কঙ্গোতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) রৌশন আরা বেগম নিহত হয়েছেন। রবিবার কঙ্গোর সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দেশটির কিনসা এলাকায় রৌশন আরাকে বহনকারী গাড়িকে একটি লরি ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এ সময় গাড়িতে অবস্থান করা পুলিশ সুপার (এসপি) ফারজানা ইসলাম ও গাড়ি চালকসহ তিনজন নিরাপদে রয়েছেন। বাংলাদেশে পুলিশের ইতিহাসে রৌশন আরা বেগম প্রথম নারী এসপি, প্রথম নারী রেক্টর, প্রথম নারী এনডিসি এবং অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত দ্বিতীয় নারী। সর্বশেষ তিনি পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ পুলিশের নারী কন্টিনজেন্টের (বিএনএফপিইউ) মেডেল প্যারেড এবং ইউনিটের কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য গত ৩ মে দুই সদস্যবিশিষ্ট দলের প্রধান হিসেবে কঙ্গোতে যান রৌশন আরা। তার সফরসঙ্গী ছিলেন হাইওয়ের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম। ৭ মে তাদের দেশে ফেরার কথা ছিল। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও আইজিপি শোক প্রকাশ করেন। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী জানান, মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে কঙ্গো মিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছি। সার্বক্ষণিক মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে রৌশন আরা বেগমের মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন রৌশন আরা বেগম। মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ঢাকায় শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমি, নারায়ণগঞ্জ ও ডিএমপির এসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। ১৯৯৪ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর একই পদে টাঙ্গাইল, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। রৌশন আরা ১৯৯৮ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রথম নারী পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে মুন্সীগঞ্জে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর তিনি অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পান। রৌশন আরা বেগম দ্বিতীয় নারী, যিনি এ পদে আসীন হয়েছেন। এর আগে প্রথম নারী হিসেবে এ পদে ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি ফাতেমা বেগম। রৌশন আরা বেগম দেশের বাইরে যুক্তরাজ্যের পুলিশ স্টাফ কলেজ, ব্রামশিল থেকে স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং কোর্স এবং লিডারশিপ কোর্স ফর ফিমেললিডারস ইন ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। পুলিশ বাহিনীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দুবার আইজিপি ব্যাচপ্রাপ্ত হন এবং বাংলাদেশ সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুলিশ পদক ‘পিপিএম’ লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি মুন্সীগঞ্জের এসপি থাকাকালীন ‘অনন্যা শীর্ষ দশ-১৯৯৮’ পুরস্কার ও ২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশের স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১২ লাভ করেন।
রৌশন আরা রাজধানী ঢাকার মগবাজারের সাবেক টিঅ্যান্ডটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ভিকারুননিসা-নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে বিএসএস (অনার্স), এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি এক কন্যা মোনাহা চৌধুরী, স্বামী শফিকুল ইসলাম চৌধুরীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
রাষ্ট্রপতির শোক : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কঙ্গোতে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক রৌশন আরা বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি রৌশন আরার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রীর শোক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতিরিক্ত আইজিপি রৌশন আরা বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
আইজিপির শোক : আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রৌশন আরা বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এ ছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে।