টানা দুই মেয়াদে ৯ বছর দেশ পরিচালনাকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দুর্বলতর অর্থনীতি নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাচ্ছে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ— সিপিডি। সংস্থাটি বলেছে, ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে রক্ষণশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নেওয়া দরকার। এর জন্য রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি প্রয়োজন। কারণ, অর্থনৈতিক সংস্কারের পেছনের দিকে হেঁটেছে সরকার। এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও কম ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বমূলক ভূমিকায় বড় ধরনের ঘাটতি ছিল। গতকাল রাজধানীর তোপখানা রোডের সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি-২০১৭-১৮’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ সব কথা বলেন। এতে বক্তব্য দেন সিপিডি বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য ও অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. তৌফিকুল ইসলাম খান।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, বিদায়ী ২০১৭ সাল এক ধরনের প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। দেশের ভিতর তেমন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের যে পরিমাণ গরিব মানুষকে উপরের দিকে তোলার কথা, সেই পরিমাণ পারছে না। তিনি বলেন, রেমিটেন্স কম আসা গ্রামীণ অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। কারণ, রেমিটেন্সের টাকায় গ্রামের মানুষ অনেক ভোগ অর্থায়ন করে থাকে। খাদ্যপণ্য মূল্য বেড়েছে। সার্বিকভাবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বছরের শেষে এসে দুর্বল হয়ে গেছে। সিপিডির এই বিশেষ ফেলো বলেন, অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়গুলো আদৌ সামনের দিকে এগোয়নি। উপরন্তু এটা পেছনের দিকে হেঁটেছে। এর উদাহরণ হলো— ব্যাংকিং খাত। ২০১৭ সাল ব্যাংক কেলেঙ্কারির বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ব্যক্তির কাছে ঋণের টাকা কেন্দ্রীভূত হয়েছে। ব্যক্তিখাতের ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনাও ঘটছে। এগুলোর ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার ব্যাংকিং কোম্পানি আইনকে সংশোধন করে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ বাড়াল।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার বড় প্রকাশ হলো, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বমূলক ভূমিকায় বড় ধরনের ঘাটতি ছিল। এগুলো হলো, সংস্কারে উদ্যমের অভাব। সংস্কারের পক্ষে উদ্যম ও উদ্যোগ দেখাতে পারেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থনীতির বিভিন্ন ধরনের যে সব প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের এক কাতারে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সমন্বয় ঘটাতেও পারেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। সমন্বয়ের অভাবে বড় উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রেও ঘাটতি দেখা গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও কম ছিল।
তিনি আরও বলেন, আগামী এক বছর যখন দেশের অর্থনীতি নির্বাচনের দিকে যাবে, তখন সরকার দুর্বলতর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবে। এই পরিস্থিতিতে আমরা মনে করছি না— এই এক বছরে সরকার বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে। তার জন্য যে রাজনৈতিক পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়, সেটা এই মুহূর্তে সরকারের হাতে আছে বলে মনে হচ্ছে না।
সিপিডির আরেক বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বছর যেভাবে শুরু হয়েছে, সেখানে আমাদের বেশ কিছু আশঙ্কা আছে। ২০১৭ সালে যে ধরনের স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে সফলতা আশা করেছিলাম, তা হয়নি। নির্বাচন কেন্দ্র করে আমরা যদি শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় না রাখতে পারি, সেটা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রভাবশালীদের যোগসাজশ, সংযোগ ও তাদের উত্সাহে অনিয়ম ও লুটপাট চলছে, তা এক ধরনের আনুকূল্যে চলছে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, খুব অদ্ভুত রকম মূল্যস্ফীতির হিসাব আমরা বাংলাদেশে দেখতে পাচ্ছি। সরকারি তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। ফলে বিভিন্ন খাতে যে মজুরি বোর্ড গঠন করা হচ্ছে, তাতে বাজারমূল্যের সঙ্গে মূল্য সমন্বয় একটা অসংগতি থেকে যেতে পারে।