কবির সান্নিধ্য পেয়েছিলেন কীভাবে?
আমার বয়স তখন এগারো-বারো হবে। আমরা থাকতাম ফরিদপুরে। বিভিন্ন ছুটিতে কলকাতা বেড়াতে যেতাম। আমার দুই কাজিনের সঙ্গে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সুনীল বোসের সুসম্পর্ক ছিল। এক অনুষ্ঠানে সুনীল বোস আমার গান শুনে বললেন, 'ওকে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে এক দিন নিয়ে এসো তো। ওর অডিশন নেব।' একদিন ভাই আর মামা মিলে আমাকে এইচএমভিতে নিয়ে গেলেন। রিহার্সেল রুমে ঢুকেই দেখলাম ঘরভর্তি মানুষ। ওই ঘরে ঢোকার পর যার পাশে আমাকে বসতে বলা হলো, তিনি ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। এভাবে তার সান্নিধ্যে যাই।
আপনি কী গান শুনিয়েছিলেন?
'যদি পরাণে না জাগে আকুল পিয়াসা'। গান শেষ করে চলে আসব তখন কাজী নজরুল আমাকে হাত টেনে ধরে বসালেন। বললেন, 'ওরে সর্বনাশ! এ কী গান শোনালে তুমি। এতটুকু মেয়ে এ গান কীভাবে, কোথা থেকে শিখলে?' আমি বললাম, 'কারও কাছ থেকে নয়। বাড়িতে কালো মোটা ভাঙা ভাঙা রেকর্ডগুলো আছে না, ওইগুলো শুনে শুনেই শিখেছি।' উনি আবারও হো হো করে হেসে উঠলেন। তারপর তিনি আমার বাবা-মা, বাড়ি কোথায় ইত্যাদি জিজ্ঞেস করলেন। উত্তর দিলাম। এরপর বললেন, 'এত কঠিন গান তুমি একা একা তুলেছ। বলো কী, এত মিষ্টি কণ্ঠে মাত্র একটা গান শুনে কি ছাড়া যায়? আমরা কি আরেকটা শুনতে পারি না?' তার কথায় আমার প্রচণ্ড অস্বস্তি আর বিরক্ত লাগছিল। মাথা নেড়ে বললাম, 'না'। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, আমি হারমোনিয়াম বাজাতে পারি কিনা? আমি মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ। একটা হারমোনিয়াম টেনে আমার সামনে দিলেন। আমি দ্বিতীয় গান ধরলাম, 'কালো পাখিটা মোরে কেন করে এত জ্বালাতন'। গানটির অর্ধেক গেয়ে বললাম, আর গাইতে পারব না। নজরুল ইসলাম বললেন, 'ঠিক আছে, যা গেয়েছ তাতেই আমরা অবাক।'
প্রথম রেকর্ড কবে প্রকাশিত হয়?
১৯৪২ সালের ডিসেম্বর মাসে এইচএমভি থেকে সেভেন্টি এইটে আমার প্রথম রেকর্ড বের হয়। তখন আমার বয়স ১২ বছর।
গ্রামোফোন থেকে পরপর চারটি রেকর্ড বের হয়েছিল।
১৯৪৯ সালে গ্রামোফোন কোম্পানি আমার গলায় নজরুলের গান রেকর্ড করতে রাজি হয়। তখন 'আমি গগন গহনে সন্ধ্যাতারা...' গেয়েছিলাম। পুজোর রেকর্ডের ক্ষেত্রেও আমি একই সিদ্ধান্তে অবিচল ছিলাম। ১৯৬০ সালে পুজোয় সেই রেকর্ড বেরোয়। সেই রেকর্ডে 'দূর দ্বীপবাসিনী' আর 'মোমের পুতুল' গান দুটি গেয়েছিলাম। রেকর্ড বের হওয়ার পরবর্তী তিন মাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছিল আমার রেকর্ড। ১৯৬১ সালে আমার গাওয়া নজরুলসংগীত নিয়ে লংপ্লে রেকর্ড বেরোয়।