উত্তরের নকশালবাড়ি কিংবা দক্ষিণের দলমা, বুনো হাতির তাণ্ডবে তছনছ বিস্তীর্ণ এলাকার শস্য খেত৷ ধ্বংস হওয়ার মুখে ওই সব অঞ্চলের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি৷ এবার বুনো হাতির তাণ্ডব ঠেকাতে পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি হচ্ছে জৈব বেড়া বা বায়ো ফেন্সিং৷
আপাতত নকশালবাড়ির ভারত-নেপাল সীমান্তের গ্রামগুলিতে এই কৌশল কার্যকর করা হচ্ছে৷ ডব্লিউ ডব্লিউ এফ-এর (ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফান্ড ফর নেচার) এই পরিকল্পনায় সাহায্য করছে বনদপ্তর৷ জৈব বেড়া আসলে ঠিক কী? ডব্লিউ ডব্লিউ এফ-এর কর্তারা জানান, লেবু ও কাঁটাওয়ালা বাঁশ হাতি পছন্দ করে না৷ বাঁশ বুনো হাতির প্রিয় খাবার হলেও বিশেষ প্রজাতির এই কাঁটাওয়ালা বাঁশ হাতির পাল এড়িয়ে চলে৷ তাই এগুলো দিয়ে জৈব বেড়া তৈরি করা হবে।
সংস্থার পশ্চিমবঙ্গ শাখার পরামর্শদাতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন বনকর্তা মনোজ নন্দী বলেন, 'কর্নাটক এবং অাসামের কিছু এলাকায় ওই বাঁশ এবং লেবু গাছের বেড়া বুনো হাতির পাল ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে৷ সেটাই আমরা নকশালবাড়িতে পরীক্ষা করে দেখছি৷ সফল হলে রাজ্যের অন্যত্রও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে৷' এই পদ্ধতি সফল হলে কৃষকরাও লাভবান হবেন বলে কর্তাদের ধারণা৷ তাদের যুক্তি, লেবু বিক্রি করে বাড়তি আয় করতে পারবেন কৃষকরা৷ সবচেয়ে বড় কথা, কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকার কৃষকরা নিজেরাই লেবু ও কাঁটাওয়ালা বাঁশ দিয়ে নিজেদের ক্ষেত ঘিরে নিতে পারবেন৷
গত এক দশকে নকশালবাড়ির কলাবাড়ি জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় জনবসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুনো হাতির তাণ্ডবও বেড়েছে৷ সন্ধ্যা নামলেই বুনো হাতির পাল লোকালয়ে ঢুকে ফসল নষ্ট করতে থাকে৷ ইদানিং মেচি নদী পেরিয়ে হাতির পাল ঢুকে পড়ছে নেপালের বামনডাঙি গ্রামে৷ ভোরের দিকে হাতির পাল ফিরে আসছে কলাবাড়িতে৷ হাতির পালের এই দৈনন্দিন অত্যাচারে কৃষকেরা দিশেহারা৷ এলাকায় চাষবাস বন্ধ হওয়ার মুখে৷ হাতি-মানুষে সংঘর্ষের ঘটনাও দিন দিন বাড়ছে৷ নকশালবাড়ির কলাবাড়ি, রকমজোত, তারাবাড়ি লাগোয়া মোট আটটি গ্রাম ও প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লেবু ও কাঁটাওয়ালা বাঁশের বেড়া তৈরির কাজ চলছে৷ লেবু ও ওই বাঁশের চারা সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছে বন দপ্তরের মাইনর ফরেস্ট প্রোডিউস (এমএফপি) উত্পাদক সংস্থা৷
বিডি-প্রতিদিন/১৪ জুন ২০১৫/ এস আহমেদ