আপনি কি বেশি কথা বলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলবেন 'না'। কেননা সত্যিকার অর্থেই যারা বেশি কথা বলেন তারা কখনো বুঝতেই পারেন না তারা বেশি কথা বলছেন। কথা বেশি বলা বা অপ্রয়োজনীয় কথা মানুষের মনে বিরক্তিই তৈরি করে। এ ছাড়া বেশি কথা বলা মানুষের জন্য আরেকটি দুঃসংবাদ রয়েছে। আর তা হচ্ছে, যারা কম কথা বলেন তারা অনেক বেশি বুদ্ধিমান। এর অর্থ হচ্ছে যারা বেশি কথা বলেন অথবা কথা দিয়ে মানুষকে বিরক্ত করছেন, তারা নিজেকে কম বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করছেন। কিন্তু ঠিক কী কারণে কম কথা বলা মানুষেরা বেশি বুদ্ধিমান এবার তা জেনে নেওয়া যাক।
১) যারা কম কথা বলেন তারা চিন্তা করেন বেশি। আর অনেক ক্ষেত্রেই কথা কম বলে চুপচাপ থাকার অর্থ হচ্ছে তারা মনে মনে চিন্তা করছেন। একটি আলোচনার মধ্যে সবাই যখন কথা বলেন তখন একজন কম কথা বলা মানুষও কথা বলতে আগ্রহী হন, কিন্তু তার কথা বলা শুরু করা বা কিছু বলার প্রধান অন্তরায় হচ্ছে তিনি সকলের কথা শোনেন এবং চিন্তা করতে বেশি পছন্দ করেন। আর এই চিন্তা করার ক্ষমতাটিই কম কথা বলা মানুষকে বুদ্ধিমান করে তোলে।
২) যারা বেশি চুপচাপ থাকেন এবং কথা কম বলতে পছন্দ করেন তারা লেখেন ও পড়েন বেশি। তারা তাদের এনার্জির সবটুকু কোনো গঠনমুলক কাজে ব্যয় করতে চান। তারা সৃজনশীল কাজ করতেও বেশি পছন্দ করেন। আর এতে তাদের বুদ্ধি ধারালো হতে থাকে। যারা বেশি কথা বলেন তাদের মধ্যেই এই বিষয়টি বেশ কম নজরে পড়ে।
৩) এএআরপি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়, 'কম কথা বলার বিষয়টি মস্তিষ্কের জন্য ভালো। এতে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা সঠিক থাকে এবং কোনো কথা বলার আগে চিন্তা করে নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়'। যারা বেশি চুপচাপ থাকেন তাদের মস্তিষ্ক অনেক দ্রুত কাজ করে এবং তারা নিজেকে শান্ত রেখে অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা করে কোনো একটি ব্যাপারে নিজেদের মত প্রকাশ করে থাকেন। আর চিন্তা করে কথা বলার বিষয়টিই বুদ্ধিমান মানুষের পরিচায়ক।
৪) 'সায়েন্টেফিক আমেরিকা'র একটি ইন্টারভিউয়ে 'কোয়াইট: দ্য পাওয়ার অফ ইন্ট্রোভার্টস' এর লেখক সুসান কেইন বলেন, অন্তর্মুখী বৈশিষ্ট্য এবং লজ্জার কারণে চুপ থাকার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যারা লজ্জা পান তারা নিজের কথার বিপরীতে নেতিবাচক কিছু ব্যাপারে কথা শুনতে লজ্জিতবোধ করেন বলেই চুপ থাকেন। কিন্তু যারা অন্তর্মুখী স্বভাবের তারা অন্যের কথা শুনে তা নিয়ে ভাবতে এবং শিক্ষা গ্রহনেই বেশি ব্যস্ত থাকেন'। চুপচাপ থাকা মানুষ অন্যের কথা শুনে তা থেকে জ্ঞান নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নতুন কিছু শিখতে নিজেকে প্রস্তুত করে নেন। অপরদিকে কথা বেশি বলা মানুষেরা শুধু উলটো উত্তর এবং একগাদা কথা বলার জন্যই মুখিয়ে থাকেন এবং তেমন কিছুই শেখার চেষ্টা করেন না।
৫) বুঝে শুনে ও স্থান, কাল, পাত্র বিবেচনা করে কথা বলাটা জ্ঞানী ও বুদ্ধিমানের পরিচয় প্রকাশ করে। এক্ষেত্রেও যারা অনেক কম কথা বলেন তারা যতোটুকুই কথা বলুক না কেন অনেক ভেবে চিন্তে বলেন। যারা কম কথা বলেন তারা মস্তিষ্কে তাদের কথা সাজিয়ে তারপর তা মুখে প্রকাশ করে থাকেন। অপরদিকে বেশি কথা বলার মানুষেরা অনেক সময় নিজেরাও সঠিক বুঝতে পারেন না তারা কী কথা বলছেন। সুতরাং এখানেই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়।
বিডি-প্রতিদিন/ ২৫ জুলাই, ২০১৫/ রোকেয়া।