রাতে অফিস সেরে বাসায় ফিরলেন। গ্যারেজে গাড়ি পার্ক করে দরজা খুলে বের হতেই পায়ের নিচে কিছু নড়ে উঠল। তাকাতেই রক্ত হিম হয়ে গেল। দেখলেন সামনে ফণা তুলে দাঁড়িয়েছে একটি গোখরা সাপ। কেমন লাগবে তখন? কয়েক মাস ধরে রাজধানীর অনেক বাসিন্দা এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন।
ইট-পাথরের রাজধানী ঢাকার বাসাবাড়িতে হঠাৎ বেড়েছে সাপের উপদ্রব। অধিকাংশই বিষধর সাপ। ফ্ল্যাটের ভিতরে, গ্যারেজে, এমনকি বহুতল ভবনের ৮-৯ তলায় পাওয়া যাচ্ছে সাপ। গত চার মাসে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৫১টি সাপ উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সাপের কামড়ের খবর পাওয়া যায়নি।
সংস্থাটির আহ্বায়ক আদনান আজাদ জানান, অধিকাংশ সাপ উদ্ধার করেছেন বনশ্রী, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, বসিলা, উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টর, খিলগাঁও, কচুক্ষেত, মিরপুর-২, নিকেতন, উত্তরখান ও দক্ষিণখান থেকে। সবচেয়ে বেশি সাপ পাওয়া গেছে উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউকের ফ্ল্যাট প্রকল্পে। বনশ্রী ও খিলগাঁও এলাকাতেও অনেক সাপ পাওয়া গেছে। খিলগাঁওয়ের কয়েকটি বাসা থেকে বাচ্চাসহ ৩৮টি পদ্মগোখরা সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। এক বাসা থেকে দুটি বড় সাপ ও সাতটা বাচ্চা এবং ১৮টি পদ্মগোখরার ডিম উদ্ধার করা হয়েছে। এক বাসায় ১৮টি পদ্মগোখরার বাচ্চা পাওয়া গেছে। গত চার মাসে উদ্ধার করা ৩৫১টি সাপের মধ্যে মাত্র তিনটি ছিল নির্বিষ সাপ এবং বাকিগুলো বিষধর। এর মধ্যে রয়েছে পদ্মগোখরা, রাসেলস ভাইপার, খৈয়া গোখরা ও রাজ কেউটে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহসান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, সাপ থাকতে পারে ঢাকা শহরে যদি ঝোপঝাড় থাকে। কিন্তু এত সাপ কী করে হলো এটা চিন্তার বিষয়। এর আগেও ঢাকায় কিছু বিষধর সাপ পাওয়া গেলেও এবারই প্রথম এত বেশিসংখ্যক সাপের খবর পাওয়া যাচ্ছে। পদ্মগোখরা সাপ মূলত নদী, জলাশয়, খাল-বিলে থাকতে পছন্দ করে। পানির নিকটস্থ ঝোপঝাড় ও গর্তেও এই সাপের দেখা মেলে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভেনোম রিসার্চ সেন্টারের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মো. মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, জলাশয় ও খাল-বিল ভরাট করে মানুষ বাসস্থান তৈরি করায় সাপের বাসস্থান সংকট তৈরি হয়েছে। তাই সাপ মানুষের বাসায় ঢুকে পড়ছে। যেসব এলাকায় পাওয়া গেছে তার প্রতিটি জায়গায় জলাশয়, খাল-বিল ভরাট করে মানুষ বাসস্থান গড়ে তুলেছে। সাপ তার নিজের জায়গায়ই আছে কিন্তু আমরা তার জায়গায় চলে গেছি।