'নিজেকে এভাবে দেখব তা কখনও কল্পনাও করিনি। আমার মতো মেয়ের বিরুদ্ধেও দেওয়া হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। কারণ একটাই, করিনি কোনো আপস। মূলত মারুফ খানের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতেই বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়ায়।' বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে অশ্রুভেজা কণ্ঠে নিজের আবেগ এমনভাবেই প্রকাশ করলেন মডেল ও অভিনেত্রী ঈশানা।
গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে টক অব দ্য মিডিয়ায় পরিণত হন এই অভিনেত্রী। প্রযোজক ও অভিনেতা মারুফ খান প্রেমের দায়ের করা একটি মানহানির মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় ঈশানার বিরুদ্ধে।
এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি মানহানির অভিযোগে ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন প্রেম। ওইদিন আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ঈশানাকে ২২ মার্চ আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন। মঙ্গলবার ঈশানা আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ পরোয়ানা জারি হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ঈশানা বলেন, 'মামলার এজাহারে বলা হয়েছে গত ৭ জানুয়ারি উত্তরার নীলাঞ্জন শুটিং স্পটে নাটকের শুটিংয়ের সময় বাদীর অনুপস্থিতিতে তাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছি আমি। একইসঙ্গে ফেসবুকেও প্রেমকে নিয়ে একটি মানহানিকর স্ট্যাটাস দিয়েছি বলে অভিযোগ করা হয়। এতে বাদির মানহানি হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মামলার নেপথ্যে আরও অনেক কিছুই রয়েছে।'
ঈশানা বলেন, 'এ বিষয়টা ঐ দিনই শুটিংস্পটে সুরাহা হয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় পুলিশের এক অফিসারের সমঝোতায় সেখানেই ইতি ঘটে এই ঘটনার। অথচ এই তিলকেই তাল করে ছাড়ল। একটু খোঁজ নিয়ে দেখবেন মারুফ খানের ইতিবৃত্ত।'
ঠিক বুঝলাম না একটু পরিষ্কার করে বলবেন কি? এমনটা জানতে চাইলে ঈশানা বলেন, 'সবকিছু খুলে বলতে হয় না, কিছুটা বুঝে নিতে হয়। কিন্তু হাতের পাঁচ আঙ্গুল এক রকম নয়। আমি কেমন মেয়ে সেটা আপনারাই ভাল জানেন। প্রতিবাদ করেছি বলেই আজ মামলার মুখে পড়েছি। আমিও এর জবাব কোর্টেই দেব।'
তাহলে মঙ্গলবার কেন কোর্টে গেলেন না? ঈশানা বলেন, 'আমি জানতামই না পুরো বিষয়টা। এটা সত্যি যে, ফেব্রুয়ারি মাসের ১ম সপ্তাহে কয়েকটি অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় খবরটি দেখি। কিন্তু কোনোরকম সমন পাইনি। একটু অবহেলা হয়ে গেছে আর কি, যেটা মোটেও উচিত হয়নি। দু'একদিনের মধ্যে আদালতে জামিন চাইব।'
ঈশানা আরো বলেন, 'এরই মাঝে মারুফ আমার সঙ্গে সমঝোতায় আসতে চেয়েছিল। ওই সময় কি বলেছিল তা প্রকাশ করার মতো নয়। তবে এতটুকু বলতে পারি নিজের বিবেককে বিক্রি করে কোনো কাজ করতে রাজি নই।'
এদিকে ঈশানার মা নীলিমা ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'এ ধরনের খড়গ আমার পরিবারে নামবে সেটা চিন্তাও করিনি। আমার মেয়ে ঈশানা কেমন সেটা আপনারা ভালো করেই জানেন। শুধু এতটুকু বলতে পারি ঈশানা ব্যক্তি আক্রোশের শিকার।'
অন্যদিকে মারুফ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'নিজের ব্যক্তিত্ব নিয়ে আঘাত করলে ছাড় দেওয়ার লোক নই আমি। অনেকটা বাধ্য হয়েই কোর্টপাড়ায় গিয়েছি।"
যে বিষয়টি শ্যুটিং স্পটেই সুরাহা হলো তা আবার মামলায় গড়ালো কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে মারুফ বলেন, 'স্পটে সুরাহা হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ঈশানা। যেখানে সামাজিকভাবে হেয় করা হয় আমাকে। তাই মামলার সিদ্ধান্ত নিই।'
কিন্তু ঈশানা তো বলছে আপনাকে উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দেয়নি। এমনটা বললে মারুফ বলেন, 'পরে হয়তো এডিট করতে পারে কিন্তু প্রিন্ট করে আমি তা আদালতে জমা দিয়েছি। তারও বোঝা উচিত অমারও আত্মসম্মানবোধ আছে।'
সমঝোতার প্রস্তাবে নাকি বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলেছেন? এমন অভিযোগের প্রত্যুত্তরে মারুফ বলেন, 'আপত্তিকর কিছু বলিনি। তবে এটা বলেছি আমাকে যেহেতু সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে, ঈশানাও যেন ফেসবুকে ক্ষমা চায়। এখানে আপত্তির কি দেখলেন? তাছাড়া মামলার পর সে-ই আমার বন্ধু-বান্ধবদের মাধ্যমে সমঝোতার প্রস্তার রাখে। কিন্তু এখনও মনে হচ্ছে ঈশানা উল্টোপথেই হাঁটছে।'
উল্টোপথে? সেটা আবার কি?- 'এখনও সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে সে বিভিন্নজনের কাছে আমাকে নিয়ে নানা অপব্যাখ্যা দিচ্ছে যা মোটেও কাম্য নয়। তাই গত ৩ মার্চ তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় ঈশানার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছি। এছাড়া, শতভাগ জোর দিয়ে বলতে পারছি না, তবে বিভিন্ন নাম্বার থেকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। যেদিন শতভাগ নিশ্চিত হবো, সেদিন আরও একটি মামলা করবো। "