কথায় আছে, সমস্যায় না পড়লে সমস্যার মর্ম বোঝা যায় না। ঠিক তেমনই ঘটনা ঘটেছে অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা জেমস হ্যারিসনের জীবনে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ফুসফুসে জটিল অপারেশন করতে হয়েলিল হ্যারিসনের। ওই সময় তাকে সুস্থ করতে প্রয়োজন হয় ১৩ ব্যাগ রক্তের। কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তির রক্তেই প্রাণ বেঁচেছিল তার। সেই থকেই জীবনে রক্তের মূল্য কী তা ভালো করেই বুঝেছিলেন হ্যারিসন। এরপর ছয় দশক প্রতি সপ্তাহেই রক্ত দিয়েছেন ৭৮ বছরের হ্যারিসন। আর তাঁর রক্তেই প্রাণ বেঁচেছে ২ লক্ষেরও বেশি শিশুর।
অস্ট্রেলিয়ার রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিসের তথ্যানুসারে ৬০ বছর ধরে হ্যারিসনের রক্তে প্রাণ বেঁচেছে বহু শিশুর। সংখ্যাটা ২ লক্ষেরও বেশি। হ্যারিসনের রক্ত দিয়ে তৈরি হয় একধরনের ভ্যাকসিন। ওই ভ্যাকসিন ব্যবহার করেই প্রাণ বেঁচেছে গর্ভ মধ্যস্থ শিশুর। অস্ট্রেলিয়ার ১৭% নারী রেসাস রোগে আক্রান্ত হন। ওই রোগে আক্রান্ত মায়েদের গর্ভে যে ভ্রুন বেড়ে ওঠে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই গর্ভের মধ্যেই মারা যায়। আর যে শিশুরা ভূমিষ্ঠ হয় তারা বিকলাঙ্গ হয়। তাদের ব্রেন স্বাভাবিকভাবে কাজ করেনা। যে মায়েদের রেসাস রোগ হয় তাদের রক্ত গর্ভস্থ শিশুর রক্তের কোষগুলোকে মেরে ফেলে। যার জন্য মায়েরা মৃত শিশুর জন্ম দেন। এই রোগের প্রতিকার পেতে এক ধরনের ভ্যাকসিনের খোঁজ করছিলেন চিকিৎসকরা। হ্যারিসনের রক্তেই তৈরি হয় সেই ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিনের নাম আরএইচডি।
সারা পৃথিবীতেই এখন এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। তবে অস্ট্রেলিয়াই প্রথম দেশ, যারা এই ভ্যাকসিনের আবিষ্কার করেছিল। হ্যারিসনকে অস্ট্রেলিয়ার মানুষ 'দ্য ম্যান অফ গোল্ডেন আর্ম' নামেই চেনে। এক হাজার বারের বেশি সময় রক্ত দিয়ে হ্যারিসন 'একজন গর্বিত রক্তদাতা'। ন্যাশনাল হিরোর সম্মানে সম্মানিত হন হ্যারিসন।
বিডি-প্রতিদিন/০২ আগস্ট, ২০১৫/মাহবুব