বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ঢাকায়

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ঢাকায়

তিন দিনের সফরে ঢাকা এসেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। গতকাল বিকালে তিনি বিশেষ বিমানে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। এ সময় তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বরণ করে নেয় বাংলাদেশ। তাকে অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের নেতা ইয়াসির আরাফাতের উত্তরসূরি মাহমুদ আব্বাস বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প  ক্ষমতা নেওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়ায় সংশয়ের মধ্যেই বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ সফর করছেন তিনি। জর্ডানের পর পাকিস্তান সফর শেষে তিনি ঢাকা এলেন। গতকাল বিকালে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমানকে স্বাগত জানাতে আগেই বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিমান থেকে নামার পরপরই দুটি শিশু ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টকে ফুল তুলে দেয়। ভিভিআইপি টার্মিনালে ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানানো হয় তাকে। তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল গার্ড অব অনার দেয়। গার্ড পরিদর্শন শেষে ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্টকে লাইন অব প্রেজেনটেশনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা ছিলেন। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হিসেবে আছেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. রিয়াদ আল মালকি, প্রধান বিচারপতি মাহমুদ আলহাব্বাশ, রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র নাবিল আবুরুদ্দাইনাহ, কূটনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মাজদি খালদিসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। পরে বিমানবন্দর থেকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টকে মোটর শোভাযাত্রাসহ লা মেরিডিয়ান হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সফরকালে তিনি সেখানেই থাকবেন। এদিকে সন্ধ্যায় হোটেলে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে মুক্তিসংগ্রামে বাংলাদেশ প্রথম থেকেই ফিলিস্তিনি সরকার ও জনগণের পাশে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভায়ও বাংলাদেশ স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। দেশটির মুক্তিসংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত এর আগে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় মাহমুদ আব্বাসের এ সফরকে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটা প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর হলেও গত বছর ফেব্রুয়ারিতে জর্ডান থেকে জাপান যাওয়ার পথে ঢাকায় কয়েক ঘণ্টা যাত্রাবিরতি করেছিলেন মাহমুদ আব্বাস। এবারের সফর উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাকে গতকালই বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। ভিভিআইপি টার্মিনালের দুই পাশে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের দুটি বড় ছবি স্থাপন করে লেখা হয়েছে ‘স্বাগত হে মহামান্য অতিথি’। সফরসূচি অনুসারে আজ দুপুর ২টার কিছু আগে তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেখান থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে যাবেন। পরে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে মাহমুদ আব্বাস আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসবেন। সাড়ে ৪টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর একান্তে কথা বলবেন শেখ হাসিনা ও মাহমুদ আব্বাস। এসব সাক্ষাৎ ও বৈঠকে দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার মতবিনিময় হবে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ কমিশন গঠনসংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সৌজন্য বৈঠকে নিজ নিজ দেশের প্রাধিকারপ্রাপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতবিনিময় করবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা করছে। এ ছাড়া মাহমুদ আব্বাস তার সম্মানে রাষ্ট্রপতি আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নেবেন। লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট শুক্রবার বিকালে ঢাকা ছাড়বেন।

সর্বশেষ খবর