এবার আরফিন রুমির বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ আনলেন অনন্যার পরিবার। গতকাল বুধবার বিকেলে অনন্যাদের বংশালের বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তার ছোট বোন অঙ্কুরকে আহতাবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তার জ্ঞান ফিরেছে। এখন কিছুটা সুস্থ।
অনন্যার মা পারভিন ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গতকাল বিকেলে অনন্যাকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছিলাম। ছোট মেয়ে অঙ্কুর ঘুমাচ্ছিল। তাই না ডেকে বাইরে থেকে তালা দিয়ে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ আগে বাসায় এসে দেখি ঘরের তালা ভাঙা ও দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকে দেখি হাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় অঙ্কুর পড়ে আছে। গায়ে মারধরের চিহ্ন। অজ্ঞান হওয়ার আগে সে জানায়, বাইরের দরজার নড়াচড়ায় তার ঘুম ভাঙে। ঘর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই-তিন কালো মুখোশধারী তার মুখে কাপড় জড়িয়ে ধরে। বেঁধে ফেলে হাত। এরপর মুখে স্প্রে মারে ও মাথায় আঘাত করে। বাকিটা আর মনে নেই।
অনন্যার মা আরও বলেন, আমার ধারণা রুমির সঙ্গে অনন্যার যে ২০ লাখ টাকার চুক্তিপত্র হয়েছিল সে কাগজ চুরি করতেই মুখোশধারীরা এসেছিল। তাই তো আলমারি থেকে কাপড়-চোপড় এলোমেলো করে রেখে গেছে তারা। যাওয়ার সময় ল্যাপটপ, কয়েক ভরি গহনা ও চার-পাঁচ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। কেন জানি মনে হচ্ছে এই কাজটি রুমির লোকেরাই করেছে। এমনকি কিছুদিন আগেও অনন্যার ওপর হামলা করেছে কতিপয় দুর্বৃত্ত।
অন্যদিকে, এ বিষয়ে জানার জন্য আরফিন রুমির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এছাড়া রুমি-অনন্যার দাম্পত্য কলহের মামলা প্রসঙ্গে অনন্যার মা বলেন, আগামী ১৮ মে আদালতে তারিখ রয়েছে। ওইদিন রুমিকে আদালতে হাজির হতে হবে।
এর অাগে রুমির বিরুদ্ধে সমন জারি হয়। প্রথম স্ত্রী লামিয়া আক্তার অনন্যার অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করায় রুমিকে এ সমন দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
৩০ এপ্রিল রুমির প্রথম স্ত্রী লামিয়া ইসলাম অনন্যা ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কেশব রায় চৌধুরী বাদীর জবানবন্দি গ্রহন করে আগামি ১৮ মে আরফিন রুমিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারী করেছেন। মামলায় দ্বিতীয় বিয়ের কাজি মাওলানা কাজী মো. নাছির উদ্দিনকে মামলায় স্বাক্ষি করা হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় বিয়ের কাবিননামাও আদালতে দাখিল করেছেন তিনি।
২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল আরফিন রুমির সাথে বিয়ে হয় লামিয়া ইসলাম অনন্যার। ২০১০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তাদের একমাত্র পুত্র সামস তাবরীজ আরিয়ানের জন্ম হয়। তার বয়স এখন ৪ বছর। মামলায় বলা হয়, বিয়ের পর থেকেই রুমি লামিয়ার পরিবারের কাছে যৌতুক দাবী করে আসছিল। সর্বশেষ ২০ লাখ টাকা যৌতুক না দিলে রুমি অনন্য বিয়ে করার হুমকি দেয়। লামিয়া বলেন, রুমির চাহিদামতো যৌতুক না দেওয়ায় রুমি ২০১২ সালের ২৪ অক্টোবর আমেরিকা প্রবাসি জনৈকা কামরুননেসাকে দ্বিতীয় বিয়ে করে।
অনন্যা জানান, দ্বিতীয় বিয়ের জন্য রুমি তার কিংবা সালিশি পরিষদের কোন অনুমতি নেননি। আর প্রথম স্ত্রী কিংবা সালিশি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করা ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ৬(৫)(বি) ধারার অপরাধ। এর আগে লামিয়ার দায়ের করা নারী ও শিশু মামলায় গত বছরের ১২ অক্টোবর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা মামলায় মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের নিজ বাসা থেকে ভাই এস এম ইয়াসিন রনিসহ গ্রপ্তোর হন রুমি। ওইদিন শর্ত সাপেক্ষে জামিন পান তারা।
ওই মামলায় স্ত্রী অনন্যা অভিযোগ করেন, ২০১২ সালে আমেরিকা প্রবাসী কামরুননেসাকে বিয়ে করেন রুমি। ওই বিয়ের কিছুদিন পরই দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান তিনি। পাশাপাশি বন্ধ করে দেন ছেলে ও প্রথম স্ত্রীর ভরণ-পোষণ। শুধু তাই না, আমেরিকা থেকে ফিরে ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে রুমি অনন্যাকে নিয়মিত নির্যাতন করতেন ।
দ্বিতীয় বিয়ে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে অনন্যা বলেন, অনেকেই মনে করেন রুমির দ্বিতীয় বিয়েতে আমার সম্মতি ছিল। অনেক পত্রিকায় আমাদের তিনজনের একসঙ্গে ছবিও ছাপা হয়েছে। কিন্তু এর পেছনের রহস্য অনেকেই জানেন না। অনেকটা ব্ল্যাকমেল করেই আমাকে চুপ করে রাখা হয়েছিল। সেই সময় সন্তান আরিয়ানকে তারা আমার কাছ থেকে সরিয়ে নেয়। বলা হয়, কাবিননামায় সম্মতি সই না দিলে আরিয়ানকে আর ফেরত পাবে না। এর পর বেশ কয়েক দিন আমাকে জোর করে আটকে রাখা হয়েছিল, কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। এ রকম অনেক অজানা কাহিনীই রয়েছে, যা বলার মতো নয়। মুখ বুজে সহ্য করে গেছি।