বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও হযরত খানহাজান আলী (র.) মাজারসহ বাগেরহাটের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। দেশী-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয় বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ ও খানজাহান আলীর মাজার এলাকায়। ঈদের দিন থেকে এই বিনোদন স্পটে প্রায় লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটে বলে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ ও ষাটগম্বুজে অবস্থিত প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে সুন্দরবন। এসময় হাজার হাজর দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় সামলাতে বনরক্ষীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীরা মাতিয়ে তোলে সুন্দরবন পর্যটন কেন্দ্র করমজলসহ সাগর উপকূল।
বাগেরহাট বেসরকারী বিনোদন কেন্দ্র পৌর পার্ক, সুন্দরবন রির্সোট ও পিকনিক কর্নার, চন্দ্রমহলে এবারে অন্যরকম আনন্দের আমেজ সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বেশি তরুণ ও তরুনীদের ভীড় ছিল লক্ষনীয়। এছাড়া মা-বাবার সাথে আনন্দ উপভোগ করতে আসা সোনামনিদের আনন্দ ছিল সবচেয়ে বেশি।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে দেশী-বিদেশী পর্যটকের প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সুন্দরবনের করমজলসহ কয়েকটি পর্যটন স্পটে ঈদের আগের দিন থেকে ব্যাপক সংখ্যক পর্যটকের আগমণ ঘটে। ঈদের দিন ও পরের দিন এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। মংলায় অবস্থিত পর্যটন করপোরেশনের মোটেলসহ সকল হোটেলে আসন পরিপূর্ন হয়ে যায়। বন বিভাগের নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধসহ পাস পারমিট নিয়ে দর্শনার্থীদের সুন্দরবনে বিচরণ করতে হয়। সুন্দরবনের বাঘ, কুমির, বানর, বিষধর সাপ, হিংস্র প্রাণীর দর্শনলাভের প্রত্যাশায় সুন্দরবনে ভ্রমণে আসেন হাজার হাজার পর্যটক।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো: সহিদুল ইসলাম জানান, এবার ঈদের ছুটিতে সার্বিক পরিবেশ ভালো থাকায় পর্যটকদের আগমণ কিছুটা বেড়েছে। সুন্দরবনের হারবাড়িয়া ও করমজল স্টেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।
ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ ষাটগম্বুজ মসজিদ ও হযরত খানজাহান আলী মাজারে এবারের ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটকের আগমণ ঘটে। এ দুটি স্পটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও বিদেশের বহু সংখ্যক মানুষ ভ্রমণে আসেন। তবে বেশি আনন্দ করছেন পিতা-মাতার সাথে আসা শিশুরা।
কুষ্টিয়া থেকে খানজাহান আলী মাজারে আসা কলেজ ছাত্রী সুমাইয়া বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে এখানে এসে খুব আনন্দ পাচ্ছি, যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সাতক্ষীরা থেকে সপরিবারে আসা আলিমুজ্জামান বলেন, মাজারের দিঘির কুমির দেখতে ও পীর সাহেবের কবর জিয়ারত করতে এখানে ছুটে এসেছি। এবার সপরিবারে বিনোদন স্পটগুলো ঘুরে অন্য রকম আনন্দ পাচ্ছি।
পিতা-মাতার সাথে ঘুরতে আসা শিশু ফাতেমা-তুজ জোহরা ইমা বলেন,‘আব্বুর সাথে পার্কে ঘুরতে এসে হরিন, বানর, কুমির ও ঈগল পাখি দেখেছি। ট্রেনে চড়েছি, ঘোড়া দেখেছি খুব মজা করছি,।
ষাটগম্বুজ মসজিদ ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের জাদুঘরে রাখা বহু বছর আগের পুরাকীর্তির নিদর্শন দেখে অনেকেই অবাক হন। সেখানে বরিশাল থেকে আসা দর্শনার্থী রতন বলেন, ‘চাকুরী করার কারনে ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু দেখতে পারি না। এবার ঈদের ছুটিতে এখানে এসে অনেক মজা করলাম। প্রায় ৬শ' বছর আগে খানজাহানের পুরাকীর্তির নিদর্শন দেখে খুব ভাল লাগল।'
বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাস্টডিয়ান গোলাম ফেরদাউস জানান, বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ইসলাম ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র বিধায় এখানে সারা বছরই অনেক মানুষ পরিদর্শনে আসেন। তবে এবছর ঈদের দেশী-বিদেশী পর্যটকের আগমন আরও বেশী বেড়েছে। ঈদের দিন থেকে হাজার হাজার পর্যটক ষাটগম্বুজ মসজিদ, জাদুঘর ও খানজাহান মাজার পরিদর্শন করছেন।
বিডি-প্রতিদিন/ ২০ জুলাই, ২০১৫/ রশিদা