শাবানা
১৯৯৫ সালে সালমানের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করি ছটকু আহমেদ পরিচালিত 'সত্যের মৃত্যু নেই' ছবিতে। এটিই বড় পর্দায় মায়ের চরিত্রে আমার প্রথম অভিনয়। ওর সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে তার দুটি রূপ দেখেছি- দুরন্ত আর চঞ্চল একটি ছেলে। ছবির সেটে সে সবাইকে হাসি-খুশিতে মাতিয়ে রাখত। আরেকটি হলো-ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো সিরিয়াস একজন শিল্পী। দুভাবেই তার অসাধারণত্বে আমি অভিভূত হয়েছি। সে শুধু ছবিতেই আমার ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেনি, বাস্তবেও আমার মনে সন্তানের স্থান দখল করে নেয়। তার কথা মনে করে এখনো নীরবে কেঁদে উঠি।
ববিতা
সালমানের মধ্যে শিশুসুলভ সরলতা ছিল। আমার সঙ্গে মাত্র তিনটি ছবিতে অভিনয় করেছিল। আমাকে মায়ের মতোই শ্রদ্ধা করত। ডাকত প্রিটি মাদার বলে। স্বপ্নের পৃথিবী ছবির আউটডোরে শুটিং চলছিল। সালমান যে চেয়ারটিতে বসেছিল তা খুব পছন্দ হয় আমার। ওকে বললাম, বাহ তোমার চেয়ারটা তো খুব সুন্দর। এ কথা শোনার পর আর এক মিনিটও তাতে বসেনি সে, সঙ্গে সঙ্গে তা আমাকে গিফট করল। এখনো পরমযত্নে আগলে রেখেছি। ওর কথা মনে পড়লেই ছুঁয়ে দেখি চেয়ারটা।
শাবনাজ
সালমান আমাকে ভাবী বলে ডাকত। ও কোথাও বেড়াতে গেলেই নাঈম ও আমার জন্য চমৎকার সব উপহার নিয়ে আসত। ওর মধ্যে আবেগ ছিল বেশি। নিজের ব্যাপারে খুব উদাসীন ছিল সালমান। ওর অ্যাজমা ছিল। তারপরও খুব ধূমপান করত। একবার কার সঙ্গে যেন রাগ করে সিগারেট দিয়ে নিজের হাত পুড়িয়েছিল। আরেকবার অ্যাজমার কারণে 'আশা ভালোবাসা' ছবির শুটিং করতে গিয়ে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ল। নিজের প্রতি অবহেলার জন্য বকা দিতাম ওকে। আহ্লাদি হয়ে বলত 'ভাবী আর করব না'। মৃত্যুর পর ওর মুখ দেখিনি। কারণ সালমানের চির হাসিমাখা মুখটি নিজের মধ্যে চির অমলিন করে রাখতে চেয়েছি।
মৌসুমী
সালমানের মতো এমন আন্তরিক সহশিল্পী আর হয়তো পাব না। চরিত্রের ভিতর গিয়ে চিন্তা করত কীভাবে অন্যদের চেয়ে আলাদা হওয়া যায়, কীভাবে পোশাক-আশাকে ভিন্নতা আনা যায়।
আমরা বন্ধু ছিলাম। একদিন সালমানের ওপর রাগ করে শুটিং না করেই বাড়ি ফিরে এসেছি। ও আমার বাড়ির গেটে এসে একনাগাড়ে গাড়ির হর্ন বাজাচ্ছিল। পাগলামি দেখে আর রাগ করে থাকতে পারিনি। আরেকবার আমার প্রচণ্ড জ্বর হলো। খবর পেয়ে বৃষ্টির মধ্যে একঝুড়ি আনারস নিয়ে হাজির। সালমান আজ বেঁচে থাকলে আমাদের চলচ্চিত্র অন্য এক অবস্থানে পৌঁছে যেত।
শাবনূর
সালমান আমার ভালো বন্ধু ছিল। সে ছিল প্রচণ্ড অভিমানী আর জেদি। তুচ্ছ কোনো বিষয়ে সহজেই মন খারাপ করত। এখনো ওর ওপর আমার প্রচণ্ড রাগ হয়। কী এমন অভিমান ছিল যে আত্দহননের পথ বেছে নিতে হলো তাকে!
সালমান অবসর পেলে এবং আমার হাতে কাজ না থাকলে ও আমার বাসায় অথবা আমি তার বাসায় ছুটে যেতাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মজার মজার গল্প করে সময় কাটাতাম। অভিনয়কে কীভাবে আরও পরিপক্ব করা যায় তা নিয়েও আলাপ করতাম। সালমানের শূন্যতা এখনো আমাকে বড় কষ্ট দেয়।