ফিরোজা বেগম নজরুলসংগীতের সম্রাজ্ঞী। নজরুল সংগীত জনপ্রিয় হয়েছে তার হাত ধরেই। উপমহাদেশে তিনিই প্রথম অল-ইন্ডিয়া রেডিওতে নজরুলের গানের অনুষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক করেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তার সান্নিধ্যে গানও গেয়েছেন।
সম্ভবত ১৯৪১ সালে গ্রীষ্মের ছুটিতে ছোট মামা আর চাচাতো ভাইদের সঙ্গে ফিরোজা বেগম কলকাতায় গিয়েছিলেন। স্বজনরা কলকাতায়ই থাকতেন। ফিরোজা বেগম তখন ছোট। বয়স বেশি হলে ১১ বছর হবে। তবে নিয়মিত গান-বাজনা করতেন। একদিন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বড় বড় কর্মকতাদের এক গানের আসরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গান করতে। উপস্থিত সবার সামনে 'যদি পরানে না জাগে আকুল পিয়াসা' গানটি গেয়েছিলেন তিনি। সেই আসরে ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামও। মুসলমান পরিবারের মেয়ে হয়ে গান করছেন ফিরোজা; শুনে দারুণ খুশি হয়েছিলেন নজরুল ইসলাম। ওটাই ছিল কবির সঙ্গে শিল্পীর প্রথম সাক্ষাৎ।
১৯৪২ সালে সে সময়ের বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে মাত্র ১২ বছর বয়সে ফিরোজা বেগমের প্রথম রেকর্ড বের হয়েছিল। চিত্ত রায়ের তত্ত্বাবধানে তখন তিনি গেয়েছিলেন 'মরুর বুকে জীবনধারা কে বহাল' গানটি। কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ড বের হলো। কিছুদিনের মধ্যেই পরপর চারটি রেকর্ড বের হলো তার। বরাবরই কঠিন সুর শেখার প্রতি তার বেশি ঝোঁক ছিল।
দীর্ঘ সময় চিত্ত রায় ও কমল দাশগুপ্তের কাছে গান শিখেছেন ফিরোজা বেগম। কমল দাশগুপ্তের কাছ থেকে অনেক ধরনের গান শিখেছেন। একসঙ্গে গান-বাজনা এবং নিয়মিত গানের চর্চা হতো। প্রায়ই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সান্নিধ্যেও গান করতে হয়েছে। পরিবারের কাছ থেকে গান-বাজনা করার জন্য বেশ উৎসাহ পেতেন ফিরোজা বেগম। তাই হয়তো গান-বাজনা করতে তার কোনো বাধা ছিল না।
১৯৫৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত টানা ১৩ বছর কলকাতায় ছিলেন ফিরোজা বেগম। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় সুরকার কমল দাশগুপ্তের। ১৯৫৬ সালে তারা বিয়ের বন্ধনে জড়ান। তাদের এ বিয়ে প্রথমে মেনে নেয়নি পরিবার। তাদের তিন সন্তান তাহসিন আহমেদ, হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমেদ কলকাতায়ই জন্মেছেন। সংসার সামলাতে গিয়ে প্রায় পাঁচ বছর গান থেকে দূরে ছিলেন ফিরোজা বেগম।
শেষ বয়সে বয়সের ভারে গান-বাজনায় আগের মতো সময় দিতে পারতেন না ফিরোজা বেগম। কিছুদিন আগেও নবীন কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তিনি নজরুলসংগীত শেখাতেন। গান-বাজনা না করলেও নিজের গানের রেকর্ড কিংবা গানের স্বরলিপিগুলো নিজ হাতেই গুছিয়ে রাখতেন ফিরোজা বেগম।