কেমন আছেন?
এই তো ভালো আছি। ছবি এবং নাটকে অভিনয় করি, বই পড়ি, টিভি দেখি। এভাবেই সময়গুলো কেটে যাচ্ছে। আসলে জীবন তো একটি বহতা নদীর মতো, যার কাজ হলো নিরন্তর ছুটে চলা। তাই আমাদেরও জীবনের তাগিদে অনন্তকাল ছুটে চলতে হয়।
সম্প্রতি আপনার অভিনীত 'বৃহন্নলা' ছবিটি মুক্তি পেল, এতে আপনার অভিনয় সম্পর্কে কিছু বলুন-
অভিনয় সম্পর্কে বলার আগে এ বিষয়ে একটি দুঃখের কথা বলতে চাই। গত সপ্তাহে ছবিটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। কিন্তু এতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আমার খুব ইচ্ছা ছিল প্রিমিয়ার শোতে সবার সঙ্গে বসে ছবিটি কেমন হয়েছে এবং এতে আমি কেমন কাজ করেছি তা দেখার। আসলে সিনিয়র শিল্পীদের কথা এখন কেউ মনে রাখতে চায় না। বেঁচে থাকতেই তাদের খোঁজখবর নেয় না আর মরে গেলে তো দেখতেও আসে না। এ বিষয়গুলো আমাদের মতো সিনিয়র শিল্পীদের খুব কষ্ট দেয়।
আর 'বৃহন্নলা' ছবিতে আমার চরিত্র ছিল একজন বিধবার। সুন্দর গল্প, চমৎকার চরিত্র। চেষ্টা করেছি ভালো কাজ করার।
এর আগে 'মনপুরা' ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন, এ বিষয়ে কিছু বলুন।
আসলে 'মনপুরা' ছবির গল্প ছিল অন্য দশটি প্রেমের ছবির গল্পের মতো অতি সাধারণ। কিন্তু এ ছবির নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম অত্যন্ত মেধাবী একজন মানুষ। তার দক্ষ নির্দেশনা, গল্প বিন্যাস, চিত্রায়ণের কাজ, অভিনয় আদায় করে নেওয়া সব কিছুতেই মুনশিয়ানা ছিল বলে সাধারণ গল্পের একটি ছবি অসাধারণ হয়ে উঠেছিল। আমিসহ এই ছবির নির্মাতা, অন্য শিল্পী এবং কলা-কুশলীরা জাতীয় সম্মান পেয়েছি। পাশাপাশি অপ্রত্যাশিত দর্শক সাড়া পেয়েছে 'মনপুরা'।
ছোট পর্দায় কাজের ব্যস্ততা এখন কেমন?
এই মুহূর্তে ঈদের জন্য ফেরদৌস রানার দুটি, আশফাক নিপুণের একটি, শাহরিয়ার শাকিলের একটিসহ বেশ কিছু নাটকে কাজ করছি।
নাটকের মান এখন কেমন?
দেখুন, আমি তো সেই পাকিস্তান আমল থেকে নাটকে অভিনয় করছি। এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার নাটকে কাজ করলাম। তখন আর এখনকার নাটকের মধ্যে পার্থক্য অবশ্যই আছে। কিন্তু এই পার্থক্যে নেতিবাচক কিছু নেই। তবে নাটকের মান এখন নেই যদি কেউ বলে তাহলে আমি বলব, এই ব্যর্থতা কারও একার নয়। কারণ প্রযুক্তি আর টিভি চ্যানেল বাড়লেও বাজেট ও সময় বাড়েনি। বিজ্ঞাপন প্রচারের হারও বেড়েছে। এতে দর্শকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে। একই সঙ্গে নাটক নির্মাণকে এখন প্রফেশন হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। আগের নাট্যকার ও শিল্পীরা অন্য পেশার পাশাপাশি নাটককে মন ও মননের অংশ হিসেবে গ্রহণ করত। তাই এতে জীবনের ছোঁয়া পুরোমাত্রায় থাকত। তবে এখন নাটক নির্মাণে নতুন প্রজন্ম যেভাবে এগিয়ে আসছে তাতে আমি সুদিনের হাতছানি দেখতে পাচ্ছি।
আবার বিদেশে ফিরে যাবেন?
না, আর যেতে ইচ্ছে করে না। কারণ এ দেশের মাটি, মানুষ, প্রকৃতির মতো আন্তরিকতা আর কোথাও নেই। তাই যখন বিদেশে ছিলাম তখন দেশের মায়ার অভাবে জানালার শিক ধরে অঝোরে কাঁদতাম। বড় মেয়ে কানাডা আর ছোট মেয়ে ওকলাহোমায় থাকে। ওরা সব সময় বলে মা তুমি চলে এসো, আমি বলি ওখানে তো মাটির মায়া ও মানুষের মমতা নেই। যা আছে সবই বাংলাদেশে। তাই বাকি জীবনটা প্রিয় এই জন্মভূমিতেই কাটাতে চাই।
আলাউদ্দীন মাজিদ