুখার্জির একমাত্র হিন্দি ফিল্মের গান।

 

জেমস [২০০৫ থেকে]

বলিউড ফিল্মি গানে বাংলাদেশের সর্বশেষ সংযোজন নগর বাউল শিল্পী জেমস। ২০০৫ সালে বলিউডের জনপ্রিয় সুরকার প্রীতমের সুরে অনুরাগ বসুর পরিচালনায় ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমায় প্রথম কণ্ঠ দেন উপমহাদেশের জিম মরিসনখ্যাত জেমস। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় বাঙালি সংগীত পরিচালক প্রীতম কলকাতার বিখ্যাত ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র ‘পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে’ গানটির হিন্দি ভার্সন ‘ভিগি ভিগি রাতে’ গানটির জন্য যুৎসই কণ্ঠ খুঁজছিলেন। পরে বাংলাদেশের হার্টথ্রব ব্যান্ড শিল্পী জেমসের গান শুনেই মুগ্ধ হয়ে তাঁকে গান করার প্রস্তাব দেন প্রীতম। তারপর তো গানটি হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্য ইতিহাস। এখনো দেশটির বিভিন্ন রিয়ালিটি শো থেকে শুরু করে বিভিন্ন লাইভ অনুষ্ঠানে এই গান কণ্ঠশিল্পীদের প্রিয় তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। পরে প্রীতম আবার জেমসকে দিয়ে ২০০৬ সালে ‘ও লামহে’ ও ২০০৭ সালে ‘লাইফ ইন অ্যা মেট্রো’ সিনেমায় পরপর তিনটি গান রেকর্ড করান। ‘লাইফ ইন অ্যা মেট্রো’ সিনেমায় ‘আলবিদা’, ‘রিশতে’, ‘ওহ লামহে’ সিনেমার ‘চাল চালে আপনে ঘের’ এবং ২০১৩ সালে ‘মিট ব্রস’, অঞ্জনের ‘ওয়ার্নিং’ ছবির ‘বেবাসি’ গানটি বলিউডে এক সম্মানের জায়গায় আসীন করেছে জেমসকে, সঙ্গে বাংলাদেশকেও।

সর্বশেষ খবর