বুধবার, ৩১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : চঞ্চল চৌধুরী

চ্যালেঞ্জ থাকার কারণে টেনশনটা বেশিই

চ্যালেঞ্জ থাকার কারণে টেনশনটা বেশিই

বহুমাত্রিক অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। মঞ্চ, বিজ্ঞাপন, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র- সব মাধ্যমেই তিনি দর্শকপ্রশংসিত। যে কোনো চরিত্রে সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতা প্রমাণ করছেন। সম্প্রতি সিনেমা ‘হাওয়া’ ও ওয়েব সিরিজ ‘কারাগার’ দিয়ে মাতিয়ে রেখেছেন এপার-ওপারের দর্শকদের।  তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

‘হাওয়া’, ‘কারাগার’-এর পর নতুন কোনো কাজের অফার?

প্রত্যেক মাসেই অন্তত দুই-একটা কাজের অফার আসে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু পেয়েছি। ভালো গল্প, চরিত্র ও নির্মাতা বুঝেই আসলে কাজ করতে হবে। 

 

শুধু দর্শকরাই নয়, ভারতীয় নির্মাতা সৃজিত মুখার্জিও আপনার অভিনয়ে মুগ্ধ...

হ্যাঁ, সৃজিতদা ‘কারাগার’ দেখে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এবং ওইদিন আমার সঙ্গে টেক্সটে কয়েকবার কথা হচ্ছিল। টেক্সটে আরও মারাত্মক কিছু লিখেছেন... হাহাহা। যেহেতু সেটা পারসোনাল বিষয় সেহেতু তা নিয়ে আমি আর বেশি কিছু বলতে চাই না। তবে যেটা তিনি স্ট্যাটাসে দিয়েছেন, সেটাই আপনারা দেখেছেন। তিনি গুণী নির্মাতা। আমরা যে কাজটি করি, সেটি যদি সত্যিই কারও কাছে ভালো লেগে থাকে তা তো আনন্দের। একজন ডিরেক্টর বা একজন সহকর্মী বা আমার অঙ্গনের কিংবা বিখ্যাত কেউ যদি কাজ নিয়ে বলেন, কমেন্টস করেন- এই অ্যাপ্রিসিয়েশন তো ভালো লাগারই। সৃজিতদা বলেছেন, না বললেও পারতেন কিন্তু। এটা তাঁর উদারতা যে, একটা কাজ দেখার পর শিল্পীকে কীভাবে উৎসাহিত করতে হয় তা তিনি জানেন। এই প্রাকটিসটা খুবই ভালো লাগে। এমন মূল্যায়নে কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানাই সৃজিতদাকে। 

 

ডিজনি-হটস্টার থেকে কোনো কাজের অফার পেয়েছেন?

দেশের অনেক প্ল্যাটফরমেই তো অনেক কনটেন্টে কাজ করেছি। বাংলা কনটেন্টে কাজ করেছি। সারা বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি বাঙালি দর্শকের মার্কেট এটি। হিউজ মার্কেট বলা যায়। জি-ফাইভ বা হইচই আর দেশের চরকি প্ল্যাটফরম নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি করছে। এর সঙ্গে আরও কিছু প্ল্যাটফরম বাংলা কনটেন্ট নিয়ে কাজ করতে চায় বা করবে। ওরকম একটা আভাস পেলাম। এবং  সেখানকার একজন কর্মকর্তা (হুজেফা কাপাডিয়া) ‘কারাগার’ দেখে ভালো লাগায় একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

 

তাহলে কি মুন্না-সার্কিটের সঙ্গী চঞ্চল চৌধুরী! আর রাজকুমার হিরানি নির্মাতা হিসেবে থাকছেন?

না, ব্যাপারটা এমন নয় যে, মুন্না ভাই-থ্রির জন্য স্ট্যাটাসটি! মূলত বাংলাদেশে তাঁরা যে কনটেন্টটি বানাবেন, সেখানে এ দেশের আর্টিস্ট ছাড়াও মুম্বাইয়ের আর্টিস্ট থাকবেন। তাঁরা চেষ্টা করছেন, প্রথম কাজটি রাজকুমার হিরানির দিয়ে করানোর। এটা কনফার্ম কিছু না, প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। ওই বিষয়টাই ডিজনি-হটস্টার কর্মকর্তার স্ট্যাটাসের ভিতরে আছে। তাকে সবাই ভেবেছে মুন্না ভাই-থ্রি! না, সেরকম কিছু নয়।

 

‘হাওয়া’ ও ‘কারাগার’ দিয়ে দর্শক প্রশংসায় ভাসছেন। দর্শকের এই ভালোলাগাকে কীভাবে দেখছেন?

‘হাওয়া’ তো অনেক আগে করা। আর ‘কারাগার’ সাম্প্রতিক সময়ের কাজ। তো একটা কাজ শেষ করার পর সেটা কোন প্ল্যাটফরমে যায় বা হলে মুক্তি পায়, ওই কাজে যতটুক প্রাপ্তি বা ভালো লাগা আমি খুবই উপভোগ করি। আমি তো দর্শকের আনন্দটাই চাই। তবে আমার এখন ওই কাজ দুটো আর মাথায় নেই। আমার মাথায় চাপটা হচ্ছে যে, পরে আমি কি কাজ করব। তা নিয়ে আমার টেনশন যে, এই লেবেলের কাজটাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে ডিফারেন্ট কিছু ও ভালো কিছু কাজ উপহার দিতে হবে দর্শককে। আবার এও ভাবতে হবে, এ দেশের সীমাবদ্ধতার ভিতর দিয়ে কাজটি ভালো করা কতটুকু বা আদৌ সম্ভব হবে কি না। সম্ভব না হলে দর্শক বলবে, ও সে তো সেখানেই শেষ হয়ে গেছে! তিনি সেটির পর আর কিছু করতে পারেননি। তাই ওই চ্যালেঞ্জটা থাকার কারণে টেনশনটা বেশি। পরবর্তীতে কোন প্রজেক্টে বা কোন ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করব বা কি গল্পে কাজ করব, দর্শক তা কীভাবে গ্রহণ করবে- সেটি নিয়েই ভাবছি। ধারাবাহিকতাটা রক্ষা করতে পারব কি না তা নিয়েই আসলে সব টেনশন। এ ছাড়া আমার আর এই মুহূর্তে কোনো বিষয়ে চিন্তা নেই। তবে এই ভালো লাগাকে বলতে পারেন ঈদ বা কোনো বড় উৎসব উদযাপনে যেমন মুড থাকে, ঠিক তেমন। ভালো লাগছে যে, দেশ ও দেশের বাইরের শহরে মুক্তি পাচ্ছে আমার কাজ। ‘কারাগার’ দুই বাংলা মিলে অনেক প্রশংসিত হচ্ছে- এটা ভালো লাগে, আনন্দ দেয় আর কাজে স্পৃহা বাড়ায়।

 

প্রায় সংলাপবিহীন চরিত্র, চ্যালেঞ্জ কেমন ছিল?

চ্যালেঞ্জটি তো খুব কঠিন। এতদিন পর্যন্ত তো ডায়ালগ ছাড়া কোনো অভিনয় করিনি। তা কম হোক বা বেশি। ‘কারাগার’-এ আমার তেমন করে ডায়ালগ নেই। প্রথম সিজনে কোনো কথাই আমার মুখ থেকে শোনা যায়নি। তবে এক্ষেত্রে কিছু সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করেছি। ৮-১০টা স্টোরি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে। সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ কিন্তু প্রপারলি হতে হয়। আমার যা খুশি তাই করে দেখালাম, সেটা করা যায় না। পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ তো দেখবেন, ভুলত্রুটি ধরবেন। সেই ভুল যেন না ধরতে পারেন তাই তিন মাস সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের শিক্ষক রেখে শেখানো হয়েছিল আমাদের মানে আমাকে ও ফারিণকে। শুটিং করার সময়ও সেই সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। আমি তাঁকে রিকুয়েস্ট করেছিলাম থাকতে। ভুল হলে তো সেটা আমার বা আমাদের জন্য বিব্রতকর। এখন তো সবাই সবকিছু ধরতে পারে... হাহাহা। আসলে সবকিছু মিলেই ভালোভাবে কাজটি শেষ করেছি। আর শাওকি তো অনেক ট্যালেন্টেড ডিরেক্টর। যারা তাকদির দেখেছেন তারা তো জানেনই। শাওকি নিজের কাজটাকে ফের অতিক্রম করতে পারার সক্ষমতা রাখেন।

 

হাওয়া নিয়ে জটিলতা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিটিং করেছেন। তিনি কী সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন?

হাওয়ার ব্যাপারে তো আমরা সবাই জানি। সিনেমা ও ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেখানে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে তথ্যমন্ত্রী তাঁর পদক্ষেপে মামলাটা তুলে নিতে বলেছেন তাদের। এবং কারণ জানতে চেয়েছেন, কেন মামলাটা করা হয়েছে! এ বিষয়গুলো নিয়েই কথা হয়েছে। আর যারা মামলাটি করেছেন তাদের সঙ্গে বসে কীভাবে মামলাটি সমাধান করা যায়, সে বিষয়েও মিটিং হয়েছে। এখন আইনগত যে বিষয়গুলো আছে মামলা প্রত্যাহারের জন্য- সেটা নিয়ে সবাই এগোচ্ছে। আমি ধন্যবাদ দিতে চাই তথ্যমন্ত্রীকে যে, তিনি এ বিষয়টি নিয়ে অনেক সোচ্চার ছিলেন ও আমাদের সাহস দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর