ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে ভারত। শান্তির জন্য এ আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। আমরা সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চাই। ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের সীমান্তে শান্তির পাশাপাশি, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে শান্তির বিষয়েও আমরা সচেতন। দুই দেশই যেন সুফল ভোগ করে সে কথা চিন্তা করেই আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করব।’ গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ভারতের সংবিধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ভারতীয় হাইকমিশন ও বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি। অনুষ্ঠানে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলোর মধ্যে ভারসাম্য আনাই ভারতীয় সংবিধানের বড় চ্যালেঞ্জ। এর মাধ্যমে ভারতের প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়েছে। ফলে ভারতীয় জনগণ তাদের বিচারের অধিকার, শিক্ষার অধিকার ও অন্যান্য সামাজিক অধিকার ভোগ করার সুযোগ পেয়েছে, যার জন্য আমরা গর্ব বোধ করি এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় লিখিত সংবিধান ভারতে থাকাটাও গর্বের বিষয়।’ তিনি বলেন, এই সংবিধানে সরকারের গঠন, কার্যপদ্ধতি, ক্ষমতা ও কর্তব্য নির্ধারণ, মৌলিক অধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি রয়েছে। নাগরিকদের কর্তব্য নির্ধারণের মাধ্যমে দেশের মৌলিক রাজনৈতিক আদর্শের রূপরেখাটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতে রাজ্যসংঘকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র রূপে ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানেও সেখানকার কিছু নীতি-ধারা অনুসরণ করা হয়েছে। কিছুদিন আগে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে অর্থ চোরাচালান রোধ ও কালো টাকার প্রভাব মোকাবিলা করা যাবে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সুবীর কুশারি, আইন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শাহ আলম ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান প্রমুখ।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভারতে সংবিধান অত্যন্ত সুন্দর ও অনুকরণীয় সংবিধান, যেখানে আছে ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধান অনুযায়ী সে দেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়েছে। অথচ আমাদের দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ বলা হলেও রাষ্ট্রধর্ম রাখা হয়েছে ইসলামকে, যা অত্যন্ত লজ্জার।’
অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ভারতের সংবিধান বিশ্বের লিখিত সবচেয়ে বড় সংবিধান। স্বাধীনতার পর এটি অত্যন্ত সুন্দর প্রক্রিয়ায় প্রণয়ন করা হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে সুন্দর সংবিধানে রূপ নিয়েছে। এখনো এটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। ভারতের সংবিধানে সবার জন্য সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। অধ্যাপক ড. শাহ আলম বলেন, ৪৪৮টি ধারায় ভারতীয় সংবিধান প্রণীত, যেখানে প্রতিটি বিষয় ও প্রতিটি ক্ষেত্রের দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে।