চলচ্চিত্রপাড়ায় শীর্ষ তিন তারকা শাকিব খান, অপু বিশ্বাস এবং মাহিয়া মাহিকে নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। কারও স্টান্টবাজি আবার কারও অপেশাদারি আচরণ নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় উঠেছে বেশ। গত এক সপ্তাহে তিন তারকা ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা জন্ম দিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচিতই হচ্ছেন বেশি।
চলতি সপ্তাহে নায়িকা মাহি ফেসবুকে বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়ে অস্থিরতার জন্ম দিয়েছেন। তার দেওয়া স্ট্যাটাসের সারমর্ম ছিল প্রেমে ব্যর্থ হয়ে চলচ্চিত্র ছাড়ছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবেন এবং সেখানেই স্থায়ী হবেন। আবার বলছেন উচ্চশিক্ষার জন্যই তার এই যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা। চলচ্চিত্রকারদের কথায় যদি তাই হয় তাহলে হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত কেন? এরই মধ্যে অনেক ছবিতে চুক্তিবদ্ধ এবং কাজও করছেন তিনি। তা ছাড়া গত সপ্তাহেই ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন তিনি। চলচ্চিত্রকাররা বলছেন মাহির চলচ্চিত্র ছাড়ার ঘোষণা স্ট্যান্টবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ পর পর তার মুক্তি পাওয়া বেশকটি ছবি সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। কলকাতার সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত মাহি অভিনীত 'রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট' ছবিটি ওপার বাংলায় মুখ থুবরে পড়েছে। এর আগে মুক্তি পাওয়া 'দেশা' ছবিটিও সুপার ফ্লপ হয়। তা ছাড়া সত্তরের দশকে নির্মিত 'ময়নামতি' ছবির ছায়া অবলম্বনে নির্মিত 'অনেক সাধের ময়না' ছবিটি মাহির দুর্বল অভিনয়ের কারণে সাড়া জাগাতে পারেনি। এসব ব্যর্থতার কারণে নিজেকে আলোচনায় আনার জন্য স্ট্যান্টবাজির আশ্রয় নিয়েছেন মাহি। এ অভিযোগ চলচ্চিত্রকারদের। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মাহিকে নিয়ে কাজ শুরু করা নির্মাতারা।
সম্প্রতি আরেকটি ঘটনার জন্ম দিয়েছেন অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস। খোরশেদ আলম খসরু প্রযোজিত ও এস এ অলিক নির্মিতব্য 'আরও ভালোবাসবো তোমায়' ছবিতে অভিনয়ের জন্য চলতি সপ্তাহে মৌখিকভাবে চুক্তিবদ্ধ হন অপু। সেই হিসেবে সব কিছু চূড়ান্ত করছিলেন নির্মাতা। ১০ ফেব্রুয়ারি ছবির মহরত হওয়ারও কথা। কিন্তু হঠাৎ করেই নির্মাতাকে জানিয়ে দেন অপু এই ছবিতে কাজ করবেন না। এস এ হক অলিক বলেন, তার এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছি। দুটি কারণে অপু হয়তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রথমত তিনি শর্ত দেন এই ছবিতে অভিনয়ের বিষয়টি যেন মিডিয়া এখনই জানতে না পারে। কিন্তু ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ ছবিতে পরীমণিকে নেওয়াটা হয়তো মেনে নিতে পারেননি অপু। অলিক বলেন, এখন কি করব ভেবে পাচ্ছি না। কারণ গল্পের প্রয়োজনে অপুকে দরকার। ছবির গল্প গড়িয়েছে অপু ও শাকিবের অভিনয় জীবন নিয়ে। বলতে পারেন মহা ঝামেলায় পড়েছি এখন। চলচ্চিত্রকাররা বলছেন বিষয়টি অনেকটা জিম্মি করার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপুর মতো একজন শীর্ষ নায়িকার ক্ষেত্রে নির্মাতাকে এভাবে জিম্মি করাটা মোটেও শিল্পীসুলভ আচরণ নয়। চলচ্চিত্রকারদের কথায় বর্তমানে চলচ্চিত্রে অপুর কদর আগের মতো নেই। তাই তিনিও হয়তো স্ট্যান্টবাজির আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হলো চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এতে সভাপতি পদে জয়লাভ করেন নায়ক শাকিব খান। নির্বাচনের পর একটি পত্রিকায় প্রকাশিত 'শাকিবের কাণ্ড' শিরোনামে একটি সংবাদ পড়ে ক্ষুব্ধ হয়েছে চলচ্চিত্র পরিবার ও সাধারণ মানুষ। নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বেশ কজন চলচ্চিত্রকার বলেন, মদ পান করে ওইদিন রাতে এফডিসিতে শাকিবের মাতলামির কথা সংবাদে প্রকাশ হওয়ায় সাধারণ মানুষের চোখে পুরো চলচ্চিত্র পরিবারই হেয় হয়েছে। ওই রাতে সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকারদের উপস্থিতিতেই শাকিব এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটান। একজন নির্বাচিত নেতার পক্ষে এমন আচরণ মোটেও শোভন ছিল না। চলচ্চিত্রকারদের অভিযোগ গত মেয়াদে শাকিব শিল্পী সমিতির সভাপতি থাকা সত্ত্বেও অনেক অসুস্থ শিল্পী ও নির্মাতাকে দেখতে হাসপাতাল বা বাসায় যাননি। এমনকি অনেকের মৃত্যুর পরে তাদের জানাজায়ও অংশ নেননি, শুটিংও বন্ধ রাখেননি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুজন হচ্ছেন প্রখ্যাত অভিনেতা প্রয়াত আনোয়ার হোসেন এবং নির্মাতা প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলাম। চলচ্চিত্রকারদের কথায় চাষী নজরুল ইসলাম তার 'সুভা' ও 'দেবদাস' ছবিতে শাকিবকে কাস্ট করে তাকে লাইমলাইটে এনে দিয়েছিলেন। অথচ চাষী নজরুলের মৃত্যুর খবর পাওয়া সত্ত্বেও শাকিব সিলেটে দিব্যি শুটিং করেছেন। চলচ্চিত্র জগৎ এমনিতেই ক্রান্তিকালে রয়েছে। তার ওপর শিল্পীদের এমন অপেশাদারি আচরণ বা স্ট্যান্টবাজি এ জগৎকে আরও গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। সবাই এ স্ট্যান্টবাজি থেকে মুক্তি চান- এ মন্তব্য চলচ্চিত্রকারদের।