বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সম্প্রতি সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। এতে চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে কেউ বলছেন ‘ঠিক আছে’, আবার কেউ বলছেন ‘প্রত্যাশা পূরণ হয়নি’। চলচ্চিত্রকার এবং প্রযোজকদের দীর্ঘদিনের দাবি সেন্সর অ্যাক্ট বাতিল হোক। সেই দাবি সরকার পূরণও করেছে, ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর। এরপরও তারা বলছেন, ‘সেন্সর প্রথা বাতিল হোক।’ কারণ তাদের মতে- পুরনো আইনটি বাতিল করে তারা প্রণয়ন করেছে ‘সেন্সর সার্টিফিকেশন আইন-২০২৩’। এটা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো। যা মোড়ক বদল করে পরবর্তীতে ‘সাইবার অ্যাক্ট’ নামকরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে চলচ্চিত্রকারদের মন্তব্য তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ
চলচ্চিত্রনির্মাতারা বলছেন, বিদ্যমান আইনের অধীনে চলচ্চিত্র আমদানি ও রপ্তানি সার্টিফিকেশন, সার্টিফিকেশন সাময়িক স্থগিতকরণ, সার্টিফিকেশন বাতিল ও প্রচার সামগ্রী বাজেয়াপ্তকরণ, যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সার্টিফিকেশন, বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে বিদেশি শিল্পী-কলাকুশলীদের অংশগ্রহণ এবং বিদেশে দৃশ্য ধারণবিষয়ক আইনগুলোও আমাদের শিল্পচর্চা এবং চলচ্চিত্রের বাণিজ্যকে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অথচ অন্য কোনো শিল্পমাধ্যমে এত আইনকানুন নেই। চলচ্চিত্রের গর্দান থেকে এ খড়গ না নামলে এর বিকাশ এবং উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই সেন্সর বোর্ডের পরিবর্তে আমরা ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড চাই। সেন্সরের পরিবর্তে ২০২৩ সালে ফিল্ম সার্টিফিকেশন নামে যে আইনটি হয়েছে সেটিও বাতিল চাই। বাতিল চাই চলচ্চিত্র সংসদ আইনের। এগুলোর জন্য সংশোধন নয়, বরং নতুন আইন চাই আমরা। চলচ্চিত্র অনুদান নীতিমালা, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নীতিমালা, বিসিটিআই আইনসহ সব আইনই চলচ্চিত্রকারদের দাবির আলোকে সংশোধন ও বাতিলপূর্বক নতুন আইন প্রণয়ন করা হোক। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার এবং চলচ্চিত্র শিক্ষক মতিন রহমান বলেন, সেন্সর বোর্ডের নতুন কমিপিট গঠন করা হয়েছে, এতে নতুন কিছু মুখকে নির্বাচন করা হয়েছে। আমি বলব, সরকার নিশ্চয়ই বুঝে-শুনেই তাদের নির্বাচিত করেছেন। তাই আমরা তাদের কাজকর্ম দেখার জন্য অপেক্ষা করি। এখনই ভালো-মন্দ বলা ঠিক হবে না। সেন্সর গ্রেডেশন বোর্ডের বিষয়টি হয়তো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমি বলব নতুনদের কাজ দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করা দরকার। খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার কাজী হায়াৎ বলেন, সেন্সর বোর্ডকে গ্রেডেশন বোর্ড করার জন্য আগেই তথ্য মন্ত্রণালয় সেন্সর বোর্ডের কাছে নির্দেশনা পাঠিয়েছে। সেটি সেন্সর বোর্ড যাচাই-বাছাই করছে। তবে বর্তমানে গঠিত সেন্সর বোর্ড নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। কারণ অতীতে দেখে আসছি যখন যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে তখন দলীয় লোকজনকেই বোর্ডের সদস্য করা হয়। এক সময় আওয়ামী লীগ সাজেদা চৌধুরীকে সেন্সর বোর্ডের সদস্য করেছিল। এখন সেন্সর বোর্ডে কারা সদস্য হয়েছে তা আমার জানা নেই। আমি চাইব গ্রেডিং বোর্ড দ্রুত হোক। সময়ের আলোচিত চলচ্চিত্রনির্মাতা তপু খান আক্ষেপ করে বলেন, আসলে যেমন সেন্সর বোর্ড চেয়েছিলাম তেমনটা পাইনি। কিছু পরিচিত মুখ দেখে হয়তো খুশি হয়েছি কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেমন গ্রেডেশন বোর্ড আছে এটিই আমাদের দাবি ছিল, এ দাবি পূরণ হলে ভালো হতো। আমি চাই সেন্সর বোর্ডে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় অভিজ্ঞ লোক আসুক। যেন কোনোদিকে প্রভাবিত না হয়ে চলচ্চিত্রকে শিল্প ও বাণিজ্য হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে। যদি দলীয় মতাদর্শের লোক সদস্য হয় তাহলে গত ১৬ বছরের মতো নানা ছবি আটকে যাবে। আমি বলব যে কোনো ছবিকে পরিমার্জন করা যায়, ব্যান্ড করা যায় না। এর জন্য অবশ্যই গ্রেডেশন বোর্ড দরকার। যেটা এখনো আমাদের দাবি। জনপ্রিয় চলচ্চিত্রনির্মাতা সৈকত নাসির বলেন, আগেও বলেছি সেন্সর বোর্ড, গ্রেডেশন বোর্ড চাই। যারা নতুন কমিটিতে এসেছেন তাদেরও দাবি ছিল গ্রেডেশন বোর্ডের। আমার প্রশ্ন- তারা তাদের সেই দাবি ভুলে গিয়ে কীভাবে সেন্সর বোর্ডের সদস্য হলেন। আর এরা কোন যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা বা কোন ক্যাটাগরিতে সদস্য হলেন। আমরা সব ক্ষেত্রে সিস্টেম চাই, আর এ সিস্টেমের জন্যই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছি; কিন্তু চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে এভাবে অনিয়ম চলতে থাকলে এ শিল্পের যতটুকু অবশিষ্ট আছে তা-ও নিঃশেষ হয়ে যাবে। দেশের প্রধান এ গণমাধ্যমের এমন ধ্বংস আমরা চাই না। আলোচিত চলচ্চিত্রনির্মাতা রায়হান রাফী বলেন, সারা পৃথিবীতে গ্রেডিং সিস্টেমে সেন্সর হয়। সেন্সর বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালকদের গলা চেপে ধরে বোঝানো হয়, যা ইচ্ছা ভাবতে পারবেন না। এটা বন্ধ করা উচিত। পরিচালক হিসেবে একটি গল্প দর্শককে বলার অধিকার আছে। নতুন বোর্ড নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। আমি শুধু বলব চলচ্চিত্রকারদের গ্রেডেশন বোর্ডের দাবি পূরণ করা হোক।