‘নায়কদের নায়ক’ আর ‘মুভি মোগল’ খ্যাত বলিউড অভিনেতা দিলীপ কুমারের আজ দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবস। তার আসল নাম ইউসুফ খান। ১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর পেশোয়ারে জন্ম। ২০২১ সালের ৭ জুলাই মারা যান এ কিংবদন্তি মুভি মুঘল। দিলীপ কুমারের প্রয়াণ দিবসে তাঁকে নিয়ে লিখেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
প্রয়াণ দিবসে স্মরণ
অভিনেতা হতে চাননি দিলীপ কুমার।
অভিনেতা হওয়ার কোনো প্ল্যানই ছিল না ইউসুফ খানের। ভেবেছিলেন পেশাদার ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলোয়াড় হবেন। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি কিছুটা অর্থনৈতিক কারণে। এত বড় সংসার, এতগুলো ভাইবোন। তাঁর ছোট আরও আট ভাইবোন সবার ভরণপোষণ করা একা বাবার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। তাই তাঁকে চাকরি করতে হয়েছে। কিছুদিন কাজ করেছিলেন পুনার আর্মি ক্যান্টিনের সহকারী হিসেবে। কিন্তু ক্যান্টিনের চাকরিতে কোনো ভবিষ্যৎ ছিল না। তিনি অন্য কোনো চাকরি খুঁজছিলেন। তাঁর এক শিক্ষকের মাধ্যমে তিনি চাকরির জন্য যান বোম্বে টকিজ স্টুডিওতে। অভিনেত্রী দেবিকা রানি ইউসুফ খানকে চাকরি দেওয়ার বদলে অভিনয় করার প্রস্তাব দেন। জীবনে কোনো দিন অভিনয় করা তো দূরের কথা, একটা যুদ্ধের তথ্যচিত্র ছাড়া অন্য কোনো সিনেমাও দেখেননি ইউসুফ খান। কিন্তু অভিনয় করলে কিছু টাকা পাওয়া যাবে, অভিনয়টাই তাঁর চাকরি সুতরাং কেন নয়?
কেন নাম বদলাতে হলো
চলচ্চিত্র দুনিয়ায় এসে নাম বদলাতে হলো তাঁকে। তখন ১৯৪৪ সাল। ভারতীয়দের মধ্যে তখন হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ক্রমশ দানা বাঁধছে। নতুন নায়ক ইউসুফ খান বোম্বের সিনেমায় গ্রহণযোগ্য নয়। তাই নাম বদলে দিলীপ কুমার রাখা হলো।
ফ্লপ থেকে সুপারস্টার
১৯৪৪ সালে মুক্তি পেল দিলীপ কুমারের প্রথম সিনেমা ‘জোয়ার ভাটা’। সিনেমাটি চলেনি। দিলীপ কুমারের রিয়েলিস্টিক অভিনয়, নিচুলয়ে সংলাপ বলা পছন্দ করেনি সমালোচকরা। তবুও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি একেবারে ছুড়ে ফেলে দেয়নি দিলীপ কুমারকে। পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যেই তাঁর সিনেমা হিট হতে শুরু করে।
সাংবাদিক প্যাটেলের ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা হলো
বোম্বে টকিজের ১২৫০ টাকা মাইনের ‘আর্টিস্ট’ দিলীপ কুমারের প্রথম ছবি ‘জোয়ার-ভাটা’ ১৯৪৪ সালে মুক্তি পায়। প্রখ্যাত সাংবাদিক প্যাটেল কোদাল দিলীপ কুমারের প্রথম ছবি দেখে রায় দিলেন যে, চলচ্চিত্র-জগতে এ নায়কের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু সময়ের গতি প্যাটেল সাহেবের ভবিষ্যদ্বাণীকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিল। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার বছরে মুক্তি পেল দিলীপ কুমার ও নূরজাহান অভিনীত ‘জুগনু’। সে আমলে এ ছবি বাজার থেকে লাখ পঞ্চাশেক টাকা আয় করেছিল। সুতরাং এর পরে দিলীপ কুমারের উল্কার গতিতে উত্থান রোখে কে। দিলীপ কুমারের কট্টর সমালোচক প্যাটেলকেও দিলীপ কুমারের অভিনয়-প্রতিভার কথা মেনে নিতে হলো।
সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন ‘মেথড অ্যাক্টর’
ছয় দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ৬৩টি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। কিন্তু প্রতিটিতে তিনি নিজেকে পুরোপুরি চরিত্রের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় দিলীপ কুমারকে বলেছিলেন, ‘মেথড অ্যাক্টর’ অর্থাৎ যিনি চরিত্রের সঙ্গে মিশে যান।
গিনেস ওয়ার্ল্ডে স্থান
দিলীপ কুমার অভিনয়ের জন্য এত বেশি পুরস্কার অর্জন করেছেন যে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পেয়েছেন। দিলীপ কুমার আটবার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে। দাগ (১৯৫৩), আন্দাজ (১৯৫৫), দেবদাস (১৯৫৬), নয়া দাউর (১৯৫৭), কোহিনূর (১৯৬০), লিডার (১৯৬৪), রাম আউর শ্যাম (১৯৬৭) এবং শক্তি (১৯৮২) সিনেমার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৯৪ সালে পেয়েছেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। ১৯৯১ সালে পদ্মভূষণ, ২০১৫ সালে পদ্মবিভূষণ।