বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে

পদ্মায় দুর্নীতি পায়নি দুদক সবাইকে অব্যাহতি

পদ্মায় দুর্নীতি পায়নি দুদক সবাইকে অব্যাহতি

পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে কোনো ধরনের দুর্নীতি হয়নি বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সে কারণে মামলার সাত আসামির সবাইকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির মতে, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
দুদক চেয়ারম্যান এম বদিউজ্জামান গতকাল সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সালাহউদ্দিন আহমেদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনকে পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ লেনদেন ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠে। ওই প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তাসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করে ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় মামলা দায়ের করে দুদক। এতে প্রধান আসামি করা হয় সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে। তাকে গ্রেফতারের পাশাপাশি সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে জামিনে মুক্তি পান। গত বছর জুনে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বাকি ছয় আসামি হলেন সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদীশাসন) কাজী মো. ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালটেন্ট লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশে কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহ ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস। মামলায় বলা হয়েছিল- আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের তদারকি পরামর্শকের কাজ অন্যতম দরদাতা এসএনসি লাভালিন ইন্টারন্যাশনালকে পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এর মধ্য দিয়ে তারা দণ্ডবিধির ১৬১ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য। এসএনসি লাভালিন ওই কার্যাদেশ পেলে ‘ঘুষ লেনদেন সম্পন্ন হতো’ বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল। এ ঘটনায় অভিযোগ ওঠে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও। তবে মামলা না করা হলেও তাদের তদন্তের আওতায় রাখা হয়। এ দুজনের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে গত বছর দেশের সবচেয়ে বড় এ অবকাঠামো প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল হয়ে যায়।
দুদক গতকালই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অনুমোদন দেয়। এতে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। শীঘ্রই এ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘পদ্মা সেতু দুর্নীতি নিয়ে আমরা দুই দফা অনুসন্ধান করি। প্রথম দফায় ঠিকাদার নিয়োগে, দ্বিতীয় দফায় পরামর্শক নিয়োগে অনুসন্ধান করা হয়। ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অনুসন্ধানটি নথিভুক্ত করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় দফায় বিশ্বব্যাংক দাবি তোলে, পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে অনেক লেখালেখি হয়। পরে আমরা অনুসন্ধান শেষে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মামলা দায়ের করি। তদন্তে আমরা দুর্নীতি বা দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের কোনো সত্যতা পাইনি।’
এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের টিমের সঙ্গে আমাদের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু তারা সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেনি, যার ভিত্তিতে আমরা তদন্ত চালিয়ে যেতে পারি। এ ছাড়াও তদন্ত সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার কোনো তথ্য ছিল না।’ সাবেক সেতু সচিবকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে দুদক যে কাউকে গ্রেফতার করতেই পারে।’
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক অভিযোগ করেছিল, কানাডার এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা রমেশ সাহর ডায়েরিতে ঘুষের তালিকা ছিল। কিন্তু ডায়েরির কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি। কানাডার আদালতে বলা হয়েছে নোটপ্যাডের কথা। নোটপ্যাড আর ডায়েরির মধ্যে পার্থক্য অনেক। কাজেই রমেশের ডায়েরি বলে কিছু নেই।’ সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, দুদক এখন বলছে তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাহলে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তারা কি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হননি? জবাবে কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘আমরা তদন্তের প্রয়োজনে এজাহার করেছি। অধিকতর তদন্তের জন্য এজাহার করা প্রয়োজন ছিল বলে করেছি।’

 

সর্বশেষ খবর