৭ নভেম্বর, ২০২০ ১৬:৪৯

হাওরাঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া ধামাইল গান রক্ষার চেষ্টা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

হাওরাঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া ধামাইল গান রক্ষার চেষ্টা

ছয় ঋতুর বাংলাদেশে হাওরাঞ্চলের রূপ পুরোটাই ভিন্ন। সারা বছরে হাওরে দুই রকম দৃশ্য চোখে পড়ে। বছরের অর্ধেক সময়ের কিছুটা বেশি কাল ধরে পানিতে তলিয়ে থাকে। বাকিটা সময় শুকনো মওসুমে সবুজের দিগন্তজোড়া মাঠ থাকে। আর এই দুইয়ের মাঝে বসবাস করে হাওরাঞ্চলের মানুষেরা। বিচিত্র জীবনে তারা নানা আচার অনুষ্ঠানে আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকে। সেই আনন্দের একটি উপাদান ছিলো ধামাইল গানের নৃত্য। গ্রামের নারীরা গীত গেয়ে গেয়ে নৃত্য করতেন হাতে তালি বাজিয়ে। একজন গানটি (গীত) ধরতেন। সাথে অন্যরাও গেয়ে ঘুরে ঘুরে বাদ্যের তালে তালে নেচে যেতেন। বিশেষ করে বিয়েতে বড় কনেকে মাঝে বসিয়ে নারীরা এই গীত করতেন। এমন দৃশ্য দেখা যেতো গত ২০ থেকে ১৫ বছর আগেও। আর এটি ছিলো নেত্রকোনার হাওর জনপদ খালিয়াজুরীর একটি অন্যতম সংস্কৃতি। বিলুপ্ত প্রায় এই সংস্কৃতিকে রক্ষায় আবারো চেষ্টা করছেন ওই অঞ্চলের নারীরা।

নেত্রকোনা জেলার তিনটি উপজেলা নিয়ে হাওরাঞ্চল। মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী। আবার এই তিনের মাঝে খালিয়াজুরী উপজেলা একেবারে দ্বীপ বললেই চলে। পুরো উপজেলাটি বর্ষাকালে হাওরের বুকে ভাসতে থাকে। নেত্রকোনার উপজেলা খালিয়াজুরীর দুইদিকে সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের হাওরের সীমানা। যে কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্ভেদ্যতা ভেদ করে এখনো অনেকেই দেখেননি জেলা শহর। এমন একটি উপজেলায় নিজেদের আচার আনুষ্ঠানে নিজেরাই সমৃদ্ধ।

তাই হারিয়ে যাওয়া সেই আচার অনুষ্ঠান ফিরিয়ে আনতে এবার উদ্যোগ নিয়েছে হাওরের তরুণ-তরুণীরা। উপজেলার নগর ইউনিয়নের তাতিয়া গ্রামের একদল তরুণী সম্প্রতি নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন গ্রামে আয়োজন করছেন ধামাইল গানের আসর। ১৮ জন মিলে ‘মহুয়া ধামাইল দল’ নামে দলবদ্ধ হয়ে তারা তাদের আশপাশের গ্রামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাশ্রমে এ আসর বসান- এমনটি জানিয়েছেন দলটির নেত্রী শেফোলি সরকার।

শেফোলি জানান, হাওরাঞ্চলে ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিকভাবে যেমন ভিন্নতা রয়েছে তেমনি রয়েছে আলাদা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বিশেষ করে এ ঐতিহ্যের অন্যতম হলো ধামাইল গানের নৃত্য। এটি ইন্টারনেটের অপব্যবহার আর অপসংস্কৃতির ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই ঐতিহ্যের এ ধামাইল গানকে টিকিয়ে রাখতে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর্থিক সহায়তা পেলে দূর-দুরান্তের গ্রামসমূহেও এ গানের আসর বসানো সম্ভব হতো বলে জানান শেফালি।

সংস্কৃতির উৎকর্ষতার জন্য ধামাইল গানের বিকল্প নেই- এমন মন্তব্য করে খালিয়াজুরী উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান শিক্ষক জহরলাল দেব রায় বলেন, শত বছর পূর্বে ধামাইল গানের আবির্ভাব ঘটে। এ গানের প্রবর্তক লোকসংগীতের পুরোধা সাধক কবি রাধারমন দত্ত। এ গান সৃষ্টি ও সমৃদ্ধিতে অবশ্য আরও অনেকেই অবদান রেখেছেন। ওই গান রচয়িতারা সবাই হাওরাঞ্চলের বাসিন্দা। তারা নিজেদের লোক-কৃষ্টিকে গানের মাধ্যমে সমৃদ্ধ ভাবে তুলে ধরায় এ গান অঞ্চলটিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।

এখন প্রায় দেড়-দুই যুগ ধরে ধামাইল গান বিলুপ্ত হতে চলছে। হাওরাঞ্চলের বিয়ে, পূজা-পার্বনসহ প্রায় সব ধরনের অনুষ্ঠানের নান্দনিকতা বাড়িয়ে দেয়া এ গানের ছন্দ আর সুর টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি নানা পৃষ্ঠপোষকতা।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর