ঈদ মানে চলচ্চিত্র ব্যবসার আনন্দ-উৎসব। একদিকে নির্মাতা অন্যদিকে প্রদর্শক মানে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও সিনেমা হল মালিক উভয়ই বছরের দুই ঈদ মৌসুমে চলচ্চিত্র মুক্তি ও প্রদর্শন করে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হতে চান। চলচ্চিত্রের প্রচ- খরা সত্ত্বেও এবারও উভয়ের মধ্যে ঈদকে ঘিরে এই আনন্দের ঘাটতি নেই। এবারের ঈদে চারটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির দফতর কর্মকর্তা বাবু সৌমেন রায়। ছবি চারটি হলো- ‘গলুই’, ‘বিদ্রোহী’, ‘শান’ ও ‘বড্ড ভালোবাসি’। এর মধ্যে ঢাকাই ছবির শীর্ষ নায়ক শাকিব খান অভিনীত দুটি ছবি ‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’ মুক্তি পাচ্ছে বলে করোনাকালে বন্ধ করে দেওয়া অনেক সিনেমা হল মালিক ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের বন্ধ সিনেমা হলগুলো চালু করতে যাচ্ছেন। খুলতে যাওয়া এই সিনেমা হলের সংখ্যা অর্ধশত হতে পারে বলে জানিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাশ বলেন, বেশ কয়েক দশক ধরে একমাত্র শাকিব খানের ছবি চালালেই সিনেমা হলে দর্শক আসে এবং সিনেমা হল মালিকরা ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হন। তাই এই ঈদে যেহেতু শাকিব খানের দুটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে তাই সিনেমা হল মালিকরাও আশার আলো দেখছেন। সুদীপ্ত কুমার বলেন, ঈদে মূলত তিনটি ছবির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলবে। এগুলো হলো শাকিবের ‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’ এবং সিয়ামের ‘শান’। এই তিনটি ছবি নিয়েই এখন সিনেমা হলের জন্য নির্মাতারা দৌড়ঝাঁপ করছেন। মানে কে কতটা সিনেমা হল নিতে পারেন তাই নিয়ে চলছে টানা-হেঁছড়া।
সুদীপ্ত কুমার দাশ এও বলেন, আসলে ঈদে মোট কয়টি সিনেমা হলে ছবি চলবে তা এখনো নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। কারণ দেখা গেছে অনেক সিনেমা হল মালিক অতীতে মানসম্মত ও পর্যাপ্ত ছবি এবং দর্শকের অভাবে লোকসান গুনে সিনেমা হল বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন আর এগুলো খুলতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু সিনেমা হল কর্মচারী ও বুকিং এজেন্টদের তৎপরতায় অনেক মালিক শেষ পর্যন্ত বন্ধ সিনেমা হল খুলতে রাজি হবেন। এর ফলে শতাধিক সিনেমা হলে ছবি চলতে পারে এই ঈদে। বর্তমানে প্রায় ৬০টির মতো সিনেমা হল চালু আছে এর সঙ্গে আরও কমপক্ষে ৬০টি সিনেমা হল ঈদে মৌসুমি সিনেমা হল হিসেবে খুলতে পারে বলে জানিয়েছেন চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল। তার কথায় এবার ঈদে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রায় ৭০টি সিনেমা হল চালু থাকবে। এর সঙ্গে যোগ হতে পারে মৌসুমি হল মালিকদের ৫০টি সিনেমা হল। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি কাজী শোয়েব বলেন, ঈদে বড় বাজেটের তিনটি ছবি মুক্তি পেতে যাওয়ার কারণে অনেকেই আশার আলো দেখছেন। হল মালিকরা অনেকদিন ধরে ঈদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ইতোমধ্যে সিনেমা হলগুলো ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কত হলে ঈদের সিনেমা মুক্তি পাবে সেটা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এমনিতে আমাদের এখন ৬০-৭০টির মতো হল চালু রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে মৌসুমি হল কতগুলো খোলে সেটা নির্ভর করছে হল সংখ্যার ওপর। মৌসুমি হল ৫০টিও খুলতে পারে। তারা মৌসুমভিত্তিক ব্যবসা করে বলে এখনই নিশ্চিত করে সংখ্যাটা বলা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে সিনেমা হলগুলো ছবি চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিকই, তবে আগে সিনেমা হল মালিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল-কে কোন ছবি তাদের হলে চালাবেন তা নিয়ে। এখনকার ছবি তেমন চলে না বলে আগ্রহ নেই তাদের মধ্যে। এ ছাড়া বেশির ভাগ সিনেমা হল ভেঙে ফেলা হয়েছে। যেগুলো বন্ধ আছে সেগুলোর বেশির ভাগই ছবি চালানোর মতো পরিবেশ নেই। এবার সব মিলিয়ে ১৫০টির মতো সিনেমা হলে ঈদের ছবি মুক্তি পেতে পারে। সংখ্যাটা বাড়তেও পারে।’ এই কর্মকর্তা ঈদের ছবি নিয়ে খুব একটা আশার আলো দেখছেন না জানিয়ে বলেন, ঈদের সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্র ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়াতে চেইন অব কন্টেন্ট লাগবে। সিনেমা হলের অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে যাতে মানুষ সিনেমা হলে গিয়ে স্বস্তি বোধ করে। তবে এবার ভালো খবর হলো পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গার তীরে চার স্ক্রিন ও ৮০০ সিটের মাল্টিপ্লেক্স চালু হবে। নতুন মাল্টিপ্লেক্স চালু হওয়া ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুখবর।
তথ্যমন্ত্রী বসবেন সিনেমা হল মালিকদের সঙ্গে
দেশে বন্ধ থাকা সিনেমা হলগুলোর মালিকদের সঙ্গে সিনেমা হল খুলতে আলোচনার জন্য বৈঠকে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ খবর জানিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, সিনেমা হল সংস্কার ও নির্মাণে সরকার ঘোষিত এক হাজার কোটি টাকার ঋণ গ্রহণে সিনেমা হল মালিকদের মধ্যে আগ্রহ তেমন দেখা না যাওয়ায় তথ্যমন্ত্রী ঋণ গ্রহণের ইতিবাচক দিক ব্যাখ্যা করতে সিনেমা হল মালিকদের সঙ্গে বসার জন্য সুদীপ্ত কুমার দাশকে জানিয়েছেন। সেই অনুযায়ী এই কর্মকর্তা এখন বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছেন। তিনি জানান, আগামী ১১ মে সেগুনবাগিচাস্থ তথ্য ভবনে এই বৈঠক হতে পারে।