শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : মিশা সওদাগর

শিল্পীদের ঐক্য না থাকলে ইন্ডাস্ট্রি টিকবে না

শিল্পীদের ঐক্য না থাকলে ইন্ডাস্ট্রি টিকবে না

ঢাকাই চলচ্চিত্রে মিশা সওদাগর মানেই অপরিহার্য একজন খলনায়ক। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বড় পর্দায় খলনায়কের ভূমিকায় তার একচ্ছত্র আধিপত্য দর্শক গ্রহণযোগ্যতার কারণেই সম্ভব হয়েছে। চলচ্চিত্র ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে তার বলা কথা তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

 

প্রথমেই জানতে চাই কেমন আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ, সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপায় পরিবার ও কাজের ব্যস্ততা নিয়ে খুবই ভালো আছি।

 

বছরের বেশির ভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রেই কাটান, সেখানেই স্থায়ী হয়ে যাচ্ছেন?

কই না তো, বেশির ভাগ সময় নয়, বছরে মাত্র একবার যাওয়া হয়। তাও প্রথমত আমার পুত্র সেখানে আছে, দ্বিতীয়ত আমি সে দেশের গ্রিনকার্ডধারী বলে ফরমালিটিস রক্ষা করতেই যাওয়া হয়। দেশের বাইরে গিয়ে থাকতে পারি না। নিজ দেশের মাটি, মানুষ, সংস্কৃতি আলো-বাতাস আর ভালোবাসাকে বড়ই মিস করি। বিদেশের মাটিতে কখনো স্থায়ী হওয়ারা ইচ্ছাই আমার নেই। এ দেশে আমি যে সম্মান পাচ্ছি অন্য দেশে কি তা পাব? যে চলচ্চিত্র জগৎ আমাকে আজ অভিনেতা বানিয়েছে সেই জগৎ আর নিজের স্বপ্নের দেশের প্রতি আমার তো অনেক দায়িত্ব রয়েছে। তাই ভিনদেশের তাঁবেদারি করা আমার পক্ষে কখনো সম্ভব নয়।

 

চলচ্চিত্রে এখন আপনার ব্যস্ততা কেমন?

আমার হাতে এখন অনেক ব্যস্ততা। ছটকু আহমেদ, মনতাজুর রহমান আকবর, মান্নু, রাফি, আরটিভির একটি ছবিসহ অনেক কাজ এখন আমার হাতে আছে।

 

সম্প্রতি বেশ কটি ছবি দর্শক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, এ বিষয়ে কী বলবেন?

সালমান শাহর মৃত্যুর পর মুক্তি পাওয়া তার অভিনীত ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবিটি ১৯৯৬ সালে মুক্তি পেয়ে আড়াই মাস টানা চলেছিল। এরপর ছবির সাফল্যে খরা শুরু হয়। অনেক দিন পর ২০০৭ সালে ‘মনপুরা’ ছবিটি ফের সিনেমা হলে সাড়া জাগায়। তারপর মাঝে-মধ্যে দু-একটি ব্যবসা করলেও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছতে পারেনি। সম্প্রতি ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ ছবি দুটির এখনো টিকিট পাচ্ছে না দর্শক, মানে এগুলো বাম্পার হিট। এটি আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি শুভ লক্ষণ। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে দর্শক রুচিকে প্রাধান্য দিয়ে ছবি নির্মাণ করতে হবে। নিজ দেশের প্রেক্ষাপট ও সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়ে সময়োপযোগী গল্পে ছবি নির্মাণ করতে হবে। না হলে দর্শক আবার সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

 

‘দিন দ্য ডে’ ছবির নিমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও যাননি, অথচ ছবিটিতে আপনি অভিনয় করেছেন, গেলেন অন্য ছবি দেখতে, কেন?

আমি দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পরাণ ছবির পরিচালক রাফি ও ছবিটির প্রযোজক আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন। অন্যদিকে অনন্ত আমাকে যখন ফোন দিয়ে যেতে বলে তখন অলরেডি আমি পরাণ দেখছি। তাই ইচ্ছা করে যে আমি ‘দিন দ্য ডে’ দেখতে যাইনি তা তো নয়।

 

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে নায়ক বাপ্পী আপনাকে ‘সুবিধাবাদী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, কী বলবেন?

পরাণ ছবিটি আসলেই প্রশংসা পাওয়ার দাবিদার, তাই এর প্রশংসা করা কি অযৌক্তিক। বাপ্পী একজন জুনিয়র শিল্পী হয়ে সিনিয়রদের প্রতি এমন আচরণ তার জন্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ। এর আগেও সে শাকিব খানসহ অনেক সিনিয়র শিল্পীকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে। আরিফিন শুভকে বলেছে কমেডিয়ান হিরো। এভাবে কাউকে ছোট ও ব্যঙ্গ করে কথা বলার সাহস তার মতো একজন জুনিয়র শিল্পী পায় কীভাবে?

 

বেশ কিছুদিন ধরে চলচ্চিত্রশিল্পীদের মধ্যে বিভাজন দেখা যাচ্ছে, এটি কেন হচ্ছে?

আসলে এগুলো যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তার পরও বলব এই বিভাজন ও অনৈক্য চলচ্চিত্রশিল্পের অবনতি ডেকে আনবে। অতীতে শিল্পীরা পর্দায় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, সেটি কাজের উন্নতির স্বার্থে। আর কাজের বাইরে ছিল একটি পরিবার। তাই সেই সময়কে চলচ্চিত্রের সোনালি যুগ বলা হতো। পরস্পরের প্রতি এই শ্রদ্ধা ঐক্য আর ভালোবাসা ফিরিয়ে আনতে পারলেই চলচ্চিত্রশিল্পের সোনালি দিন ফিরবে। না হয় এই ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হয়ে যাবে।

 

‘দিন দ্য ডে’ বিগ বাজেটের ছবি, এমন ছবি নিয়মিত নির্মাণ কতটা দরকার?

অনন্ত জলিলের দাবি শত কোটি টাকা দিয়ে  ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমি বলব এতে দর্শক হয়তো বিনোদন পেয়েছে, কিন্তু এতে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তো কোনো লাভ হয়নি। আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো- এত বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে তিনি ফিল্ম স্টুডিও, প্রোডাকশন হাউস, ওটিটি প্ল্যাটফরম বানালে অভিজ্ঞ প্রবীণ ও এই সময়ের মেধাবী নির্মাতা, যোগ্য শিল্পী কলাকুশলীরা কাজ করতে পারবেন এবং চলচ্চিত্রশিল্পের প্রভূত উন্নতি হবে। শত কোটি টাকা দিয়ে একটি ছবি না বানিয়ে এই অর্থে বছরে কমপক্ষে অর্ধশত ছবি নির্মাণ করলে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির চেহারা পাল্টে যেতে বাধ্য। এতে অনন্ত জলিল ‘কালচারাল ইমপোর্টেন্ট পারসন’ এবং চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে উঠতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর