রবিবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শনিবার বিকেল ৩ ফেব্রুয়ারির আগেই দেখাব : ফারুকী

আলাউদ্দীন মাজিদ

শনিবার বিকেল ৩ ফেব্রুয়ারির আগেই দেখাব : ফারুকী

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’। গতকাল সিনেমাটি নিয়ে সেন্সর বোর্ডের আপিল শুনানি শেষে ছবির নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপিল বোর্ড সিনেমাটি দেখেছে। শুনানি শেষে আমাকে জানানো হয়েছে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে চিঠি দিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত আমাকে জানাবে। তবে এরই মধ্যে বোর্ডের সদস্যরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন সিনেমাটি মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই। তাই আমার দাবি দ্রুত যেন সিনেমাটির সেন্সর সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, যাতে ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখের আগেই ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি দিতে পারি।

নির্মাতা ফারুকী আবারও বলেন, ‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, ৩ ফেব্রুয়ারি ভারতে ‘ফারাজ’ মুক্তির আগেই ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি দিতে হবে।’

কারণ ‘ফারাজ’ যে ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে, একই ঘটনার অনুপ্রেরণায় অনেক আগেই আমি বানিয়েছি ‘শনিবার বিকেল’।

ফলে ভারতের ‘ফারাজ’ মুক্তির আগেই ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি পাওয়া উচিত। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, যাই ঘটুক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ ৩ ফেব্রুয়ারির আগেই ‘শনিবার বিকেল’ দেখবে। আমি এ দেশের নাগরিক। আমি এ দেশের ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার অনুপ্রেরণা নিয়ে সিনেমাটি বানিয়েছি। যেটা চার বছর হলো দেশের মানুষ দেখতে পায়নি। অথচ বিদেশি একজন চলচ্চিত্রকারও সেই ঘটনারই চিত্রায়ণ করেছেন। তাঁর নির্মিত সিনেমাটি ৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাবে। আমাদের দেশের সিনেমা পাবে না। এটা শুধু দেশের চলচ্চিত্রকারদের আত্মমর্যাদার প্রশ্ন নয়, বাংলাদেশেরও আত্মমর্যাদারপ্রশ্ন।

 

মুক্তিতে বাধা নেই

‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনে এখন আর কোনো বাধা নেই। গতকাল গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন সাংবাদিক ও আপিল বোর্ড সদস্য শ্যামল দত্ত। সিনেমাটি নিয়ে আপিল বোর্ডের শুনানিতে সিনেমার নির্মাতা-প্রযোজকের বক্তব্য শোনেন আপিল কমিটির সদস্যরা; তার আলোকে সিনেমাটি নিয়ে মতামত দেন, ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিতে কোনো বাধা নেই। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সভাপতি ও সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে গঠিত সাত সদস্যের সেন্সর আপিল কমিটিতে সংসদ সদস্য ও বিশিষ্ট অভিনয়শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা, সাবেক অতিরিক্ত সচিব নূরুল করিম, অভিনেত্রী সুচরিতা ও সাংবাদিক শ্যামল দত্ত সদস্য হিসেবে এবং সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান সদস্য সচিব হিসেবে ছিলেন।

 

কী বলেছিলেন সেদিন সেন্সর বোর্ড সদস্যরা

২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ডে ছবিটি প্রথম দেখার পর তখন সেন্সর বোর্ডের জ্যেষ্ঠ সদস্য ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ জানিয়েছিলেন, ‘শনিবার বিকেল’ চলচ্চিত্রটির নির্মাণশৈলী দেখে তাদের ভালো লেগেছে।

বোর্ড কয়েকটি সংলাপ কাটা ও অল্প সময়ের ভিডিও দৃশ্য সংযোজনের পরামর্শ দিয়ে জানিয়েছে চলচ্চিত্রটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। তবে এতে কিছু স্পর্শকাতর বিষয় থাকার কারণে চলচ্চিত্রটি দ্বিতীয়বার প্রদর্শন করা হবে। দ্বিতীয়বারের মতো ‘শনিবার বিকেল’ চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনীতে অংশ নেন বোর্ডের ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তাদের দেখার পর ‘শনিবার বিকেল’ চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশে প্রদর্শনীতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তখন নিষিদ্ধের কারণের বিষয়ে জানতে চাইলে ইফতেখার নওশাদ বলেন, প্রদর্শনী শেষে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি পেলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। সে জন্য সেন্সর ছাড়পত্র স্থগিত করাসহ চলচ্চিত্রটি ‘ব্যান’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেন্সর বোর্ডের বরাতে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, সিনেমাটি ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ওপর নির্মিত। সেখানে দেশের সামরিক, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সদস্যরা যে জীবন দিয়ে অসহায় জিম্মিদের উদ্ধার করেছেন, দুজন পুলিশ সদস্য প্রাণ দিয়েছেন, সেটিই অনুপস্থিত। সে জন্য এই দৃশ্যগুলো সংযোজন করতে বলা হয়েছে। পরে ২০২০ সালে ‘শনিবার বিকেল’ প্রযোজক জাজ মাল্টিমিডিয়া সিনেমাটিতে কিছু দৃশ্য সংযোজিত হয়েছে দাবি করলে বোর্ড সেটি দেখে কোনো সংযোজন পাওয়া যায়নি জানিয়ে দেয়।

 

আন্তর্জাতিক অঙ্গনেশনিবার বিকেল

ইতোমধ্যেই মস্কো ও টরেন্টোসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘শনিবার বিকেল’ প্রদর্শন হয়েছে। বিভিন্ন দেশের নির্মাতা-সমালোচকদের প্রশংসার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে সিনেমাটি নিয়ে ইতিবাচক প্রসঙ্গ। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-ভারত-জার্মান এই ত্রিদেশীয় যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘শনিবার বিকেল’ বাংলা ভাষা ছাড়াও ইংরেজি ভাষায়ও হয়েছে ডাবিং।

এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মামুনুর রশীদ, ইরেশ যাকের, ভারতের পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর