জ্ঞান-বিজ্ঞানে নিত্য নতুন কৃতিত্বের সাক্ষর রাখছেন বাংলাদেশের উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির মানুষেরা। এবার 'বায়োচার' উৎপাদনের চুল্লি উদ্ভাবন করলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীম মিয়া। এ উদ্ভাবনের ফলে বাংলাদেশের কৃষি খাতের সামনে উন্মোচিত হয়েছে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। একইসঙ্গে নগরজীবনকে আবর্জনার দুর্গন্ধযুক্ত অভিশাপ থেকে মুক্তির পথও খুলে গেছে।
বায়োচার কী?
'বায়োচার' এক ধরনের চার কোনাকার কয়লা যা সীমিত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে তাপের সাহায্যে জৈব পদার্থ থেকে তৈরি করা হয়। কাঠ, কাঠের গুঁড়া, আগাছা বা শহরের আবর্জনা থেকে তৈরি করা যায় বায়োচার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- বায়োচার মাটিতে প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আর শতবর্ষ ধরে এটি মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে নানাভাবে। বায়োচার মাটিতে রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বাড়ায়, গাছের খাদ্য উপাদানগুলোকে ধরে রাখে এবং মাটির অম্লত্ব দূর করে। এছাড়া বায়োচার তৈরির সময় যে তাপ উত্পন্ন হয় তা রান্নার কাজেও ব্যবহার করা যায়।
চুল্লির উদ্ভাবক শামীম মিয়া জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ খুব কম এবং দ্রুত তা কমে যাচ্ছে। বায়োচার প্রয়োগ করলে মাটির জৈব পদার্থের পরিমাণ যেমন বাড়বে, সাথে সাথে মাটির উর্বরা শক্তিও বৃদ্ধি পাবে। যেমনটি দেখা গেছে ব্রাজিলের টেরা প্রেটার মাটিতে। এছাড়া বাংলাদেশে ঢাকাসহ অন্যান্য শহরের আর্বজনা ব্যবহার করে বায়োচার উত্পন্ন করা গেলে একদিকে যেমন দুষণ কমে যাবে, অন্যদিকে সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করা যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা, মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি এবং দূষণ থেকে মুক্তির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি জানান, নেদারল্যান্ডের ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করার সময় এ প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। পরে দেশে এসে এ চুল্লি উদ্ভাবন করেন। ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে গবেষণার পর তিনি এটি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। এই প্রকল্পে পবিপ্রবি গবেষণা খাত থেকে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন এমএস ছাত্র-ছাত্রী উত্পাদিত বায়োচারের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/১২ জানুয়ারি ২০১৫/আহমেদ