বর্তমানে ব্যস্ততা কেমন?
আমি অভিনেতা মানুষ, ব্যস্ততা তো অভিনয়কে ঘিরেই। নিয়মিত অভিনয় করছি। গাজীপুরে ফাহিমের একটি নাটকের কাজ করলাম। এতে আমার সহশিল্পী রয়েছেন- দিলারা জামান, ফারহানা মিলি প্রমুখ। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে নাটকটি নির্মিত হচ্ছে। প্রতিদিন আমাকে ১০-১২ ঘণ্টা শুটিং করতে হচ্ছে। ধারাবাহিক নাটকের পাশাপাশি বিশেষ দিবসগুলোর নাটকেরও শুটিং করছি। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে ১৫-২০ দিন আমাকে শুটিং করতে হচ্ছে। তবে এতে আমি ক্লান্ত নই। অভিনয় করে আমি কখনো ক্লান্তিবোধ করি না। এখনো উপভোগ করি।
ধারাবাহিকে অভিনয় নিয়ে কিছু বলুন?
বর্তমানে আমি ১২-১৩টি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছি। এর মধ্যে সাত-আটটি ধারাবাহিক বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- 'ক্ষণিকালয়', 'চোর কাঁটা', 'অন্দর মহল', 'পিঞ্জর' ইত্যাদি। এ ছাড়া চারটি নতুন ধারাবাহিকের শুটিং শুরু করেছি। এগুলো হলো- 'মন পুতুলের বায়োস্কোপ', গোলাম সোহরাব দোদুলের একটি, অরণ্য আনোয়ারের একটি এবং পান্থ শাহরিয়ারের একটি। ধারাবাহিকগুলোতে অভিনয়েও ধারাবাহিকতা থাকে। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে শুটিং হয়। সবাই মিলে একসঙ্গে শুটিং করতে করতে ভালো সম্পর্ক হয়। একটা পরিবারের মতো বলা যায়।
নিজের করা অভিনয় দেখা হয়?
আমি চেষ্টা করি শুধু আমার নয়, সব অভিনেতা-অভিনেত্রীর নাটক দেখার। সবসময় দেখার সময় পাই না। নিজের অভিনয় দেখার মধ্যে চেষ্টা করি আমার অভিনয়ের ভুলগুলো বের করার। কিন্তু এখন আর আগের মতো নিজের অভিনীত নাটকগুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছুই শুনতে পাই না। তাই মাঝেমধ্যে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি দর্শক- টিভি নাটক দেখেন তো?
আমরাও জানতে চাই- দর্শক নাটক দেখে তো!
দর্শক কমেছে। খুব খারাপ লাগে। আমাদের নাটকের ঐতিহ্য ছিল। সে সময়ে আমিও অভিনয় করেছি। নাটক প্রচারের পর কী যে হতো! এখন সেই স্মৃতি সুদূর অতীত মনে হয়। মনে হয় অন্য কোনো জনমে বোধ হয় এমনটা হয়েছে। এত তাড়াতাড়ি সব বদলে যাওয়ায় আমার এমন লাগে। এখন এত চ্যানেল! কিন্তু আনুপাতিক হারে নির্মাতা, লেখক, সুঅভিনয়শিল্পী আসেনি। তাই যা হওয়ার তাই হচ্ছে। মান নিম্নমুখী হচ্ছে। তা ছাড়া ভালো নাটক হলেও দর্শক কীভাবে দেখবে? এত বিজ্ঞাপনের অত্যাচার সহ্য করে তো আর নাটক দেখা যায় না। মানুষ বিনোদন পেতে চায়। তারা বিনোদনের জন্য টিভি সেটের সামনে বসে বেদনা নিয়ে ঘুমাতে যায়। এভাবে দিনের পর দিন বেদনা তো বয়ে বেড়ানো যায় না, তাই রিমোট চেপে ভিনদেশী চ্যানেলে ঝুঁকে পড়ছে। একদিন-দুই দিন করে একদিন ভিনদেশী চ্যানেলেই তারা বিনোদন পেতে শুরু করে। খুব দ্রুত এ অবস্থার উন্নতি না হলে আমাদের খুব খারাপ সময় আসবে। সুতরাং এখনই সবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
বর্তমান সময়ের অভিনয় নিয়ে কিছু বলুন।
আমাদের অভিনয় জগতে এখন অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী এসেছে। এদের মধ্যে অনেকেই ভালো করছে। কিন্তু কষ্ট লাগে যখন দেখি গৎবাঁধা চরিত্রে দুই-তিনটি নাটক করে অনেকেই নিজেকে অভিনয়শিল্পী বলে থাকেন। যা অভিনয়শিল্পের জন্য রীতিমতো হুমকিস্বরূপ। তাই আমার আকুল আবেদন অর্থ কিংবা যশ-খ্যাতির জন্য নয়; শিল্পীসত্তাকে ভালোবেসে অভিনয় করা উচিত।
ইদানীং গণমাধ্যমগুলো কোনো নাটক প্রচার হওয়ার আগেই তা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি করছে। কিন্তু এটি প্রচারের পর কতটুকু দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করছে, সে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। তবে আমি মনে করি, কোনো নাটক প্রচার হওয়ার পরই কেবল তা নিয়ে লেখালেখি করা উচিত। সমালোচনা করা উচিত। মিডিয়া তো নাটকের সমালোচনা করেই না এখন। তাহলে মিডিয়ার কাজ কী? সমালোচনা করলে সবাই নিজেকে শোধরাতে পারত। সমালোচনা না থাকলে উন্নতি আসে না। ফাঁকা মাঠ পেয়ে সবাই নিজেকে সেরা ভাবছে।
আলী আফতাব